চলমান সংবাদ

পদ্মা সেতুর আদলে দ্বিতল হবে কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু, চলতি বছরেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আশা

পদ্মা সেতুর আদলে দ্বিতল ডিজাইনে কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত হবে বহুল কাঙ্খিত নতুন কালুরঘাট সেতু। ৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৮০ মিটারের কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতুটি নির্মাণ করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরেই বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের প্রতিক্ষীত কালুরঘাট সড়ক কাম রেল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে পারে। সেতু নির্মাণের প্রাথমিক নকশা তৈরি করেছে কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী, সেতুর ওপরে থাকবে দুই লেইনের সড়ক এবং নিচে থাকবে দুই লেইনের রেললাইন। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর ওপর বিদ্যমান কালুরঘাট সেতু থেকে ৭০ মিটার উজানে অর্থাৎ উত্তরে নতুন সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা যা আগে প্রস্তাবিত সেতুর ব্যয়ের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি। বুধবার (৬ জুন) সকালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দফতর সিআরবিতে কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতুর অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে নতুন সেতুর প্রস্তাবিত নকশা ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেতুর প্রাথমিক সমীক্ষা শেষে সেতু নির্মাণের স্থান, নকশা, ব্যয় ও নির্মাণকাল নিয়ে প্রাথমিক প্রস্তাবনা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে দাতা সংস্থা কোরিয়ান রাষ্ট্রায়ত্ত এক্সিম ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান ইওসিন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন বা দোহা। প্রাথমিক সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সম্মেলন কক্ষে বুধবার সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন ও কালুরঘাট সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত ফোকাল পারসন পূর্ব রেলের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. গোলাম মোস্তফাসহস রেলের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রতিনিধি ছিলেন। সমীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দোহা’র কর্মকর্তারা পাওয়ার পয়েন্টে সেতুর প্রস্তাবিত নকশা উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে কাজ শুরুর সময় থেকে চার বছর। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একনেকে অনুমোদন, দরপত্রসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে তারা সেতুর কাজ শুরু করতে পারবে। সেক্ষেত্রে সেতুটি নির্মাণ শেষ হতে বর্তমান সময় থেকে পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। সভা শেষে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী প্রস্তাবিত নকশায় সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৭৮০ মিটার। এর মধ্যে নদীর বাইরে স্থলপথে থাকবে ৫ দশমিক ৬২ মিটার। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য হবে ১০০ মিটার। মোট পিলার থাকবে ৮টি। সেতুর উচ্চতা ১২ দশমিক ২ মিটার। এর ওপরের ডেকে থাকবে সড়ক এবং নিচের ডেকে রেললাইন। উভয়ই হবে দ্বিমুখী অর্থাৎ দুই লেইনের। তিনি বলেন, ‘সমীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আমাদের জানিয়েছে, আগস্টে তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে চেষ্টা করছি এবছর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার। নির্মাণকাল প্রায় চার বছর আমাদের বলা হয়েছে। ফোকাল পারসন রেলওয়ের কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) সহজ শর্তে পুরো টাকা বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ হিসেবে দিতে সম্মত হয়েছে। নদীপথে সেতুর ওপরের অংশ পার হয়ে স্থলভাগে সড়ক হবে অর্ধবৃত্তাকারে। এর এক প্রান্ত থাকবে চট্টগ্রাম নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথার অদূরে জানে আলী হাট রেলস্টেশন পার হয়ে মূল সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত। আরেক প্রান্ত থাকবে বোয়ালখালী অংশে বিদ্যমান কালুরঘাট সেতুর সংযোগ সড়কের সঙ্গে, তবে বর্তমান সংযোগ থেকে কিছুটা দূরে। ডবল রেললাইনের একাংশ শুরু হবে জানে আলী হাট থেকে, এর অপর অংশ থাকবে বোয়ালখালী উপজেলার গোমদন্ডী রেলস্টেশনে। প্রস্তাবিত নকশায় সেতুর নির্মাণব্যয় আগের চেয়ে পাঁচগুণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগের নকশার সঙ্গে এখনকার নকশা মেলালে হবে না। আগে ছিল এক ডেকে রেল ও সড়ক সেতু। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে পদ্মা সেতুর আদলে দ্বিতল সেতু। নকশা তৈরির ম্যধ দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষীত কালুরঘাট সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়ায় গতি ফিরেছে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য মোছলেন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১০ সালে কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন কালুরঘাটে নতুন একটি সেতু নির্মাণ করে দেবেন, একসঙ্গে গাড়ি ও ট্রেন চলতে পারবে এমন সেতু নির্মাণ করা হবে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেতু নির্মাণের বিষয়টি একনেকের সভায় উঠেও ফেরত এসেছিল। তখন নির্মাণব্যয়ও অনেক কম ছিল। কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। অবশেষে নতুন করে ডিজাইন করার জন্য টেন্ডার হয়। প্রসঙ্গত চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাটে বিদ্যমান সেতুটি প্রায় ১০০ বছরের পুরনো। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনা করার জন্য কর্ণফুলী নদীতে ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৯৩০ সালে ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স নামে একটি সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিজটি নির্মাণ করে। বোয়ালখালী-পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের একাংশের নগরের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম একমুখী এই কালুরঘাট সেতুর একপাশে গাড়ি উঠলে আরেকপাশ বন্ধ থাকে। ফলে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি চলছে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। এছাড়া লক্করঝক্কর সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করে ঝুঁকি নিয়েই। নতুন সেতু নির্মাণের দাবিতে এলাকাবাসী আন্দোলন দীর্ঘদিনের। ২০১৪ সালে আন্দোলন শুরু করে ‘বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ’। জোরালো হলে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের সাবেক সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদল সংসদে জোরালোভাবে দাবি তোলেন। এমনকি সেতু নির্মাণ না করলে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগেরও ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি মারা যান। # ০৬.০৭.২০২২ চট্টগ্রাম #