চলমান সংবাদ

জনবল সংকটে বেহাল প্রাথমিক শিক্ষা

-মিরসরাইয়ে ৯৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ১৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৮টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এছাড়া ৪ জন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদও শূন্য রয়েছে। ১০৬ জন সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটরের তিনটি পদ ও উচ্চমান সহকারী পদও শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও মিরসরাই পৌরসভার মধ্যে ১৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে নয়টি ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে। ক্লাস্টারগুলো হলো করেরহাট, চিনকির আস্তানা, জোরারগঞ্জ, বামনসুন্দর, ঝুলনপোল, রঘুনাথপুর, মিরসরাই সদর, আবুতোরাব ও সরকারহাট। প্রত্যেক ক্লাস্টারে একজন করে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনের নিয়ম থাকলেও নয়টি ক্লাস্টারের জন্য রয়েছেন ছয়জন। ৪ জন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদ খালি রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক না থাকা বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থেকে একইসঙ্গে দুই দায়িত্ব পালন করছেন। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদেরও।

অন্যদিকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থা পিছিয়ে পড়ছে। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে শিগগিরই এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ করা দরকার বলে মনে করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

উত্তর ধুম দৌলতবিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিরিনা আক্তার জানান, তাদের বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। বিদ্যালয় ও অফিসের কাজ দুটোই করতে হচ্ছে, ফলে বেশি চাপে থাকতে হচ্ছে। তাই দ্রুত একজন প্রধান শিক্ষকের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

শফিউল আলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র দাস জানান, স্কুলটি জাতীয়করণ হওয়ার আগে থেকেই তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানেও  তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধান শিক্ষক না থাকার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অবহিত করেছেন বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, পশ্চিম খৈয়াছরা এন.আই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেগম নুর উন নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়াহেদুন নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শফিউল আলম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে মামলা বিচারাধীন থাকায় নিয়োগ সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারী সজল দাশ বলেন, আমাদের অফিসে একজন উচ্চমান সহকারী, ৩ জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের পদ খালি রয়েছে। এতে করে সব কাজ আমাকে করতে হয়। এখন অফিস সময় সকাল ৮ থেকে ৩টা পর্যন্ত হলেও লোকবল সংকটের কারণে আমাকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। আমিতো মানুষ, আমার পক্ষে এতো বেশি চাপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক জানান, উপজেলায় ৯৮টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষকের ১০৬টি পদও শূন্য রয়েছে। সংকট থাকায় চারজন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নয়টি ক্লাস্টারের দায়িত্ব পালন করছেন। অফিসের অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটরের তিনটি পদ ও উচ্চমান সহকারী পদও খালি থাকার কারণে আমাদের কাজের কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে।

তিনি বলেন, নিয়োগ না থাকা ও পদন্নতি জটিলতার কারণে শূন্য পদগুলো পূরণ হচ্ছে না। তবে সম্প্রতি পদন্নতির জন্য ফাইল চেয়েছে, আমরা ফাইল পাঠালে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকবে না।