অভিবাসী শ্রমিক: স্বল্প সুদের ঋণের খবর কেন জানেন না দেশে ফিরতে বাধ্য হওয়া প্রবাসীরা?

বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আজ রবিবার দেশটির কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে বিদেশ ফেরত প্রবাসী শ্রমিকরা স্বল্প-সুদে এবং সহজ শর্তে পুনর্বাসন এবং অভিবাসন ঋণ নিতে পারবে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে যখন প্রায় ৪ লক্ষের মত প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফেরত আসে তখন সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফেরত আসা শ্রমিকদের নামের তালিকা তৈরি করা থেকে শুরু করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে কিভাবে তারা ঋণ পেতে পারে সেটাও জানিয়েছিল। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে অনেক ফেরত আসা শ্রমিক এখনো জানেন না এসব বিষয়।
তথ্যের অভাব, জটিল প্রক্রিয়া
লক্ষ্মীপুরের জাহাঙ্গীর আলম। ১৬মাস আগে মহামারির কারণে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। বিবিসিকে তিনি বলেন, কীভাবে, কোথায় ঋণ নিতে হবে সেটা তিনি জানেন না। “আমাদের গ্রামে অনেকে আছে যারা ফেরত এসেছে। কিন্তু এই খবরটা জানে না। যেমন আমিও জানি না। জানলে ঋণ নিয়ে একটা কিছু করে পরিবার চালাতে পারতাম”।

মি. আলম এখন চট্টগ্রামে একটা দোকানে কাজ করেন। তিনি বলেন, “বিদেশ থেকে যা শিখেছি তার উপর একটা ট্রেনিং থাকলে বা টাকা পাইলে এতদিনে ভালোভাবে দাঁড়িয়ে যেতাম”। দিনাজপুরের সুফিয়া খাতুন ওমান থেকে দেশে এসেছেন গতবছরের নভেম্বর মাসে। দুই বছরের বেশি সময় সেখানে ছিলেন। কিন্তু মহামারির কারণে তিনি কাজ হারান এবং দেশে চলে আসতে বাধ্য হন। তিনি বলছিলেন এখন তিনি একটা মুরগীর খামার করতে চান কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন বা অর্থ কোথায় পাবেন কিছুই জানেন না। “ঋণ নেয়ার জন্য কি করতে হবে আমি জানি না। এখানে আমার আশে পাশে যারা আছে তাদের কাছ থেকেও কিছু শুনিনি। এদিকে আমি ঋণ করে গিয়েছি, সেই ঋণের টাকাই পরিশোধ করতে পারিনি।এখন যে কি করবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না” বলেন তিনি।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন টাঙ্গাইলের কটিয়াদির শিরিন আক্তার। চার বছর গৃহকর্মীর কাজ করেছেন তিনি সৌদি আরবে। দেশে ফেরার পর এখন তার হাতে কোন টাকাপয়সা নেই ।
তিনি বলেন, “শুনেছি ঋণের এর কথা। কিন্তু যেসব কাগজপত্র লাগবে সেসব জোগাড় করা আমার জন্য কঠিন। যদি এই কাজটা সহজ করতো তাহলে আমরা বুঝতে পারতাম। এখন অনেক কিছুই বুঝতে পারছি না”।

কারা ঋণ নিয়েছেন
বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এর হিসেব অনুযায়ী ২০২০ সালের এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেরত এসেছে ৪ লক্ষ ৮ হাজার ৪শ আট জন।
এর মধ্যে ২৮টি নির্দিষ্ট দেশ থেকে এসেছে ৪ লক্ষ ৮ হাজার ২শ ৬২টি জন।
বাকি ১৪৬জন এসেছে অন্যান্য দেশ থেকে। বাংলাদেশ সরকার এই ফেরত আসা প্রবাসীদের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
সবচেয়ে বড় উদ্যোগটি ছিল ৭০০ কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা। প্রথমে ২০০ কোটি এবং পরে ৫০০ কোটি টাকা সরকার- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীদের সহজ শর্তে ঋণ ঘোষণা করে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার মানুষকে ঋণ দেয়া হয়েছে।
মি. হক বলেন, “ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে যে দুইশো কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছিল সেখান থেকে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে, আর সরকারি তহবিল থেকে ৫০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল সেখান থেকে ৩৭০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে”।
সারাদেশে প্রবাসী কল্যান ব্যাংকের ৮৯টা শাখা রয়েছে উল্লেখ করে মি. হক বলেন, মানুষ জানে না এই বিষয়ে তিনি একমত নন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এর অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল ইসলাম বলেন, শুধু পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দিয়ে এসব প্রবাসী শ্রমিকদের পর্যন্ত খবর পৌঁছানো যাবে না।
“যখন বিমানবন্দরে তারা অবতরণ করছেন, সেখান থেকে যদি তাদেরকে এই সেবার বিষয়ে জানানো হত তাহলে সবচেয়ে ভালো হত। একই সঙ্গে বিমানবন্দরে তাদের তালিকা তৈরি করে ফেলতে পারলে পরবর্তীতে তাদের সাথে যোগাযোগ করে সেবাটা তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়, তখন সে ঠিক করবে সেবাটা সে নেবে নাকি নেবে না। এখনো পর্যন্ত অনেক মানুষ এই সেবাটার কথা জানে না”।
“এখানে সেবাপ্রার্থী এবং দাতা উভয়পক্ষের সমন্বয়হীনতা রয়েছে” বলেন মি. ইসলাম।
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর প্রবাসী শ্রমিক যারা ফেরত এসেছিল তাদের একটা তালিকা করার কয়েক দফায় চেষ্টা করেছিল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে এখনো পর্যন্ত কারো কাছে সামগ্রিক কোন তালিকা নেই।