চলমান সংবাদ

চামড়ার বাজারে সিন্ডিকেটের দাপট: অর্থনীতির নিয়ম ভেঙ্গে যাচ্ছে

-ফজলুল কবির মিন্টু

ফজলুল কবির মিন্টু
সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি

বাংলাদেশের অর্থনীতি এক বিস্ময়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গরুর দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও, গরুর চামড়ার দাম ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে। আগে যেখানে একটি ১৮/২০ হাজার টাকার গরুর চামড়া ৮০০/১০০০ টাকায় বিক্রি হত, এখন সেই চামড়া কেউ বিনা পয়সায়ও নিতে চায় না। একদিকে গরুর মূল্য লক্ষাধিক টাকায় পৌঁছেছে, অন্যদিকে চামড়ার মূল্য শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, চামড়া সংগ্রহের জন্য মাদ্রাসাগুলো না থাকলে, ভবিষ্যতে হয়তো চামড়া ফেলে দেওয়ার জন্যও মূল্য পরিশোধ করতে হতে পারে।

এই পরিস্থিতির মূল কারণ হিসেবে সমালোচকরা সিন্ডিকেটের দাপটকে দায়ী করছেন। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার মূল্য এতটাই কমিয়ে দিয়েছে যে, মানুষের চামড়া বিক্রির কোন আগ্রহই থাকছে না। অথচ চামড়ার তৈরি পণ্যের মূল্য বাড়ছে, চামড়ার তৈরি জুতা এবং বেল্টের দাম আকাশছোঁয়া।

গরুর দাম বৃদ্ধি পেলেও, কেন চামড়ার মূল্য কমছে, তা বোঝা কঠিন নয়। এখানে অর্থনীতির কোন সূত্রই যেন কার্যকর হচ্ছেনা। সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ফড়িয়া-দালাল ও মুনাফা লোভী সিন্ডিকেট দ্বারা। যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক, সবাই যেন এই সিন্ডিকেটের পাহাড়াদার। দেশের মানুষের প্রতি তাদের কোন কমিটমেন্ট আছে বলে মনে হয় না।

চামড়ার বাজারে সিন্ডিকেটের ভূমিকাঃ

সিন্ডিকেটের দাপটে চামড়ার বাজার কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। চামড়ার ব্যবসায়ীরা মুনাফার জন্য নিজেদের মধ্যে জোট বেঁধে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলস্বরূপ, সাধারণ মানুষ তাদের চামড়ার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এই সিন্ডিকেট প্রথা বন্ধ না হলে, ভবিষ্যতে চামড়া ফেলে দেওয়ার জন্যও মূল্য পরিশোধ করতে হতে পারে।

ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেটের প্রভাব এতটাই ব্যাপক যে, তারা চামড়ার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে পুরো বাজারকে নিজেদের ইচ্ছেমতো পরিচালনা করতে সক্ষম। তারা চামড়ার দাম এতটাই কমিয়ে দিয়েছে যে, চামড়া বিক্রি করে লাভ করা তো দূরের কথা, লোকসানও গুনতে হচ্ছে।

সরকার এবং সিন্ডিকেটের সম্পর্কঃ

সরকার এবং সিন্ডিকেটের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়।  বর্তমান সরকারের বিগত তিন টার্মেই চামড়ার বাজারে সবচেয়ে বেশি ধস নেমেছে। সু্তরাং চামড়ার বাজারে বর্তমান ধসের জন্য বর্তমান সরকার দায় এড়াতে পারে না। তারা যদি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিত, তবে হয়তো চামড়ার বাজারে এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হত না। দেশে যদি চামড়ার চাহিদা কমে যায় তাহলে সরকার প্রয়োজনে বিদেশে কাঁচা চামড়া রপ্তানীর উদ্যোগ নিতে পারে। সেটা না করার কারন হিসেবেই সরকার এবং সিন্ডিকেটের মধ্যে একটা অদৃশ্য সম্পর্কেই অনেকে দায়ী করেন।

সরকারের দায়িত্ব হলো দেশের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, সরকার সিন্ডিকেটের পক্ষে কাজ করছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর।

চামড়ার পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিঃ

চামড়ার মূল্য কমলেও, চামড়ার তৈরি পণ্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি একটি অস্বাভাবিক এবং অবিশ্বাস্য ঘটনা। চামড়ার মূল্য কমলে চামড়ার তৈরি পণ্যের মূল্যও কমা উচিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, চামড়ার মূল্য কমলেও, চামড়ার তৈরি পণ্যের মূল্য বাড়ছে।

এর প্রধান কারণ হলো, চামড়ার ব্যবসায়ীরা নিজেদের মুনাফা বাড়ানোর জন্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। তারা সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা চিন্তা না করেই মুনাফা লোভী হয়ে উঠেছেন।

ভবিষ্যৎ পরিণতিঃ

এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তবে ভবিষ্যতে দেশের চামড়ার বাজার সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। চামড়া সংগ্রহের জন্য হয়তো কেউই আর আগ্রহী হবে না। চামড়ার ব্যবসায়ীরা যদি এই সিন্ডিকেট প্রথা বন্ধ না করেন, তবে তাদের নিজেদের ব্যবসাও ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

সমাধানঃ

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সরকারি কঠোর পদক্ষেপ। সরকারকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

(লেখকঃ সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি)