ছাত্রদের ক্লাসে ফিরে যাওয়া উচিৎ -ফজলুল কবির মিন্টু
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে একটি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘকালীন স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, এবং এই পতনে ছাত্ররাই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। অনেক রাজনৈতিক শক্তি তাদের পেছন থেকে সমর্থন দিয়েছে, তবে সন্দেহাতীতভাবে ছাত্ররাই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্রদের প্রভাব সব জায়গায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা তাদের শক্তির মহড়া প্রদর্শনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, বিশেষত রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং বাজার মনিটরিং এ তাদের অংশগ্রহণ এখন দৃশ্যমান। তবে বয়সে তরুণ হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে আবেগপ্রবণ হয়ে কাজ করছে, যা অনেক মানুষের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিছু ছাত্র বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে বিতর্কে জড়াচ্ছে।
১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডি ৩২-এ শক্তির মহড়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু হলে ডিজে পার্টির আয়োজন দেশের সচেতন সমাজকে হতাশ করেছে। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রসমাজের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে। আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা ৫ আগস্টের পূর্বে যেভাবে নিঃস্বার্থ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলাম, সেখানে কিছুটা হলেও আমরা হোঁচট খেয়েছি বলে মনে করছি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে দুইজন ছাত্রের অন্তর্ভুক্তি জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আর দেশ পরিচালনা এক কথা নয়। অনেকে মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ছাত্রদের অন্তর্ভুক্তি তাদের মধ্যে ভুল বার্তা প্রেরণ করেছে। যার ফলে তারা নিজেদেরকে এখন দেশে অপ্রতিরোধ্য ভাবতে শুরু করেছে। এর কিছু উদাহরণ ইতিমধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং ধর্ম উপদেষ্টার কিছু বক্তব্য পছন্দ না হওয়ায় ছাত্ররা তাদের প্রতি অত্যন্ত অপমানজনক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
এই অবস্থা বেশিদিন চলতে থাকলে জনমনে বিরূপ মনোভাব গণবিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে। ছাত্রসমাজের ব্যাপক রক্তপাতের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান যদি পথ হারায় তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, দলমত নির্বিশেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থা স্থাপন এবং তাদেরকে নিঃস্বার্থ সমর্থন প্রদান খুবই জরুরি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো কাজে আন্দোলনরত ছাত্রদের অতিমাত্রায় নজরদারি সুফল আনবে না। এতে উপদেষ্টারা মানসিক চাপে পড়ে যাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আন্দোলনকারী ছাত্ররা কোনো বিপ্লবী ছাত্র সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের কর্মী নয়। তাদের পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়াও খুব বেশি দিনের নয়। ফলে তাদের কার্যক্রম এভাবে চলতে থাকলে তাদের পরস্পরের মধ্যেও ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ তৈরি হতে পারে।
এইসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাদের উচিত নিজ নিজ পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়া এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক ছাত্রদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকা।
(লেখকঃ সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি)