চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে চা শ্রমিকদের আন্দোলন অব্যাহত, সড়ক অবরোধ
চা শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে চলমান আন্দোলনের কোন সুরহানা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে এমন আশ্বাসে তাদের কাজে ফেরাতে চায় চা শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি পক্ষ। কিন্তু তাদের আশ্বাস গ্রহণ না করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চা শ্রমিকরা। গত কয়েকদিন ধরেই চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
গত কয়েকদিনের আন্দোলনের ফলে ১২০ টাকা থেকে মজুরি বৃদ্ধি করে ১৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয় মালিকপক্ষ। এ দাবি না মেনে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। এদিকে দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা প্রত্যাখ্যান করে নূন্যতম ৩০০ টাকা করার দাবিতে আবারো আন্দোলনে নেমেছে ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা।
ফটিকছড়ির উদালিয়া চা বাগান, খৈয়াছড়া চা বাগান, কর্ণফুলী চা বাগানসহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলন অব্যাহত রেখে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। কর্ণফুলী চা বাগানসহ উপজেলার রামগড় চা বাগানের চা শ্রমিকরা আন্দোলনের এক পর্যায়ে ফেনী-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে আন্দোলন শুরু করে রামগড় চা-শ্রমিকরা বেলা দেড়টা পর্যন্ত বাগানের ১নং গেইট এলাকায় ফেনী-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিতে থাকেন।
সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির রহমান সানি ও ভূজপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হেলাল উদ্দিন ফারুকী, বাগান বাজার ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাহাদাত হোসেন সাজুসহ সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তাগণ আন্দোলন স্থলে ছুটে যান। তারা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করলে তাদের অনুরোধে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করে সড়ক ছেড়ে বাগানে অবস্থান নেন। কেন্দ্রীয় সিন্ধান্তের আলোকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দাবি মানা না হলে ফের সড়ক অবরোধ ও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্তে তারা অটল রয়েছেন বলে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জানানো হয়।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের চট্টগ্রাম ভ্যালির সভাপতি নিরঞ্জন নাথ মন্টু শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহবান জানালে একটি পক্ষ তাকে ‘দালাল দালাল ‘বলে স্লোগান দিতে থাকে।
কর্ণফুলী চা বাগানের শ্রমিক নেতা প্রেম লাল মানব্রাজি বলেন, কর্ণফুলী বাগানের শ্রমিকেরা কাজে না গিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। আমরা আন্দোলন করেছি ৩০০ টাকা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে। আমরা ১২০ টাকায় বা ১৪৫ টাকায় আবার কেন কাজে যোগ দিব। আমরা কাজে যাব না। চা শ্রমিক নেতাদের একটি পক্ষ মালিক পক্ষের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।’
রামগড় চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মদন রাজগড় জানান, চা-বাগান মালিকরা আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। ১২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করে আমাদের দয়া দেখাচ্ছেন তারা। কিন্তু আমরা কারো দয়া চাই না। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি চাই। বর্তমান যুগে কোথাও এই মজুরি নেই।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন চট্টগ্রাম ভ্যালির সভাপতি নিরঞ্জন নাথ মন্টু বলেন, ৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি এটি আমাদের ন্যায্য দাবি। তবে প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি যেটা সিদ্ধান্ত দেন আমরা সেটা মানবো। এর আগে কাজে ফেরার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু একটি পক্ষ তা মানতে নারাজ।
প্রসঙ্গত, গত ২০ আগস্ট শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চা শ্রমিক নেতাদের বৈঠকের পর মজুরি ১২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নতুন মজুরি ঘোষণা করা হলেও বিভিন্ন উপজেলার চা বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলন অব্যাহত রাখে।
# ২৩.০৮.২০২২ চট্টগ্রাম #