চলমান সংবাদ

ভূমধ্যসাগরে আরো ছয় মরদেহ উদ্ধার

জার্মান দাতব্য সংস্থা রেসকিউশিপ দুর্ঘটনাকবলিত একটি নৌকা ডুবে যাওয়ার আগে ৫১ জনকে জীবিত উদ্ধার করে৷ ছবি: লিওন সালনার/রেসকিউশিপ/ডিপিএ/পিকচার অ্যালায়েন্স

অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা এনজিও ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স বা এমএসএফ এর তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় ৬৬ জন নিখোঁজ হয়েছেন৷ এরমধ্যে কয়েক মাস বয়সিসহ ২৬ শিশু আছে৷

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম এবং শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এর তথ্য অনুযায়ী, নৌকাটির অভিবাসীরা তুরস্ক থেকে যাত্রা করেন৷ যাত্রীরা মূলত ইরান, সিরিয়া ও ইরাকের বাসিন্দা৷ অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা এনজিও ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স বা এমএসএফ জানিয়েছে, নৌকাটিতে আফগানিস্তানের কয়েকজন অভিবাসীও ছিলেন৷ এমএসএফ এর কর্মী সেসিলদিয়া মমি বলেন, ‘‘জীবিতরা জানেন না তাদের স্বজনদের মধ্যে কে বেঁচে আছেন অথবা কে মারা গেছেন৷ পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেছে৷ কেউ স্ত্রীকে হারিয়েছেন, কেউ শিশুকে, কেউ স্বামী, বন্ধু-বান্ধব অথবা নাতি-নাতনিকে হারিয়েছেন৷ ’’

এদিকে সোমবার ভূমধ্যসাগরে দুর্ঘটনাকবলিত আরেকটি নৌকা থেকে ৫১ জনকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল জার্মান দাতব্য সংস্থা রেসকিউশিপ৷ ইটালির দ্বীপ লাম্পেদুসা থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে কাঠের নৌকাটিতে আরো ১০ জনের মরদেহ পেয়েছে তারা৷

নৌকার যাত্রীরা লিবিয়ার জুয়ারা থেকে দুইদিন আগে যাত্রা করেন বলে জানিয়েছেন জীবিত উদ্ধার হওয়ারা৷ রমধ্যে অর্ধেক যাত্রীই ছিলেন বাংলাদেশের৷ রেসকিউশিপের তথ্য অনুসারে, জীবিত উদ্ধার হওয়া ৫১ জনের মধ্যে ৩০ জনই বাংলাদেশি৷ বাকিরা পাকিস্তান, মিশর এবং সিরিয়ার নাগরিক৷ নিহতদের সবাই পুরুষ অভিবাসী৷ প্রাথমিকভাবে এখনও তাদের জাতীয়তা নিশ্চিত করা যায়নি৷

রেসকিউশিপের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্টিফেন সেফার্ট সোমবার ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ডেকে থাকা যাত্রীরা সম্ভবত পেট্রল মিশ্রিত নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন৷ পরবর্তীতে নৌকায় পানি ঢুকলে অজ্ঞান ব্যক্তিরা পানিতে ডুবে মারা যান৷

সেন্ট্রাল মেডিটেরানিয়ান বা মধ্য ভূমধ্যসাগর এখন অনিয়মিত উপায়ে অভিবাসনের সবচেয়ে ভয়াবহর রুটে পরিণত হয়েছে৷ জাতিসংঘের তথ্যানুসারে ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে সাড়ে ২৩ হাজারের বেশি অভিবাসী এই সমুদ্রে মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন৷

‘নৌকাটি উদ্ধারকারীদের জন্যেও কবর হয়ে উঠছিল’

মঙ্গলবার রেসকিউশিপের উদ্ধারকারী জাহাজ ‘নাডির’ এর ক্যাপ্টেন ইঙ্গো ভের্থ দুর্ঘটনাকবলিত নৌকা থেকে জীবিতদের উদ্ধারের বর্ণনা দিয়েছেন৷ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি জানান, কাঠের নৌকাটিতে ধারণক্ষমতার চেয়েও অনেক বেশি যাত্রী ছিল৷

উদ্ধারকাজ চালিয়ে ফেরার মুহূর্তে তার দলের সদস্যরা নৌকাটির নীচের ডেকে অনুসন্ধান চালিয়ে ডজন খানেক মানুষের নিস্তেজ দেহ দেখতে পান৷ এসময় মেডিক্যাল অফিসার একজনের শ্বাস নেয়ার শব্দ পান৷ গ্যাস মাস্ক পরে ক্রু সদস্যরা তাকে নিরাপদে নিয়ে আসেন৷ দ্বিতীয় অনুসন্ধানে তারা আরো একজনকে জীবিত খুঁজে পান৷ সেই সময়ের বর্ণনা দিয়ে ইঙ্গো ভের্থ বলেন,

অভিবাসীদের নৌকাটি তখন প্রায় ডুবে যাচ্ছিল এবং সেটি উদ্ধারকারীদের জন্যেও সম্ভাব্য কবর হয়ে উঠছিল৷

এসময় তারা একটি কুড়াল ও হাতুড়ির সাহায্যে ডেকের একটি অংশ ভেঙে সেখান দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে বের করে আনেন৷ ভের্থ জানান তাদের দুইজনের অবস্থাই ছিল আশঙ্কাজনক৷ একজনের শরীরের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রিতে নেমে আসে৷ পরবর্তীতে তাদেরকে আকাশপথে পালের্মোতে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তারা এখন আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন তিনি৷

এফএস/এসিবি (রয়টার্স, এপি)