ওসি প্রদীপের জব্দ করা সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগের আদেশ
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার আসামি টেকনাফের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রীর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জব্দ করা সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক’র আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৯ জুন) চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ ও মহানগর দায়রা জজ শেখ আসফাকুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। প্রদীপ কুমার দাশের অবৈধ সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে দেন আদালত। দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় এজাহারভুক্ত এসব সম্পত্তি জব্দ করতে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর আদেশ দিয়েছিল একই আদালত। দুদক জানায়, সোমবার (২৮ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন রিসিভার নিয়োগের জন্য আদালতে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, প্রদীপ ও তার স্ত্রীর নামে থাকা সম্পত্তি ইতিপূর্বে আদালত ক্রোক করেছেন। নগরের পাথরঘাটায় থাকা ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরের বাড়ি, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাটে রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে রিসিভার নিয়োগ করা হোক। দুদক’র আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, ওসি প্রদীপের মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। দুদকের মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে। ওই মামলায় আগে সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ওসি প্রদীপের ক্রোকের সম্পত্তি এতদিন মাললার তদন্ত কর্মকর্তাদের তত্বাবধানে ছিল। সেসব সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। এরমধ্যে নগরীর পাঁচলাইশের জমি, পাথরঘাটার একটি বাড়ি ও দুটি গাড়ি, যা আগের আদেশের পরই ক্রোক করা হয়েছে। সেসবের রিসিভার হিসেবে থাকবেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। আর কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাটের রিসিভার থাকবেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। প্রসঙ্গত গত বছরের ২৩ অগাস্ট দুদক’র সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২’র সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে ওসি প্রদীপের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ওসি প্রদীপের সঙ্গে তার স্ত্রী চুমকি কারণকেও আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর ৪(২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়। মামলার এজাহারে, নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ি প্রদীপ কুমার দাশ ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করার জন্য শ্বশুরের নামে নির্মাণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে ওই বাড়িটি প্রদীপ দাশের শ্বশুর তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে দান করেন। দানপত্র দলিল হলেও বাড়িটি প্রদীপ দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণ কর্তৃক অর্জিত বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এই মামলার আরেক আসামি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারণ পলাতক আছেন। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন বাহারছড়া চেকপোস্টে গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনার পর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ৫ অগাস্ট কক্সবাজারের হাকিম আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে এক নম্বর এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দুই নম্বর আসামি করা হয়। ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর প্রদীপকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সিনহা হত্যা মামলাটি তদন্ত করে প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে গত ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় র্যাব। চট্টগ্রামে দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকে ওসি প্রদীপ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। ৭ মাস পর গত ১০ জুন চট্টগ্রাম কারাগার থেকে কক্সবাজার কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। গত ২৭ জুন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। # ২৯.০৬.২০২১ চট্টগ্রাম #