চলমান সংবাদ

নিয়োগ পরীক্ষায় প্রবেশপত্র জালিয়াতি ও প্রক্সি টাকার বিনিময়ে ভালো ছাত্রদের ভাড়া করে চক্রটি

লিখিত পরীক্ষায় প্রবেশপত্র জালিয়াতি করে প্রার্থীর হয়ে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে একটি চক্র। সেই চক্রটি ধরতে লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্যদের ডাকা হয় মৌখিক পরীক্ষার নামে।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো ছাত্রদের টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় এনে লিখিত পরীক্ষায় উৎরে যান কয়েকজন। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে নিয়োগ কর্তারা যখন হাতের লেখা ও মেধা যাচাই শুরু করেন, তখনই ঘটে বিপত্তি। এমন একটি চক্রের ১৫ সদস্যকে আটক করেছে প্রশাসন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের রাজস্ব শাখার নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রক্সি দেওয়ার দায়ে তাদের আটক করা হয়। আটক ১৫ জনের মধ্যে পাঁচজনকে নগদ অর্থদন্ড ও ১০ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ১১ এপ্রিল ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জেলার রাজস্ব প্রশাসনের রাজস্ব শাখাসহ ১৫ উপজেলা ভূমি অফিস এবং ৬টি মহানগর সার্কেল ভূমি অফিসে অফিস সহায়ক পদে জনবল নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পরিচালনায় ওই পরীক্ষায় পাশ করেন ২৩৭ জন প্রার্থী।

বুধবার (১ জুন) সকালে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম হলে জেলা প্রশাসনের নিয়োগ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার আয়োজন করে। চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলা ও ছয়টি মহানগর সার্কেলের ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে এই নিয়োগের আয়োজন চলছিল। বুধবার তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় লিখিত পরীক্ষা।

বুধবার বিকেল পর্যন্ত নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম হলে এ মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া তাদের শারীরিক দক্ষতাও যাচাই করা হয়। এ সময় তাদের পূর্বের লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের তারতম্য খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া হাতের লেখা অমিলের বিষয়টিও প্রমাণ করে জেলা প্রশাসন। এসময় শৌচাগারে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে যান চক্রের ২১ জন। তবে তাদের মধ্যে ধরা পড়েন ১৫ জন নিয়োগ পরীক্ষার্থী।

জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক সিদ্ধান্ত দেন, মৌখিক পরীক্ষাতেও তাদের লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্রের ভিত্তিতে হাতের লেখা, দক্ষতা ও মেধা যাচাই করতে হবে। মৌখিক পরীক্ষায় আমরা যখন উত্তরপত্রের সঙ্গে হাতের লেখা এবং মেধা যাচাই শুরু করি, দেখা গেল অনেকের লেখা একেবারে মিলছে না। অনেকে লিখিত পরীক্ষায় গণিতের সঠিক উত্তর দিলেও আমাদের সামনে সেটি আর মেলাতে পারছেন না।

অনেকে একটি বাক্যও ইংরেজিতে শুদ্ধভাবে লিখতে পারছেন না। তখন দেখলাম কেউ কেউ ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে যাচ্ছেন। এভাবে ২১ জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ১৫ জনকে আমরা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি।

আটক ১৫ জন হলেন- মো. ইব্রাহীম, নাইমুল ইসলাম, মুরশেদুল আলম, মো. জুনায়েদ, বিপ্লব সুশীল, মনিদীপা চৌধুরী, মোজাম্মেল হোসেন, আলী আজগর, তন্ময় দে, নন্দন দাশ, মান্না দাশ, প্রীতম চৌধুরী, শেখর দাশ, রহিম উদ্দিন ও আসাদুজ্জামান।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান বলেন, ‘আসাদুজ্জামান চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজের এমবিএ শিক্ষার্থী। মনিদীপা চৌধুরীও শিক্ষার্থী। তারা দু’জন নিয়োগ প্রার্থীই নন। তারা অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। আটক বাকি ১৩ জনও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত।

জিজ্ঞাসাবাদে আটক নিয়োগ প্রার্থীরা জানিয়েছেন, টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ভালো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এনে লিখিত পরীক্ষায় বসিয়ে দিয়েছিলেন তারা। প্রবেশপত্র ফটোশপ করে তাদের প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যারা আটক হয়েছেন তাদের আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। তারা জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।

আটক ১৫ জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ মামুন। আসাদুজ্জামানকে ১৫ দিনের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। ১০ জনকে এক সপ্তাহ করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। চার জনকে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

# ০২.০৬.২০২২ চট্টগ্রাম #