সেজান জুস কারখানায় ৫২ শ্রমিক নিহতের প্রতিক্রিয়ায় -বীর মুক্তিযোদ্ধা জানে আলম -আজকের এ স্বদেশ আমার সে স্বপ্নের দেশ নয়

শোক, ক্ষোভ, সমবেদনা আর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত-না, এসব কিছুই আর জানাব না। প্রশাসনিক-সামাজিক-রাজনৈতিক চরম অব্যবস্থাপনার নির্মম শিকার হয়ে যারা অকালে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে আত্মাহুতি দিল-তাদের স্বজনদের কাছে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি-একাত্তুরের একজন ক্ষুদে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে।
(হাসেম ফুড এ্যাণ্ড বেভারেজ কারখানার অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের স্বজনদের উদ্দেশ্যে এক নিষ্ফল প্রতিক্রিয়া)
প্রিয় স্বজনহারা জনগণ, তোমরা বিশ্বাস করো, যে দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে নিতান্ত কিশোর বয়েসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম-আজকের এ স্বদেশ আমার সে স্বপ্নের দেশ নয়। অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক সাম্য ও ন্যায় বিচার ভিত্তিক একটি সেকুল্যার সমাজের স্বপ্ন নিয়ে আমরা সেদিন বনবাদাড়ে শত্রু হননের জিঘাংসা নিয়ে ঘুরে ফিরেছিলাম।
লক্ষ লক্ষ শহীদ ও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে দেশকে আমরা শত্রুমুক্ত করেছি। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সে স্বাধীনতা আজ যে নির্লজ্জ লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, ভূমি-দস্যু, চাঁদাবাজ, বাজিকর, ও রাজনৈতিক মাফিয়াদের দখলে চলে গেছে। আমরা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সে স্বপ্নের দেশ গড়ে তুলতে। তাই আমি ও আমরা-যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম-তারা রক্ষা করতে পারিনি আমাদের স্বাধীন স্বদেশকে। অকপটে স্বীকার করছি এ আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের সংবিধানে উল্লেখিত সুবচন-জনগণ ক্ষমতার মালিক-তা আজ চরম মিথ্যা বাক্যে পর্যবসিত হয়েছে। জনগণ আজ নিতান্ত প্রজারও অধম-খাদেম। তাই আজ স্বাধীন দেশ দাঁড়িয়ে আছে এক চরম বৈষম্যমূলক সমাজে-যেখানে মানুষ-বিশেষভাবে গরীব মানুষের জীবনের মূল্য নেই কানাকড়ি। তারা মরছে করোনায়, তারা মরছে সড়কে পিষ্ঠ হয়ে, তারা মরছে অনাহারে-অর্ধাহারে, তারা মরছে নিরাপত্তা-হেফাজতে, তারা খুন ও গুম হচ্ছে নিরন্তর, তারা জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মরছে কারখানা নামক বিভিন্ন শ্রম শিবিরে-ফি বছর-একটি স্বাধীন দেশে ! তাই তাদের জন্য আর কোন শোক-ক্ষোভ-সমবেদনা কিংবা তাদের তথাকথিত বিদেহী আত্মার মাগফেরাত নয়-তাদের স্বজনহারা বেদনাতুর পরমাত্মীয়দের কাছে ক্ষমা, শুধু নি:শর্ত ক্ষমা চাই। তোমরা আমাদের ক্ষমা করো-হে শোকাহত স্বজনহার প্রিয় জনগণ।