চলমান সংবাদ

কেমন হবে পোল্যান্ডের নতুন সরকারের অভিবাসন নীতি?

১৫ অক্টোবর অনুষ্টিত নির্বাচনে জেতার পর পোল্যান্ডের সিভিক কোয়ালিশন দলের নেতা ডোনাল্ড টাস্ক। ছবি: রয়টার্স

গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত পোল্যান্ডের নির্বাচনে জয়ে পেয়েছে দেশটির বিরোধী নেতা ডোনাল্ড টাস্কের নেতৃত্বাধীন বিরোধীরা। জোটটি ইইউপন্থি হওয়ায় সাধুবাদ পেলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন সরকার আগের সরকারের অভিবাসন বিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসবে না।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের সিভিক কোয়ালিশন (কেও) পার্টির নেতৃত্বে উদারপন্থি বিরোধী দল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়ী হওয়ার পর ইইউদেশগুলো থেকে প্রশংসিত হয়েছে।

দেশটির রাজনীতি আবারও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে এবং আগের সরকারের রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী মনোভাব থেকে সরে আসবে বলে মনে করছেন ইইউপন্থি ইউরোপীয় সরকারগুলো।

তবে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বেশ কিছু ভালো পরিবর্তন আশা করা গেলেও নতুন প্রশাসন অগত্যা অভিবাসন নিয়ে ইইউর সাথে সেতুবন্ধনের কাজ করবে না। গত দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা পিআইএস পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার প্রায়শই অভিবাসন নীতি ও আশ্রয় পদ্ধতি নিয়ে ইইউ এর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিল।

সদ্য নির্বাচিত প্রধান বিরোধী দল সব বিরোধীদের একটি ভিন্নধর্মী জোট সরকার গঠনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

অভিবাসন নিয়ে ভবিষ্যৎ নীতি ‘বিভিন্ন স্তরে বিদ্যমান’ বলে ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে মন্তব্য করেন শাসন ক্ষমতা এবং গণতান্ত্রিক পট পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জেরোম হুরতো।

তিনি বলেন, “গত পিআইএস সরকার ভিসা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে বড় ভুল করেছে [ঘুষের বিনিময়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা মঞ্জুরের ঘটনা]। এই ঘটনা বিরোধী সিভিক প্ল্যাটফর্মকে নির্বাচনে জিততে সহায়তা করেছে। ডোনাল্ড টাস্ক দ্রুত এই ঘটনাকে নির্বাচনী প্রচারণায় রাজনৈতিক রূপ দিতে সফল হয়েছিলেন।”

অধ্যাপক জেরোম হুরতো আরও বলেন, “টাকার বিনিময়ে ভিসা দিয়ে কয়েক লাখ লোককে পোল্যান্ডে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার ঘটনা সম্ভবত একবিংশ শতাব্দীতে পোল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা।”

তিনি আরও যোগ করেন, “নির্বাচনী প্রচারের সময় ডোনাল্ড টাস্ক কখনই নিজেকে শাসক দলের অভিবাসন নীতি থেকে আলাদা করেননি। তিনি মূলত পিআইএস-এর অযোগ্যতাকে তুলে ধরেছিলেন। তিনি আগের সরকারকে তাদের অভিবাসন বিরোধী নীতির জন্য দোষারোপ করেননি।”

গত ১৫ অক্টোবরের সংসদীয় নির্বাচনে জয়ী হওয়া ডোনাল্ড টাস্কের দল বর্তমানে তিনটি মূলধারার বিরোধী দল নিয়ে একটি নতুন প্রশাসন গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে।

অধ্যাপক হুরতো বলেন, “নতুন সরকার অভিবাসন নিয়ে কোথায় দাঁড়াবে সে বিষয়ে কোনো সার্বিক ধারণা এখনও পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যত জোটের কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত পোল্যান্ডের তিনটি প্রধান অভিবাসন সমস্যা নিয়ে তাদের কোন প্রস্তাবনা পেশ করেনি। এই তিনটি সমস্যা হলো পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্ত, ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সাহায্য এবং অভিবাসন ও আশ্রয় আইনের সংস্কার নিয়ে ইইউর নতুন প্যাক্ট।”

“নেই কোন সুসঙ্গত অভিবাসন নীতি”

অভিবাসন বিষয়ে সবশেষ নির্বাচনে লড়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করেছে পোলিশ মিডিয়া ওকেও প্রেস।

তাদের মতে, নির্বাচনে জেতা সিভিক কোয়ালিশন দলের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিবাসন কর্মসূচি নেই। ডোনাল্ড টাস্ক একটি প্রাক-নির্বাচনী বিতর্কের সময় ঘোষণা করেছিলেন তার দল ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য একটি বিশেষ প্রোগ্রাম তৈরি করবে। পরবর্তীতে তিনি এটি নিয়ে আর কোন বিস্তারিত তথ্য দেননি।”

