মহা প্রতারক মনজিল জেলায় জেলায় ঘুরে প্রতারণা করতেন
শিক্ষার দৌড় ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু তাতেই তিনি বনে গেছেন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক! নিজের মুদির দোকানের জন্য কোন ব্যাংক ম্যানেজারের কাছ থেকে ঋণ নিতে না পারলেও একাধিক ব্যাংক ম্যানেজারকে আশা দিয়েছেন কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের! আর এই কোটি টাকার ঋণের জন্য জামানত নিয়েছেন লাখ টাকা করে! নিয়েই হাওয়া! এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও সিলেটে একই কায়দায় হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা! তার প্রতারণায় নিঃস্ব হয়েছেন শতাধিক মানুষ। মহা এই প্রতারকের নাম মো. মনজিল (৩৮)। শনিবার (১৯ জুন) গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে তার আরও চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রোববার তাকে আদালতে প্রেরণের মাধ্যমে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মনজিল এক মহা প্রতারক। তিনি মানুষকে কোটি ঋণ প্রদানের লোভ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া অনলাইনে চাকরি দেওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়েও জামানতের নাম করে টাকা হাতিয়ে দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে এ প্রতারণা করেন। চট্টগ্রামের পর সিলেটেও একই কায়দায় প্রতারণা করেছেন। তার চক্রের সবাই গ্রেপ্তার হলেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। শনিবার রাতে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি জানান, মনজিল মূলত মুদি ব্যবসায়ী। লেখাপড়া করে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। মুদির দোকানের ব্যবসায় মন্দা গেলে ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি নেন। সেই চাকরির সুবাদেই পরিচয় হয় এক আদম ব্যবসায়ীর সাথে। সেই আদম ব্যবসায়ীর বুদ্ধিতেই খুলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। নাম দেন বি.এস.এম. বিজনেস এন্ড ইন্টারন্যাশনাল লজিষ্টিকস কোম্পানি লিমিটেড। তিনিই হন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের আগ্রাবাদ সেন্টার ৪র্থ তলায় করেন আলিশান অফিস। কারও যেন কোন সন্দেহ না হয় সেজন্য বোর্ড মেম্বার ও অর্গানোগ্রামও নির্ধারণ করেন। সেই অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম (৩৬), জিএম মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী (২৮), এজিএম নাহিদুল ইসলাম (৩০) ও অডিট অফিসার হিসেবে সাগরিকা (২৮)কে দেখানো হয়। মাঠ পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় এরিয়া ম্যানেজার। তারাই মূলত বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ঋণের নামে জামানত সংগ্রহ করে। পাঁচ লাখের জন্য ১০ হাজার টাকা, দশ লাখের জন্য ১৫ হাজার, এগার লাখ থেকে ত্রিশ লাখের জন্য ২৩ হাজার, একত্রিশ লাখ থেকে পঞ্চাশ লাখের জন্য ৪৩ হাজার এবং একান্ন লাখ থেকে এক কোটির জন্য ৮২ হাজার টাকা করে সার্ভিস চার্জ নেওয়া হয়। সাথে আছে প্রোফাইল খরচ। এভাবে তারা শতাধিক মানুষের কাছ থেকে মোট ৩২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ২০ লাখ ৫১ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়! ওসি বলেন, চট্টগ্রামে তারা ২০২০ সালে ১ জুন থেকে ওই বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত কার্যক্রম চালায়। এরপর পালিয়ে সিলেট চলে যায়। সেখানেও এই কায়দায় প্রতারণা চলতে থাকে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তাদের প্রতারণা ধরা পড়ে যায়। মামলাও হয় সবার বিরুদ্ধে। এই মামলায় চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হলেও অধরা থেকে যান মনজিল। অবশেষে শনিবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার তাকে আদালতে প্রেরণের মাধ্যমে ৩ দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। # ২০.০৬.২০২১ চট্টগ্রাম #