চট্টগ্রামে অতিভারী বর্ষণ, জলাবদ্ধতা শহরে হাসপাতালের নিচতলা ডুবে গেছে
জোয়ার-বৃষ্টির পানিতে চট্টগ্রামে টানা ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নগরের নিম্নাঞ্চল। নগরের বেশ কিছু এলাকার সড়ক ডুবে গেছে। নিচতলার বাসা-বাড়ি, দোকানপাটে ঢুকেছে পানি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। এছাড়া চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, রাউজানসহ বিভিন্ন উপজেলায়ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। নগরের চান্দগাও আবাসিক, সিডিএ, কর্ণফুলী, হালিশহর, আগ্রাবাদ, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, শান্তিবাগ, হালিশহর, চকবাজার, বাকলিয়াসহ বেশ কিছু এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর পানি দেখা গেছে। টিকাদান কেন্দ্র, ব্যাংক, হাসপাতাল, অফিসমুখী মানুষকে হাঁটুপানি মাড়িয়ে চলাচল কিংবা রিকশায় গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে। এতে এসব এলাকায় জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এদিকে টানা বৃষ্টিতে নগরের খুলশী থানার গরীব উল্লাহ শাহ হাউজিং এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। তবে পাহাড়ের মাটি সড়কে চলে আসায় তা উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম কাজ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘ওহাবিয়া’ পাহাড়ে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে আবারও ডুবেছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল। গতকাল বৃহস্পতিবার বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে হাসপাতালের নিচতলা ডুবে যায়। হাসপাতালের আশেপাশের এলাকাও জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টি ছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারের পানিতে হাসপাতালের নিচতলা হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। এ নিয়ে নানা আলোচনা হলেও এই দুর্ভোগ থেকে পরিত্রান পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবদ্ধতা নিরসণে গৃহিত মেগাপ্রকল্পের শতভাগ বাস্তবায়ন হলে এই ভোগান্তি থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। হাসপাতালের অনুসন্ধান বিভাগের গিয়াস উদ্দিন বলেন, দুপুরের পর থেকে হাসপাতালের নিচতলায় পানি জমতে শুরু করে। সন্ধ্যা গড়াতেই নিচতলা ডুবে যায়। এতে নিচতলায় থাকা জরুরি বিভাগ তৃতীয় তলায় এবং সাধারণ শিশু ওয়ার্ড থেকে কিছু রোগীকে চতুর্থ তলায় জেনারেল ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে।’ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক নুরুল হক বলেন, জোয়ার ও বৃষ্টির কারণে হাসপাতালের নিচে জলাবদ্ধতার বিষয়টি দীর্ঘদিনের পুরানো। শনিবার ও রোববারও বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে হাসপাতালের নিচতলায় কিছু পানি জমা হয়। তবে এতে স্বাস্থ্য সেবার কোনো সমস্যা হয়নি। তাছাড়া জলাবদ্ধতা পুরো চট্টগ্রামের সমস্যা, শুধু মা ও শিশু হাসপাতালের নয়। জলাবদ্ধতা নিরসণে বাস্তবায়নাধীন মেগাপ্রকল্পের কাজ শেষ হলে আশা করি এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে। এই প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরাও একই কথা বলেছেন। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আমরা সাধারণত ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে ভারী বর্ষণ বলি, ৮০ বেশি হলে অতিভারী। সেই হিসেবে চট্টগ্রামে অতিভারী বর্ষণ হচ্ছে এখন। আগামী শুক্রবারও অতিভারী বৃষ্টিপাত থাকতে পারে। অতিভারী বর্ষণের কারণে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি উচ্চাতার হওয়ায় শহরে পানি আসছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত এবং নদী বন্দরকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতিভারী (৮৯ মিমির বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের আশঙ্কা রয়েছে।
# ২৯.০৭.২০২১ চট্টগ্রাম #