আল শিফা হাসপাতালের বাইরের পরিস্থিতি
গত কয়েকদিন ধরেই আল শিফা হাসপাতালে ও এর আশেপাশের এলাকায় হামাস ও ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ চলছে।

গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। মঙ্গলবার মধ্যরাতে হাসপাতালটিতে অভিযান শুরু হয়।

হাসপাতালটির ভেতরে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং বেসামরিক নাগরিক মিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ আটকে পড়েছে।

অভিযান শুরুর আগ থেকেই গোটা হাসপাতাল এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি সৈন্যরা।

আল শিফা হাসপাতালের ভেতর থেকে কাদের আল জানুন নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, “আমি হাসপাতালের ভিতরে ছয়টি ট্যাঙ্ক এবং শতাধিক কমান্ডো সৈন্যকে দেখেছি। তারা জরুরি বিভাগে প্রবেশ করেছে। তাদের কারো কারো মুখে মুখোশ পরা ছিল এবং তারা আরবি ভাষায় “কেউ নড়বেন না, কেউ নড়বেন না” বলে চিৎকার করছিল।”

বিবিসি’র পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে তার এই দাবিটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

গাজার স্থানীয় সময় গতকাল ভোর ৫টার দিকেও এই অভিযান অব্যাহত ছিল বলে জানা গেছে। তবে এই অভিযানে ঠিক কতজন সৈন্য অংশ নিয়েছে এবং কখন এটি শেষ হবে, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

তবে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা আল-শিফা হাসপাতালের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে।

গাজার আল শিফা হাসপাতাল
গাজার আল শিফা হাসপাতালে ভেতরে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং বেসামরিক নাগরিক মিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ আটকা পড়েছে

হাসপাতালটিতে হামাসের ঘাঁটি রয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক ট্যুইটার) এর একটি পোস্টে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, “আমরা বারবারই সতর্ক করে বলেছি যে, আল-শিফা হাসপাতালটিকে হামাস সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে, যেটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তাদের এই বেআইনি কার্যক্রম বন্ধ করার জন্যই সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।”

ইসরায়েলের এই দাবিকে সমর্থন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে, তাদের কাছেও আল শিফা হাসপাতালের নিচে সুড়ঙ্গে হামাসের একটি ‘কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টার’ থাকার তথ্য রয়েছে।

তবে এ দাবি অস্বীকার করেছে হামাস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আল শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি অভিযানের নিন্দা জানিয়ে একে ‘মানবতা বিরোধী অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।

বুধবার ফিলিস্তিনের সংবাদ মাধ্যম ওয়াফা-তে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা বলেছেন, ”আল-শিফা হাসপাতালে অবস্থানরত রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং উদ্বাস্তু নাগরিকদের কোন ক্ষতি হলে তার জন্য ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী সম্পূর্ণরূপে দায়ী থাকবে।”

অভিযান শুরুর আগে আল শিফা হাসপাতালের পরিস্থিতি
অভিযান শুরুর আগে আল শিফা হাসপাতালের পরিস্থিতি

গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই আল শিফা হাসপাতাল গত কয়েক দিন ধরেই হামাস ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মধ্যকার যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইন বা সম্মুখ সারিতে পরিণত হয়েছে।

গাজা শহরের চারপাশে কয়েকদিনের প্রচণ্ড হামলা ও তীব্র লড়াইয়ের পর এই প্রথম ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সরাসরি আল-শিফা হাসপাতালে প্রবেশ করলো।

অভিযানের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন পক্ষ থেকেই কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, গাজার সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে এখন অন্তত সাতশ’ রোগী, চারশো স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রায় তিন হাজার বেসামরিক নাগরিক অবস্থান করছেন। তারা সবাই এখন ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধের মধ্যে পড়েছেন।

অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “হাসপাতালে যেখানে অসুস্থ ও নিরীহ মানুষ, মানুষ চিকিৎসা নিতে এসেছে, সেখানে আমরা কোন ধরনের বিমান হামলা কিংবা গোলাগুলি দেখতে চাই না।”