শীর্ষ খবর:
চলমান সংবাদ

ঘোষিত মজুরি গার্মেন্টস মালিকদের ইচ্ছার প্রতিফলন, শ্রমিকদের নয়

-অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা বাতিল করে মজুরি পুণঃনির্ধারণ এবং শ্রমিক হত্যার বিচার দাবি

শ্রমিকদের মানসম্মত জীবনযাপনের প্রয়োজনিয়তাকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র মালিকদের নির্দেশনা অনুসারে গার্মেন্টস শ্রমিকদের নি¤œতম মজুরি মাত্র ১২৫০০ টাকা চুড়ান্ত করার নিন্দা জানিয়ে এবং ঘোষিত অগ্রহণযোগ্য মজুরি বাতিল করে মজুরি পুণঃনির্ধারন ও শ্রমিক হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ) এর নেতৃবৃন্দ।

গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ) এর যুগ্ম সমন্বয়কারী শ্রমিক নেতা নঈমুল আহসান জুয়েল, আহসান হাবিব বুলবুল, আব্দুল ওয়াহেদ, কাজী রুহুল আমিন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন খসড়া মজুরি ঘোষণার আগেই জী-স্কপের পক্ষ থেকে আমরা হিসাব করে দেখিয়েছিলাম যে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নি¤œতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও উৎপাদিত পোষাক প্রতি উৎপাদন ব্যয় গড়ে সর্বোচ্চ ১৫ সেন্ট বৃদ্ধি পবে এবং জী-স্কপ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহ কে ইথিক্যাল বায়িং নীতি অনুসরণ ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য বাড়তি মূল্য পরিশোধের আহবান জানিয়েছিল। মজুরি বোর্ডের ১২৫০০ টাকার খসড়া মজুরি ঘোষণা শ্রমিকরা প্রত্যখ্যান করলে প্রধান প্রধান ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনসমুহ বর্ধিত মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রæতি দিয়ে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর জন্য আহবান জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েংছে। ক্রেতারা বর্ধিত মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রæতি দেওয়ার পরেও গার্মেন্টস মালিকদের ১২৫০০ টাকার প্রস্তাবনাকেই চুড়ান্ত হিসাবে ঘোষণা করা সরকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক তোষণ নীতির নির্লজ্জ প্রকাশ। তাছাড়া এটাও প্রমাণ হলো যে ক্রেতারা বাড়তি দাম দেয়না বলে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো যায়না বলে গার্মেন্টস মালিকদের প্রচার মিথ্যা বরং গার্মেন্টস মালিকরায় শ্রমিকদের আধুনিক দাসত্বে আটকে রেখে তাদের সস্তা শ্রম লুট করে মুনাফা বাড়ানোর ধারা অব্যাহত রাখার জন্য শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে আগ্রহী নয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিকদের আধুনিক দাসত্বে আটকে রাখার নীতি অবলম্বন করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমুহ শ্রমিকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচেছ। আর শক্তি প্রয়োগ করে বা আতংক তৈরি করে বঞ্চিতের ক্ষোভকে বেশি দিন চাপিয়ে রাখা যায়না। তাছাড়া শ্রমিকদের বঞ্চিত করা বা মজুরি চুরির নীতি অব্যাহত রেখে স্থিতিশিল শিল্পসম্পর্ক প্রত্যাশা করা বাস্তবসম্মত নয়।

টাকার অংকে ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি কে মজুরি বৃদ্ধি হিসাবে প্রচার করা প্রকৃত সত্য কে আড়াল করার অপকৌশল। মজুরি বলতে বুঝায় প্রাপ্ত টাকা দিয়ে শ্রমিকরা কি পরিমাণ ভোগ্যপণ্য কিনতে পারে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৪৬.৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কে বিবেচনায় নিলে মজুরি বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ৯ শতাংশ যা আগামী বছরের মূল্যস্ফীতির ঢেউযে হারিয়ে যাবে। তারপর শ্রমিকের মজুরি হার আবার ২০১৮ সালের মানের নিচে নেমে যাবে। অর্থাৎ মজুরি বোর্ড পোশাক রপ্তানী প্রবৃদ্ধি, শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা. দেশের মাথাপিছু আয়, প্রতিযোগী দেশসমূহের শ্রমিকদের মজুরি, মূল্যস্ফীতি প্রভৃতি শ্রম আইনের ১৪১ ধারায় উল্লেখিত মজুরি নির্ধারণের মানদন্ডসমুহ বিবেচনায় নিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে মজুরি বোর্ডের প্রতিনিধি মনোনয়ন থেকে শুরু করে মজুরি নির্ধারণের সকল পর্যায়ে সচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ ঘোষিত মজুরি বাতিল করে শ্রমিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে মজুরি পুণ:নির্ধারণ এবং শ্রমিক হত্যার বিচারের মাধ্যমে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে বলেন, শ্রমিকদের ওপর নিপিড়ন চালিয়ে আর শ্রমিকদের বঞ্চিত করে যে শিল্প টিকে থাকতে চাই, সেই শিল্পের বিকাশ দেশের অর্থনৈতিক শক্তিশালী করার পরিবর্তে তাকে ক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাবে। নেতৃবৃন্দ, ন্যায্য মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার সংগ্রাম শক্তিশালী করার জন্য শ্রমিকদেও প্রতি আহবান জানান।