মতামত

চা শ্রমিকদের মুল্লুক চলো আন্দোলনের ১০৩ বছর  

-ফজলুল কবির মিন্টু

ছবিঃ সংগৃহীত

আজ ঐতিহাসিক মুল্লুক চলো আন্দোলনের ১০৩তম বার্ষিকী। চা বাগান শ্রমিকদেরকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিন বছরের চুক্তিতে দালালের মাধ্যমে ছোটনাগপুর, সাঁওতাল পরগনা, বিহার, ওডিশা, যুক্ত প্রদেশ (উত্তর প্রদেশ), অন্ধ্র প্রদেশ থেকে  চা বাগানে কাজ করার জন্য আনা হয়েছিল। তাদের জীবন ছিল বন্ধি এবং ক্রীতদাসের ন্যায় অত্যন্ত মানবেতর এবং দুঃসহনীয়। ফলে তাদের মধ্যে বিক্ষোভ দানা বাঁধছিল –যার চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটে আজ থেকে ১০৩ বছর আগে এই দিনে।

এ দিনটি বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সিলেটের চা বাগানে উদ্ভূত চা বাগান শ্রমিকদের এই বিদ্রোহ ছিল ন্যায় বিচার ও উন্নত জীবন লাভের জন্য চা শ্রমিকদের একটি সতস্ফুর্ত এবং শক্তিশালী দাবি।

“মুল্লুক চলো” শব্দটি, যার বাংলা অর্থ “চলো ঘরে ফিরে যাই” শ্লোগানটি হাজার হাজার বঞ্চিত নিপীড়িত চা বাগান শ্রমিকদের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছিল। ঔপনিবেশিক আবাদকারী এবং বৃটিশ কর্তৃপক্ষের কঠোর প্রতিশোধের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকেরা তাদের ইস্পাত দৃঢ় সংকল্পে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। “মুল্লুক চলো” আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য  নিছক চা বাগানের কাজ ছেড়ে দেওয়ার আন্দোলন ছিলনা বরং তাদের মানবিক মর্যাদা এবং আত্ম অধিকারের গভীর দাবি ছিল।

আজ থেকে ১০৩ বছর আগে আজকের এই দিনে আন্দোলনের ডাক পাওয়ার সাথে সাথে, হাজার হাজার চা শ্রমিক ব্যাপকভাবে চা বাগান পরিত্যাগ করে ব্যাপক দেশ ত্যাগে যাত্রা শুরু করে। এই অভূতপূর্ব সংহতি বৃটিশ ঔপনিবেশিক ভিতকে নাড়িয়ে দেয় এবং চা বাগানে কাজের ভয়াবহ অবস্থার প্রতি বিশ্ব বিবেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বৃটিশ কর্তৃপক্ষ, বিদ্রোহের মাত্রা দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়ে যার ফলশ্রুতিতে চা শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে তারা নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয়। যদিও আন্দোলনটি নির্মম দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছিল, তবে এটি এই অঞ্চলের শ্রমিক অধিকারের সংগ্রামে একটি অমোঘ চিহ্ন রেখে গেছে। এটি চা বাগান শ্রমিকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে এবং বাংলাদেশের শ্রমিকদের আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করে। “মুল্লুক চলো” এর উত্তরাধিকার আজও শ্রমিকদের জন্য ন্যায় আচরণ এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য সমসাময়িক প্রচেষ্টাকে অনুপ্রাণিত করে চলছে।  আজকের ১০৩তম বার্ষিকীতে, আমরা ঔপনিবেশিক নিপীড়নকে অস্বীকার করার সাহসী চা বাগান শ্রমিকদের আত্মদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন- আগামী দিনের মানবিক মর্যাদা, ন্যায় বিচার এবং লড়াইয়ের একটা শক্তিশালী প্রতীক হিসাবে ইতিহাসে স্থান করে নিক এই কামনা করি।

(লেখকঃ সংগঠক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় কমিটি)