চলমান সংবাদ

ওয়ার জোন ঘোষণার পূর্বে ইউক্রেইন যায় ‘বাংলার সমৃদ্ধি’- বিএসসি

ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়া ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে মিসাইল হামলা পরবর্তী পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত জানিয়েছে জাহাজটির পরিচালনাকারী বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন-বিএসসি। সোমবার (৭ মার্চ) রাত ৮টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএসসি দাবি করেছে, ওয়ার জোন ঘোষণার পূর্বেই বাংলার সমৃদ্ধি ইউক্রেইন গিয়েছিল। পাশাপাশি কোন প্রেক্ষাপটে বাংলার সমৃদ্ধি সেখানে গিয়েছিল এর বিস্তারিত ব্যখ্যা দেয়া হয়। বিএসসি’ উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তারেক-উল-ইসলাম সাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আন্তজার্তিক শিপিং আইন ও বিধি-বিধান নিয়মানুযায়ী ডেনমার্ক ভিত্তিক চার্টারার ডেলটা কর্পোরেশন ও বিএসসি’র মধ্যে ৩ মাসের জন্য ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি চুক্তিপত্র (চার্টার পার্টি) সম্পাদিত হয়। সে অনুযায়ী গত ২৬ জানুয়ারি মুম্বাই বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই নিয়ে তুরস্কের ইরেগলিতে পণ্য খালাস সম্পন্ন করে। ওই চার্টার পার্টি সম্পাদনকালে কোনরুপ যুদ্ধ ঝুঁকি ঘোষনা না থাকায় ইউক্রেইনকে ট্রেডিং এরিয়ার বাহিরে রাখা হয়নি। তাই সেখান থেকে পূর্ব নির্ধারিত ভয়েজ অর্ডার অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরের উদ্দেশে জাহাজটি রওনা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরের আউটার অ্যাংকরেজে পৌঁছায়। অলভিয়া বন্দর থেকে সিরামিক ক্লে নিয়ে ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল বাংলার সমৃদ্ধির। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হলে অনতিবিলম্বে লোডিং বাতিল করে জাহাজটিকে অলভিয়া বন্দর ছেড়ে আসার জন্য মাস্টারকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু বন্দর কর্তৃক পাইলট সরবরাহ না করা, পোর্ট অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ হওয়া এবং বন্দর চ্যানেলে মাইন পোতার ফলে ওলভিয়া বন্দরে আটকে পড়ে জাহাজটি। এরপর যুদ্ধ চলার মধ্যে গত ২ মার্চ বুধবার একটি মিসাইল আঘাত হয় বাংলার সমৃদ্ধির উপর, তাতে আমাদের একজন সহকর্মী থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা যান। বিএসসি’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘লন্ডন জয়েন্ট ওয়ার কমিটি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সি অব আজব এবং ব্ল্যাক সি এরিয়াকে যুদ্ধ ঝুঁঁকি এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। যা ২৩ ফেব্রুয়ারি হতে কার্যকর হবে মর্মে বীমা সংস্থা নিশ্চিত করেন। কিন্তু জাহাজটি পণ্য খালাসের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের ইরেগলি (ব্ল্যাক সি এরিয়া) বন্দরে পৌঁছে অর্থাৎ ওয়ার জোন এরিয়া ঘোষণা করার পূর্বেই জাহাজটি সেখানে পণ্য খালাসের জন্য গমন করে। যুদ্ধ ঝুঁঁকি এলাকা হতে পরবর্তী বন্দরের জন্য পণ্য বোঝাইকরণ অর্থাৎ ইউক্রেন-ইতালী ভয়েজের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা ((UN, NATO,IMO ইত্যাদি) এবং ফ্ল্যাগ স্টেট কর্তৃক কোন নিষেধাজ্ঞা ছিলনা। এছাড়া, উক্ত ভয়েজের জন্য বিধি মোতাবেক ইন্স্যুরেন্স কভারেজ প্রাপ্তি এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন কর্তৃক কোনরূপ বাধা/আপত্তি উত্থাপিত না হওয়ার ফলে চার্টার পার্টি এগ্রিমেন্ট এর যুদ্ধ ঝুঁকি সংক্রান্ত ধারার বিধান মোতাবেক ভয়েজ অর্ডার বাতিল করার কোনরূপ যুক্তিসঙ্গত কারণ (reasonable judgement) তৈরি হয়নি। এর প্রেক্ষিতে চার্টারার প্রদত্ত পূর্বনির্ধারিত ভয়েজ আদেশ বাতিলপূর্বক যুদ্ধ ঝুঁকি এলাকা হতে লোডিং ব্যতিরেকে জাহাজকে ফেরত আসার নির্দেশনা প্রদান করার কোন আইনগত সুযোগ বা এখতিয়ার বিএসসি’র ছিলনা বলে দাবি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “যুদ্ধ ঝুঁকি এলাকায় কার্গো অপারেশন চলমান ছিল বিধায় সংশ্লিষ্ট পোর্ট অথরিটি বিএসসি’র জাহাজসহ (বাংলার সমৃদ্ধি) মোট ২১টি জাহাজ একত্রে কনভয় আকারে ইনার অ্যাংকরেজে প্রবেশ করিয়েছে। ইনার এ্যাংকরেজে জাহাজ প্রবেশ করানোর পরপরই যুদ্ধ শুরু হওয়া এবং বিএসসি’র জাহাজ মিসাইল হামলার শিকার হওয়া সংক্রান্ত ঘটনাটি খুবই অনাকাঙ্খিত এবং বিএসসি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রন বহির্ভুত।” বিএসসি জানিয়েছে, ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে থাকা অবস্থায় মিসাইলের আঘাতে জাহাজের মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (নেভিগেশন ব্রিজ) পুরোপুরি বিধ্বস্ত এবং প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। মিসাইল হামলায় ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মৃত্যুতে বিএসসি পরিবার খুবই শোকাহত জানিয়ে তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই জাহাজে অবস্থানরত নাবিকদের জীবন রক্ষার্থে বিএসসি, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতের সময়োচিত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে অর্থাৎ গত ৩ মার্চ জাহাজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ২৮ জন নাবিককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া মিসাইল হামলায় নিহত জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহটি জাহাজ থেকে স্থানান্তর করে পোল্যান্ডের বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতের সহায়তায় ইউক্রেনে মর্গে নিরাপদে রাখা হয়েছে। বিএসসি’র কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দায়িত্বে গাফিলতি/অদক্ষতা ছিল- এই সংক্রান্ত প্রচারিত সংবাদের বিষয়েও বিএসসি মতামত জানিয়েছে। এতে বলা হয়, ইউক্রেনে এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে মিসাইল হামলার শিকার হওয়া সংক্রান্ত ঘটনাকে কতিপয় স্বার্থান্বেসী মহল ভিন্নভাবে প্রবাহিত করার অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং বিএসসি’র উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করছে। বিএসসি’র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এধরনের বিরুপ মন্তব্য/ সংবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অগ্রহণযোগ্য বলে বিএসসি মনে করে। # ০৭.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #

