চলমান সংবাদ

ডিপোতে থাকা রাসায়নিক থেকেই আগুনের সূত্রপাত দায় এড়াতে পারে না মালিকপক্ষ, ২০ দফা সুপারিশ

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন-বিস্ফোরণের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিপোতে থাকা রাসায়নিক থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এবং আগুন-বিস্ফোরণের ঘটনায় মালিকপক্ষ এবং তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো এর দায় এড়াতে পারে না। এছাড়া প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের কারণ উল্লেখ করে কার কী দায় ছিল, সে আলোকে দেশের অন্যান্য কন্টেইনার ডিপোগুলোকে নিরাপদ করতে ২০ দফা সুপারিশ করেছে কমিটি। বুধবার (৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি। কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান বলেন, ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার কারণ, দায়-দায়িত্ব নিরূপণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কমিটির ওপর। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে আমরা তদন্ত করেছি। কমিটির প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দুর্ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়েছি এবং কারা এর জন্য দায়ী তা নির্ধারণের চেষ্টা করেছি। এটাকেই চূড়ান্ত বলা যাবে না। এ ঘটনায় বৃহত্তর তদন্তও হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীরা বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনার পর সরকারের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ মহল অবগত। আমরা এ প্রতিবেদন মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে পাঠাবো। সেখান থেকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ হবে। তদন্ত কমিটি ডিপোর সিসি ক্যামরার কোনো ব্যাক আপ না পাওয়ায় অনেক কিছুরই উত্তর মিলেনি বলে জানানো হয়। পাঁচজন প্রতক্ষ্যদর্শীসহ মোট ২৪ জনকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কমিটি। সিআইডির ল্যাব, পরিবশে অধিদফতরের ল্যাব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে বিভিন্ন নমূনা পরীক্ষা করে তার ফলাফলের আলোকে কমিটি সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। বিএম ডিপোর ঘটনা থেকে সতর্ক হয়ে অন্যান্য ডিপোর জন্য সুনির্দিষ্ট ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে একই প্ল্যাটফর্মে আনারও সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ কন্টেইনার ডিপোর অনুমোদ, পরিচালনা এবং তদারকিতে ২৫টি সংস্থার ভূমিকা রয়েছে। সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয় ঘটলে ভবিষ্যতে অনাকাঙিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে বলে উল্লেখ করা হয়। ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তারকে সদস্য সচিব করে গঠন করা কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তদন্ত কমিটি এক মাস সময় নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। এসময় কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন খান, চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার ফারুক উল হক, পরিবেশ অধিদফতেরর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মফিদুল আলম, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের মেজর কাওসার, ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক নিউটন দাশ, বিষ্ফোরক অধিদফতেরর তোফাজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত গত ৪ জুন দিবাগত রাতে সীতাকুন্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এরপর সেখানে কয়েক দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ১০ জন ফায়ার ফাইটারসহ এখন পর্যন্ত ৫১ জনের মৃত্যুর খবর প্রশাসন নিশ্চিত করেছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। দুর্ঘটনার পর মোট ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর এবং বিভাগীয় কমিশনারের গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। # ০৬.০৭.২০২২ চট্টগ্রাম #