পলিটিকা ইনসাইটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আন্দ্রেজ ববিনস্কি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “পোলিশ নেতারা ভবিষ্যতে অভিবাসন কৌশল তৈরির পর কিছু ভোটারকে নিজেদের পক্ষে পাবেন এবং অনেক ভোটারদের সমর্থন হারাতে হবে।”

তিনি বলেন, “পোল্যান্ডে ৭৫ লাখ লোক রয়েছে যারা পিআইএস-এর পক্ষে ভোট দিয়েছে। ভবিষ্যত সরকার পিআইএস এর চেয়ে বড় কোনো পরিবর্তন আনবে না। তারা একটি ধীর বিবর্তনের মাধ্যমে ইউরোপ এবং ব্রাসেলসের সাথে কথা বলে অভিবাসন নীতির পরিবর্তন আনবে।”

তারা ভোটারদের কাছে বলার চেষ্টা করবে, “আমাদেরকে আবারো সুযোগ দিন৷ আমরা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধান করব।”

অধ্যাপক হুরতোর মতে, “এমনকি ভবিষ্যত জোটের মধ্যেও অভিবাসন নিয়ে মতবিরোধ প্রবল। “বামেরা উদার অভিবাসনের দিকে আগ্রহী। দলটি ইইউর নতুন অভিবাসন চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। তারা বেলারুশের সাথে সীমান্তে পরিস্থিতি সমাধান করতে। এ অঞ্চলে অনেক পুশব্যাকের ঘটনা ঘটে এবং সীমান্ত বেড়া অভিবাসীদের কাছে আঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “নির্বাচনি প্রচারণার সময় ডোনাল্ড টাস্ক পূর্ব পোল্যান্ডে এনজিও ও অধিকারকর্মীদের মানবিক কাজের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু আপনি যখন প্রধানমন্ত্রী থাকেন নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনার কাঁধে থাকে। তখন আপনি অভিবাসীদের জন্য মানবিক কর্মী থাকেন না। আপনাকে নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার সমস্যার জন্য দায়ী করার ঝুঁকি থাকে। এই দুটি বিষয়ে ভিন্নভাবে দেখভাল করতে হয়।”

এই বিশেষজ্ঞের মতে, “ক্ষমতায় আসা সিভিক কোয়ালিশন (কেও) পার্টিরর জন্য অভিবাসন শুধুমাত্র নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, এটি তাদের জন্য অর্থনৈতিক-ভিত্তিও তৈরি করতে পারে। তারা অভিবাসীদের তখনই গ্রহণ করবে যখন এটি করার জন্য একটি অর্থনৈতিক কারণ থাকবে। নতুন জোটটির মধ্যে চ্যালেঞ্জ হবে বাম এবং অন্য দুটি দলের মধ্যে ঐকমত্য খুঁজে বের করা।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্দ্রেজ ববিনস্কি বলেন, “ক্ষমতাসীন জোটকে ক্রমবর্ধমান রাজনীতিতে গুরত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা পোলিশ সীমান্তরক্ষীদের সম্পর্কিত প্রশ্নের সাথেও লড়াই করতে হবে। বর্ডার গার্ড

দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। এই কারণে বেলারুশের সীমান্তের বেড়া সরানো তাদের জন্য রাজনৈতিক আত্মহত্যা হবে।’’

বিপ্লব নয়, বিকল্প ক্ষমতা

দুই দফার কট্টর জাতীয়তাবাদী সরকার শেষে নতুন এই বিজয়কে কোন রাজনৈতিক বিপ্লব হিসেবে দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব ইউরোপীয় গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক মারিউস কোয়ালস্কিও এ ব্যাপারে একমত।

তিনি বলেন, “উদারপন্থি এবং রক্ষণশীল থেকে শুরু করে দেশের অভিজাতদের অধিকাংশই বিশ্বাস করেন যে পোল্যান্ড অভিবাসীদের গ্রহণ না করলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে ভবিষ্যতে পিআইএস এবং কট্টর-ডান কনফেডারেশন পার্টি প্রায় নিশ্চিতভাবে নতুন ক্ষমতাসীন সরকার অভিবাসনের বিষয়ে যে অবস্থানই গ্রহণ করবে তার জন্য আক্রমণ করবে।”

ববিনস্কির মতে, “টাস্কের বিজয় কোন ‘বিপ্লব’ নয় বরং বিকল্প শক্তির বিজয়। নতুন দলকে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের নতুন সংঘাতের সাথে মানিয়ে নিতে অনেক সময় লাগবে। তাদেরকে অভিবাসন নীতি নিয়ে অন্তত নয়টি ভিন্ন দলকে নিয়ে আলোচনা করতে বসতে হবে। এটি বেশ জটিল।”

# ২৭/১০/২০২৩, আন্তর্জাতিক ডেস্ক