কমিউনিটি সেন্টার শ্রমিকদের মানবেতর জীবন: প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির অভাব এবং অধিকার হরণের করুণ চিত্র -ফজলুল কবির মিন্টু
সারা দেশে অসংখ্য ছোট বড় কমিউনিটি সেন্টার গড়ে উঠেছে। শুধুমাত্র রমজান মাস ছাড়া সারা বছর এই সকল কমিউনিটি সেন্টারে কাজ করে অসংখ্য শ্রমিক। এই সকল শ্রমিকদের বড় অংশ হচ্ছে বয় এবং সুপারভাইজার। শ্রম আইন অনুযায়ী এই সকল প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব স্থায়ী শ্রমিক থাকা বাধ্যতামূলক হলেও বয় এবং সুপারভাইজাররা কেউ স্থায়ী শ্রমিক হিসাবে কর্মরত নয়। অর্থাৎ এরা কাজ করে কানামনা তথা কাজ নাই মজুরি নাই পদ্ধতিতে। এইভাবে কাজ করার পর মাসে এরা সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা মজুরি পায়। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও এরা অনেকটা দাস শ্রমিকের মতন কাজ করে।
তাদের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর কমিউনিটি সেন্টার শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ পারভেজ বলেন, “কমিউনিটি সেন্টারে কাজ করার কারনে আমাদের ভাগ্যে কদাচিৎ ভালো খাবার জুটলেও আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে আমরা সারা বছর মিলিয়েও একদিনের জন্যও ভালো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি না। পরিবারের অভিভাবক হিসাবে আমাদের জন্য এরচেয়ে গ্লানিকর আর কী হতে পারে?”
তিনি আরও বলেন, “আজ ঈদুল আযহা। আজকের এই খুশীর দিনে আমরা গরু ছাগলের মাংসতো দূরের কথা মুরগী কেনার সামর্থও আমাদের বেশির ভাগ শ্রমিকের নাই। এইভাবে আমাদের দিন চলে যায়।”
কমিউনিটি সেন্টার শ্রমিকেরা এই দেশের নাগরিক। একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক দেশের নাগরিক হিসাবে তাদের রয়েছে কিছু ন্যুনতম অধিকার। এই সকল অধিকার সমূহের অন্যতম হচ্ছে, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের আত্ম সম্মান অটুট রাখার মত এবং জীবন ধারণ উপযোগী মজুরি। আরেকটা বিষয় কমিউনিটি সেন্টার বয় এবং সুপারভাইজাররা যেহেতু প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক চাকরি করে সেহেতু তাদের স্থায়ী হতে হবে। এই ব্যাপারে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। দেশের প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে এই অধিদপ্তর থেকে বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতে হয়। লাইসেন্স নেয়ার সময় কিংবা লাইসেন্স নবায়নের সময় প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে তাদের অর্গানোগ্রামে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক বয় ও সুপারভাইজারকে স্থায়ী শ্রমিক হিসাবে দেখানোর শর্ত আরোপ করা হলে তাদের চাকরি প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেতো এবং একই সাথে কমিউনিটি শ্রমিকদের একটা স্থায়ী আয়ের পথ তৈরি হতো।
অতএব, দেশের কমিউনিটি সেন্টার শ্রমিকদের ন্যূনতম অধিকার ও প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত করতে হলে তাদের স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে অন্তর্ভুক্তি এবং কাজের উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান অপরিহার্য। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ ও তদারকি কমিউনিটি সেন্টার শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
(লেখকঃ সংগঠক কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সমন্বয়ক, ওশ সেন্টার, বিলস-ডিটিডিএ প্রকল্প)