বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ও সামরিকীকরণ: ইকবাল করিম ভূঁইয়ার বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। সাবেক সেনা প্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া সম্প্রতি রাওয়া ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি রাজনৈতিক সংকটকে সামরিকীকরণের উদ্যোগের বিরোধিতা করে দেশের নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তার মতে, বিবেক, বুদ্ধি ও হৃদয়হীন নীতিনির্ধারকদের কারণেই বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড়, করুণ ও মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপট
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ও সহিংস হয়েছে। বিভিন্ন হামলা, আক্রমণ এবং পাল্টা প্রতিরোধে দুই শতাধিক মানুষ নিহত এবং অসংখ্য মানুষের অঙ্গহানি ঘটেছে। ইকবাল করিম ভূঁইয়া উল্লেখ করেছেন যে, এই সহিংসতায় বহু কিশোর ও তরুণ অন্ধ হয়েছেন এবং অসংখ্য নিরীহ নাগরিক প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়াও, ব্লক রেইড করে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে বাড়িঘর ও মেস চিনিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটে চলেছে। মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন কিংবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হাজার হাজার নিরপরাধ কিশোর, তরুণ ও যুবক।
মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ও বর্তমান বাস্তবতা
ইকবাল করিম ভূঁইয়া তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন যে, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল বৈষম্য, ভেদাভেদ ও জুলুমের অবসান করা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সেই অঙ্গীকারের সম্পূর্ণ বিপরীত। বৈষম্য ও জুলুম দেশের সব পর্যায়ে ভয়াবহভাবে বিস্তার লাভ করেছে। সমাজের নিচের স্তরে থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। অর্থনৈতিক অবস্থার নাজুকতা এবং এর ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা দেশবাসীকে আত্মোৎসর্গ করতে বাধ্য করছে।
সমাধান ও সুস্থিরতার পথে
ইকবাল করিম ভূঁইয়া মনে করেন, বর্তমান কষ্টকর পরিস্থিতির জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা না করলে সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করতে হলে প্রথমে এই সংকটের মূলে থাকা কারণগুলো দূর করতে হবে।
উপসংহার
সাবেক সেনা প্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়ার বক্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে নীতিনির্ধারকদের বিবেক, বুদ্ধি ও হৃদয়কে কাজে লাগিয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশের স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে যথাযথ বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। রাজনৈতিক সংকটকে সামরিকীকরণ না করে, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংকট নিরসনে কাজ করতে হবে। তবেই বাংলাদেশ একটি সুস্থির ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে এগিয়ে যাবে।