ফিরে যাচ্ছি -সেলিনা শেলী
অনন্ত ঘরে ফিরে যাচ্ছি- যেখানে শূন্যতা, শূন্য শূন্যতা-
ফিরে যাচ্ছি —
যেখানে মহা ব্রহ্মাণ্ডময় আমিহীন আমি
ধানের পাতার গন্ধে, নৌকার গুলুইয়ে শুয়ে
আকাশের নীল মেঘে চোখের স্মৃতি রেখে
চলে যাচ্ছি।
#
এখানে হাটের উদোমে বিক্রি হয় কবিতা
বেসাতির বাজারে প্রিয়তার কর্পোরেট সূচকে
নিভৃতে হাসে একা কবি
এখানে নাদান সময় গিলে খায়
তকমা আঁটা টেবিল।
অবশেষে ফিরে যাচ্ছি-
হে পণ্য সভ্যতার নগর, রক্ত শূন্যতার হৃদয়
বর্ণান্ধ ধর্ম, আমার সময়ের রেখে যাওয়া
অবশেষ- স্মৃতি- দুঃখ যার নাম
বিভ্রমে বুনে চলা বিবেক
সঙ্গমের বুনে যাওয়া জরায়ুজীবন-
ফিরে যাচ্ছি।
মিথ্যের চোখে ঢাকা রাত, ধর্ষণে কাতরানো
মুখচাপা আর্তনাদ, মানুষের হাতে মানুষের
জবেহ মচ্ছব-
সংহার-সর্বনাশ-সর্বগ্রাসী____
নিজের ছায়ার নিচে নিজেরই রক্তাক্ত লাশ
অনতিক্রম্য দূরত্বের প্রান্তিকতায় মানুষের বাস।
আমাকে হনন করো, হনন করো হে মৃত্যুর দাসানুদাস
#
আমি ফিরে যাচ্ছি-
যে সকাল নেমেছিলো দুয়ারে আগুনমুখো
সে এক কপট বাহানা- প্রাণসংহারী আলো
আমাকে ক্ষমা করো- ভূমিপুত্রগণ
প্রান্তিকের খবর কে নেয়?
কেন্দ্রাক্রান্ত আমি; হায়!
এতকাল নেচে দেখি কেন্দ্র কোথায়?
এত কেন্দ্রচ্যূতি!
#
অতএব ফিরে যাচ্ছি-
ব্যর্থতার সমূহ পাপে- জন্মবীজ ফেলে।
আমি ব্যর্থ। কী করুণ মানুষেরা- ধর্মকাতারে
কী বীভৎস মানুষের বর্ণচিহ্নায়ন!
আমি ফিরে যাচ্ছি—
#
যা কিছু জেনেছি বোধিকাণ্ডে- প্রজ্ঞায়
মার্ক্স, হ্যাগেল অথবা দারিদাবিদ্যায়–
যা কিছু জেনেছি শক্তিঘরে একান্ত তপস্যায়
রবীন্দ্র লালন অযুত মনীষায়
সব কিছু পড়ে থাক শব্দে অক্ষরে।
মানুষেরা মানুষ নয়- এককেতাবি কেবল।
অতএব ফিরে যাচ্ছি—
আমার অবিনাশী আত্মার ক্ষত থেকে
গড়িয়ে পড়া কস
গলিত চোখের ভেতর থেকে
প্রিজমায়িত সূর্যের রঙ
উদ্ভ্রান্ত শরীরের নুন থেকে
ক্ষুব্ধ অভিমান নিয়ে
মগজের ভেতর থেকে অল্প কিছু স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে
আমি ফিরে যাচ্ছি–
হাতে নিয়ে নিজস্ব ভুবনের চাবি;
যে কোনও এককধর্মের নয়-
গোত্র ও দেশপাঠ তাকে সীমায়িত করে না।
নিজেই একা, একাকী স্বধর্মপাঠে
নিজ ইশ্বরে!