চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে অভিযান শুরু

-প্রথমদিনে ৩৭০টি পরিবারের অবৈধ বসতি উচ্ছেদ

বর্ষায় পাহাড়ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় চট্টগ্রামে পাহাড় থেকে অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ বসতি অপসারণ শুরু হয়েছে। অভিযানের প্রথম দিনে গতকাল সোমবার (১৪ জুন) বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের আশপাশের পাহাড়ে এ অভিযান চালানো হয়। সোমবার (১৪ জুন) সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চালানো অভিযানে ৩৭০টি পরিবারের বসতি উচ্ছেদ করে সেখানে বসবাসরত পরিবারগুলোকে পাহাড় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় এরই মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ নির্মিত ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া জেলা প্রশাসনের ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৩টি দলে ভাগ হয়ে অভিযান পরিচালনা করেন। এছাড়াও পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক নুরুল্লাহ নূরী উপস্থিত ছিলেন। সহযোগিতায় ছিলেন মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশের ১৫০ সদস্য। প্রতিটি টিমের সঙ্গে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা, র‌্যাব এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও সার্ভেয়াররা অভিযানে অংশ নেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, প্রায় ৩শ’ জনবল ও ৩টি স্কেভাটারের সহায়তায় বায়েজিদ লিংক রোডের মহানগর অংশে ১১০টি, সীতাকুন্ড অংশে ৭০টি এবং হাটহাজারী অংশে ১৯০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, লিং রোডের আশপাশে এবং ছিন্নমূল এলাকায় প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা থেকে ৩৭০টি ঘর আমরা উচ্ছেদ করেছি। অধিকাংশ ঘরই বাঁশের বেড়া ও টিন দিয়ে তৈরি। কয়েকটা ছিল সেমিপাকা। আবার শুধু টিনের ঘরও কিছু ছিল। কয়েকটি বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ৩৭০টি পরিবারের প্রায় দেড় হাজার মানুষকে পাহাড় থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তারা সবাই পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে ছিলেন। ভারি বর্ষণ শুরু হলে যে কোনো ধরনের বিপর্যয় হতে পারত। চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, টানা ছয় ঘণ্টা ধরে চালানো অভিযানে ঘর উচ্ছেদের পাশাপাশি সেখানে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কার্যক্রম একমাস ধরে চলবে।

অভিযানের পর বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের দেড় কিলোমিটার এলাকা অবৈধ বসতিমুক্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রায় ছয় কিলোমিটার বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ ছোট-বড় ১৮টি পাহাড় কাটে। নগরীর উত্তর পাহাড়তলী মৌজা, হাটহাজারীর জালালাবাদ মৌজা এবং সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুর মৌজায় এসব পাহাড় কাটা হয়। ২০২০ সালে পাহাড় কাটার জন্য সিডিএ’কে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদফতর। সিডিএ’র কেটে ফেলা ১৮টি পাহাড়ের মধ্যে অন্তত আটটি পাহাড়ে আছে কয়েকশ অবৈধ বসতি। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিডিএ’র কেটে ফেলা পাহাড়সহ নগরীতে এখন মোট ২৫টি পাহাড়ে এক হাজারের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে। অতিবৃষ্টিতে ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এসব পাহাড়ে। চট্টগ্রামের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবার বসবাস করছে। অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৫৩১টি। রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, গণপূর্ত বিভাগ, বন বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ মালিকানাধীন সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন সাতটি পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩০৪টি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পাহাড়ের গা ঘেঁষে কিংবা পাহাড় কেটে বসতি গড়ে উঠেছে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস। সবমিলিয়ে নগরের ২৫টি পাহাড়ে এক হাজারের বেশি পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। ২০০৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গত ১৩ বছরে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে আড়াই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে পাহাড়ধসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ২০০৭ সালে। ওই বছরের ১১ জুন টানা বর্ষণের ফলে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালে মারা যান ৩০ জন। ২০০৭ সালে পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানির পর পাহাড় ব্যবস্থাপনায় একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ৩৭ দফা সুপারিশ করে কিন্তু এখনো সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। বরং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ নতুন করে ১৬টি পাহাড় কেটে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড নির্মাণ করে। সেখানকার আটটি পাহাড়ে নতুন করে অবৈধ বসতি গড়ে উঠেছে। # ১৪.০৬.২০২১ চট্টগ্রাম #