Pritom

Pritom Das
অমর একুশে বইমেলা বইমেলা পরিষদের সভা বঙ্গবন্ধুর ভাষণে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিকটি সমান্তরালভাবে চোখে পড়ে : অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ ও নাগরিক সমাজের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বই মেলায় ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলছেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বাঙ্গালির জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল এক দক্ষ কৌশলীর সুনিপুণ বক্তব্য। বঙ্গবন্ধুর ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক। তিনি জনগণ ও শাসকশ্রেণির নাড়ি বুঝতেন। জনগণের সাথে তার যোগাযোগের ক্ষমতা ছিল অনবদ্য। সহজ-সাবলীলভাবে তার কথাগুলো জনগণকে বুঝিয়ে দিতে পারতেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষনে ছিল প্রথমদিকে ইতিহাস, মাঝের দিকে অত্যাচার ও অন্যায়ের কথা এবং হুশিয়ারির সাথে সাথে আলোচনার আহ্বান আর শেষের দিকে জনগণের প্রতি দিক-নির্দেশনামূলক কথাবার্তা। শেষের কথাটি ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” ভাষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডায়লগ যেটি শোনার জন্যেই শ্রোতারা মুখিয়ে ছিলেন। সবশেষে ‘জয় বাংলা’ বলে ভাষণটি শেষ করেছেন বঙ্গবন্ধু, যে স্লোগানটি পরবর্তীতে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের রণধ্বনিতে পরিণত হয়েছিল। আমাদের আনন্দের বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ‘জয় বাংলা ‘ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করেছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। প্রধান আলোচক বঙ্গবন্ধু চেয়ার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাসবিদ ও গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। আলোচক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা.মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ’র উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো.জসিম উদ্দীন, সচিব খালেদ মাহমুদ, সাংবাদিক ওমর কায়সার। এসময় উপস্থিত ছিলেন চসিক সমাজ কল্যাণ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, নূর মোস্তফা টিনু, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম। প্রধান আলোচক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের সূচারুভাবে ব্যবচ্ছেদ করলে এর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিকটি সমান্তরালভাবে চোখে পড়ে। শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু সে ভাষণটি দেননি। বাঙালি সেদিন তার মাধ্যমে তাকে কেন্দ্র করে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিল। তাই, তার প্রতিটি পদক্ষেপ ও বাণী ছিল বাঙালির আশা-আকাঙ্খার নিয়ন্ত্রক। ভাষণে মূলত চারটি দাবি তোলা হয় মার্শাল ল প্রত্যাহার, সেনাদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, রাজনৈতিক হত্যাকা-গুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। তিনি বলেন, ‘দাবি পূরণের পরে আমরা ভেবে দেখবো অ্যাসেম্বলিতে বসব কিনা’। এ ধরনের কথা উচ্চারণ করে একদিকে বঙ্গবন্ধু আলোচনার পথ খোলা রাখলেন এবং ভাষণ পরবর্তী সৃষ্ট স্বায়ত্তশাসন দাবির আন্দোলনের দায়ভার থেকে নিজেকে এবং তার দলকে বাঁচিয়ে নিলেন। বিশ্ব দরবারে বঙ্গবন্ধু একজন উদারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। ভাষণের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটি খুব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে এই উক্তিতে ‘এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-অবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দ্বায়িত্ব আপনাদের ওপর’। সরাসরি না বলেও তিনি বাঙালিদের বুঝিয়ে দিলেন তার মনের কথা। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিরোধের নির্দেশনামা। বাঙালির মনের জোড় গেল বেড়ে। বাঙালি বুঝে গেল কী করতে হবে সামনের দিনগুলোতে। পাকিস্তানিরাও হতভম্ব হয়ে রইল কিছুক্ষণ। বঙ্গবন্ধুর চাতুর্যময় রাজনৈতিক চালের বিপরীতে তারা চালল নগ্ন একটি চাল। নিরীহ এবং নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হল। শুরু হল প্রত্যক্ষ মুক্তিসংগ্রাম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গণাদের কথা শুনে হাসে তারা সবচেয়ে বড় হারামজাদা। বইমেলায় আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি হলো ‘নারী উৎসব’।
# ০৭.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #