চলমান সংবাদ

বিজ্ঞান ভাবনা (১৬২): কুরস্ক

-বিজন সাহা  

গত ৬ আগস্ট ২০২৪ ইউক্রেন হঠাৎ করেই রাশিয়ার কুরস্ক আক্রমণ করেছে। কুরস্ক রাশিয়ার পশ্চিমে ইউক্রেন সীমান্তে এক প্রদেশ যার প্রধান শহর কুরস্ক। ফলে অনেকেই ধারণা করছে ইউক্রেন হয়তো কুরস্ক শহরটিই দখল করেছে। আর বাইরে আছে প্রোপ্যাগান্ডা। ফলে অনেকেই এসব নিয়ে জানতে চাইছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ইউক্রেনের সাথে এদের কয়েকটি অঞ্চলের যৌথ সীমান্ত রয়েছে। তবে যেহেতু যুদ্ধ চলছে দনবাসে তাই এসব এলাকায় অতিরিক্ত সেনা ছিল না। আর্মি নয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীই সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে ছিল। আর এর সুযোগ নিয়েই ইউক্রেন এখানে দ্রুত প্রায় ১০ – ১২ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পরে। ফলে প্রায় অরক্ষিত বহু জনপদ তাদের দখলে চলে যায়। বন্দী হয় অনেক তরুণ যারা সেই সময় ট্রেনিং-এ ছিল। হ্যাঁ, এদেশে সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। ছেলেদের ১৮ বছর পূর্ণ হলে তাদের এক বছরের জন্য আর্মিতে নেয়া হয় প্রশিক্ষণের জন্য। তবে সেটা যতটা না যুদ্ধ করার জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ তারচেয়ে বেশি করে মানসিক প্রশিক্ষণ। সাধারণত এদের যুদ্ধে পাঠানো হয় না, যাদের যুদ্ধে পাঠানো হয় তাদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

কুরস্ক আক্রমণ নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ ইতিমধ্যে চালু রয়েছে বাজারে। প্রথম যে ভার্সন সামনে আসে তা হল এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেন সম্ভাব্য নেগোসিয়েশনে নিজের পক্ষে কিছু জোরালো আর্গুমেন্ট তৈরি করতে চায়। এই যুক্তির পেছনে যুদ্ধে প্রায় অচলাবস্থা এবং ধীরে ধীরে ইউক্রেনের দনবাস হারানোর বিষয়টি সামনে চলে আসে। কারণ ২০১৪ সাল থেকে বিগত ১০ বছরে ইউক্রেন তার অধীনস্ত দনবাসের সমস্ত এলাকা জুড়ে দুর্গ গড়ে তুলেছে। অনেক জায়গায় বেসামরিক লোকজন অনেকটা জিম্মি হিসেবে আছে। এর প্রমাণ রুশদের দ্বারা দখলকৃত ইউক্রেনের কোথাও গেরিলা বাহিনী গড়ে ওঠেনি। লোকজন যুদ্ধে যাচ্ছে অনিচ্ছায়। কোন একটি জনপদ রুশরা দখল করলে স্থানীয় জনগণ তাদের বরণ করে নিচ্ছে। এটা অনেকটা ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনারা বাংলাদেশে প্রবেশ করলে যেমনটা হয়েছিল ঠিক সেরকম। পূর্ব পাকিস্তান যেমন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুধেল গাই, দনবাস ঠিক তেমনি ছিল কিয়েভ তথা পশ্চিম ইউক্রেনের জন্য দুধেল গাই, যেখান থেকে কয়লা, গ্যাস, মেটাল ইত্যাদি পাওয়া যেত। পশ্চিম পাকিস্তান যেমন পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য বলতে গেলে কিছুই করেনি, তেমনি কিয়েভের পক্ষ থেকেও দনবাস এলাকার উন্নয়নের জন্য ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রায় কিছুই করা হয়নি। ক্রিমিয়ায়ও ঠিক একই চিত্র। সেখানে ইউক্রেনের এলিট শ্রেণি মহা আনন্দে সময় কাটালেও স্থানীয় লোকদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতির জন্য কখনই দুই পয়সা ব্যয় করেনি। শোনা যায় দনবাস এলাকার প্রচুর জমি বিদেশীদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। তাই পশ্চিমা বিশ্ব এখন নিজেদের ভূমি উদ্ধারে লড়াই করছে। সংবিধান অনুযায়ী বিদেশীদের কাছে জমি বিক্রি নিষিদ্ধ, কিন্তু জেলেনস্কি ক্ষমতায় এসে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়। তাই কুরস্ক দখল করার একটি উদ্দেশ্য ছিল দখলকৃত কুরস্কের সাথে দনবাস বা অন্য কোন এলাকা বদল করা। যুদ্ধবন্দী কেউ কেউ বলেছে তাদের আদেশ দেয়া হয়েছিল কুরস্কের কুরচাতভ শহরে কুরস্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করে রাশিয়াকে সাবোটেজ করা। কারণ সেক্ষেত্রে ইউক্রেনের পক্ষে তাদের শর্তে আলোচনার টেবিলে বসার জন্য রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করা সহজ হবে।

আরেকটি ভার্সন অনুযায়ী হঠাৎ আক্রমণ করে বেশি বেশি মানুষকে যুদ্ধবন্দী করা এবং তাদের সাথে রাশিয়ার কাছে যেসব সেনারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদের বিনিময় করা। অন্তত জেলেনস্কি তার এক ইন্টার্ভিউয়ে এমন আভাস দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় একশ যুদ্ধবন্দী বিনিময় করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগ ছিল কুরস্কে বন্দী হওয়া প্রশিক্ষণ রত তরুণরা।

পশ্চিমা বিভিন্ন মাধ্যমে কুরস্ক আক্রমণ নিয়ে প্রচুর আলোচনা চলছে। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের ধারণা এটা সামরিক দিক থেকে ভুল পদক্ষেপ। কারণ এর ফলে দনবাস এলাকা থেকে অনেক দক্ষ সেনাদের সরিয়ে আনতে হয়েছে। এতে করে দনবাসে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বসে পড়েছে। এখন প্রতিদিন সেখানে একের পর এক ঘাঁটি ইউক্রেনের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু ইউক্রেনের মূল শক্তি দনবাসে, তাই দনবাস হারালে খুব দ্রুত খারকভ, দনেপর, ওদেসা ইত্যাদির পতন ঘটে পারে। তবে যারা প্রচণ্ড রকম রুশ বিরোধী তারা খুব খুশী। যদিও কুরস্ক বা অন্যান্য জায়গায় ইউক্রেনের সামরিক সাফল্য প্রায় নেই বললেই চলে, তারা বেসামরিক লোকদের আক্রমণ করছে, ভীতির সঞ্চর করতে চাইছে। এতে উল্টো আরও বেশি করে মানুষ যুদ্ধে যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করছে। এটা এখন তৃতীয় পিতৃভূমির যুদ্ধের রূপ নিতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সমস্ত রাশিয়া জুড়ে তৈরি হয়েছে কুরস্ক সাহায্য ফাণ্ড। সেখান থেকে হাজার হাজার মানুষ স্থানান্তরিত করা হচ্ছে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকায়, বিশেষ করে স্কুল কলেজের ছাত্রদের যাতে তারা ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষাজীবন শুরু করতে পারে। এটাও ভাবার বিষয়। আমাদের দেশে যখন যেকোনো অজুহাতে স্কুল কলেজ বন্ধ করা হয়, এখানে যুদ্ধের মধ্যেও যাতে পড়াশুনার ক্ষতি না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়। কুরস্কের বিভিন্ন এলাকা ইউক্রেনের দখলে চলে গেলে প্রথমেই শুরু হয় সেসব এলাকা থেকে বেসামরিক লোকদের এভ্যাকুয়েশনের কাজ। স্মরণ করা যেতে পারে যে ইউক্রেন সেনারা সব সময় বেসামরিক লোকদের ঢাল হয়েছে ব্যবহার করেছে, বিভিন্ন শহরে আবাসিক এলাকায় ঘাঁটি বেঁধেছে যাতে বেসামরিক লোকজন হত্যা না করে তাদের আক্রমণ করা না যায়। এটা হয়েছে মারিওপলে আজোভ স্টিলে, হয়েছে খারকভ, কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে। অন্য দিকে রুশরা নিজদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রথমেই চেষ্টা করেছে বেসামরিক লোকজন সরিয়ে নিতে যাতে যুদ্ধে লোকক্ষয় যথাসম্ভব কম হয়। এ কারণেই ভূমি উদ্ধার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।

অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছে যে এখনও কেন রাশিয়া কিয়েভের উপর অলআউট আক্রমণ চালায় না? কেন জেলেনস্কি সহ অন্যান্য সামরিক নেতাদের বাসভবনে আক্রমণ করে না? এখানে মনে হয় আমাদের এই যুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দেখতে হবে। জেলেনস্কি সহ ইউক্রেনের নেতারা বিভিন্ন সময় বলেছে যদি দনবাসের মানুষ রাশিয়ায় থাকতে চায় তারা রাশিয়া চলে গেলেই পারে। মানে ওদের মানুষ দরকার নেই, দরকার ভূমি। আর তাই তারা নির্দ্বিধায় বেসামরিক এলাকা আক্রমণ করে। আমেরিকার কোন কোন সিনেটর প্রকাশ্যে বলেছে এই যুদ্ধে আমেরিকার ইনভেস্টমেন্ট সবচেয়ে ফলপ্রসূ, কারণ একজন আমেরিকার সেনার প্রাণত্যাগ ছাড়াই রুশদের মারা হচ্ছে। তাদের কাছে রুশ মানেই শত্রু তা সে সৈনিক হোক আর সাধারণ মানুষ হোক। তাদের দরকার ভূমি, মানুষ নয়। একই ডকট্রিন আমরা দেখি ইসরাইলে। দুই জন সন্ত্রাসীকে মারতে গিয়ে যদি দশ জন সাধারণ প্যালেস্টাইনীকে হত্যা করতে হয় হোক। এটাই আমরা দেখেছি আফগানিস্তানে, ইরাকে, সিরিয়া, লিবিয়ায়। পক্ষান্তরে রুশরা সেখানে গেছে মানুষের ডাকে, তাদের অধিকার আদায় করতে। তাই ভূমির চেয়েও মানুষ তাদের কাছে অনেক বেশি বড়। এই যে গত কয়েকদিন রাশিয়া ইউক্রেনে এত এত স্থাপনা আক্রমণ করল, অস্ত্রাগার, ভাড়াটে সেনাদের আবাস, বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুড়ে ছারখার হয়ে গেল – কেউ কিন্তু কোন বেসামরিক লোক মারা গেছে বলে জানায়নি। অথচ ইউক্রেন আক্রমণ মানেই শিশু, বৃদ্ধ, নারী এদের জীবনহানি। দুই পক্ষের যুদ্ধের ফিলোসফি একেবারেই ভিন্ন। দুই পক্ষ বলতে আমরা রুশ আর পশ্চিমা বিশ্ব বোঝাচ্ছি। কারণ যুদ্ধ হচ্ছে এই দুই পক্ষের। এরাই এই যুদ্ধের কুরু পাণ্ডব, ইউক্রেন কুরুক্ষেত্র আর ইউক্রেনের জনগণ কুরুক্ষেত্র ও তার আশেপাশে বসবাসকারী মানুষ যাদের কেউ কোনদিন জিজ্ঞেস করেনি তারা কী চায়, যদিও জেলেনস্কিকে ভোট দেবার সময় তারা শুধুই শান্তি চেয়েছিল। এছাড়াও রাশিয়া এই যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানের উপরই জোর দিচ্ছে। তারা এমন কিছু করতে চায় না যাতে চীন, ভারত সহ গ্লোবাল সাউথ রাশিয়ার বিপক্ষে যেতে বাধ্য হয়। আজ যে তারা আমেরিকার বিশেষ করে ডলারের আধিপত্য কিছুটা হলেও খর্ব করতে পেরেছে তার কারণ সুক্ষ হিসাব। আবেগের বশবর্তী হয়ে হঠাৎ কিছু করে নিজের ক্ষতি না করা, অর্জিত সাফল্য না হারানো এখন তাদের কুটনীতির প্রধান স্তম্ভ।

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (১৬৩): জাতীয় সংগীতের অবমাননা কি আইনত দ্বন্দ্বনীয়?-বিজন সাহা

ইতিমধ্যে একটা বিষয় পরিষ্কার যে কুরস্ক আক্রমণ করার নীল নকশা তৈরি হয়েছে আমেরিকা আর ব্রিটেনের যৌথ প্রচেষ্টায়। কুরস্ক থেকে যেসব মানুষের সরিয়ে আনা হয়েছে তাদের জবানবন্দী অনুযায়ী এসব সেনাদের মধ্যে বহু বিদেশী ছিল যারা রুশ বা ইউক্রেন ভাষায় কথা বলত না। পরে সেখানে পোলিশ, আফ্রো-আমেরিকান অনেকের দেখা মিলেছে তাদের ভিডিও থেকে বা মৃত সেনাদের পরিচয় পত্র থেকে। ধারণা করা হয় ন্যাটোর বিভিন্ন দেশ ও ব্রিটেনে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ইউক্রেন সেনারা দ্রুত কুরস্ক এলাকায় ঢুকে কিছু জনপদ দখল করে ফিরে যায় আর তার জায়গায় রেখে যায় অপেক্ষাকৃত অপটু সেনাদের। ফলে দিন দিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, বাড়ছে যুদ্ধবন্দীর সংখ্যা। ইতিমধ্যে প্রায় ছয় হাজার ইউক্রেন সেনা নিহত বা গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে। তাই বলে ইউক্রেন যে এই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে সেটাও নয়। প্রতিদিন অন্যান্য এলাকায় ড্রোন আক্রমণ করছে। ইতিমধ্যে অনেক দেশ ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতর তাদের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। ফলে অনেকের ধারণা যুদ্ধ আরও প্রবল হতে পারে আর ইউরোপের কোন কোন দেশ এতে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারে। পশ্চিমা বিশ্বের ধারণা ইতিমধ্যে সব ধরণের রেড লাইন তারা ক্রস করেছে, এর পরেও রাশিয়া যেহেতু উত্তর দিচ্ছে না, তার অর্থ রাশিয়ার সেই শক্তি নেই, রাশিয়া কোন অবস্থাতেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না। রাশিয়া নিজেও সেটা চায় না, তবে অস্তিত্ব সংকট দেখা দিলে কী হবে সেটা বলা কষ্ট। সেরগেই লাভরভ ইতিমধ্যেই বলেছেন রাশিয়া তার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ডক্ট্রিন পরিবর্তনের কথা গুরুত্ব সহকারে ভাবছে। ইতিমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইউক্রেন সফর করেছেন। ভারত শান্তির জন্য মধ্যস্থতা করবে কিনা এখনও জানা যায়নি, তবে ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব খুব করেই চাইছে ভারত সেরকম কোন উদ্যোগ নিক। অন্যদিকে ব্রিক্সের তিন সদস্য চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল নতুন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আসছে বলে শোনা যাচ্ছে। হল্যান্ড ইউক্রেনকে অনুমতি দিয়েছে তার দেয়া এফ-১৬ রাশিয়ার মাটিতে ব্যবহার করার। এদিকে ভাবা হচ্ছে নভেম্বরে আমেরিকার নির্বাচনের আগে পর্যন্ত যুদ্ধ জিইয়ে রাখা হবে, অনেকে আবার ২০২৫ সালের কথা বলছে। এক কথায় কী রশিয়া, কী পশ্চিমা বিশ্ব সবার জন্যই ইউক্রেন যুদ্ধে জয় পরাজয় অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে উঠছে। দু পক্ষই চাইছে যে করেই হোক পারমাণবিক যুদ্ধ এড়াতে, বিশেষ করে আমেরিকা চাইছে পারমাণবিক যুদ্ধ যদি হয় সেটা যেন ইউরোপেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু এটা কতটুকু সম্ভব সেটা শুধু ভবিষ্যৎ বলতে পারবে। তবে এই মুহূর্তে যে শান্তি আলোচনা হচ্ছে না সেটা নিশ্চিত। কুরস্ক আক্রমণের পরে ভ্লাদিমির পুতিন বলেই দিয়েছেন রাশিয়া আর কোন ধরণের আলোচনায় যেতে আগ্রহী নয়, কেননা এসব আলোচনা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, অশান্তিকে দীর্ঘস্থায়ী করার এক কৌশল। তাছাড়া যদি আলোচনা হয় সেটা হবে রাশিয়া আর ইউক্রেনের নিরাপত্তার নয়, গ্লোবাল সিকিউরিটি নিয়ে রাশিয়া, চীন ও আমেরিকার মধ্যে। কারণ অন্য যেকোনো ধরণের আলোচনা অর্থহীন। আপাতত যুদ্ধ চলছে, চলছে ইউক্রেনের মাটিতে, রাশিয়ার মাটিতে। চলছে নতুন নতুন অস্ত্রের পরীক্ষা। চলছে বৃহৎ যুদ্ধের প্রস্তুতি। অন্তত জার্মানি ২০২৯ সালে রাশিয়ার সাথে সরাসরি যুদ্ধের কথা বলছে। ২০২৪ সালে দেশে যেমন ১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি প্রতিশোধের কথা বলছে, ২০২৯ সালে জার্মানিও তেমনি ১৯৪৫ সালের পরাজয়ের বদলা নিতে চায়। এবার আমেরিকা আর ইংল্যান্ড হবে তাদের মিত্রশক্তি। আমেরিকার নীতির অন্যতম প্রধান কথা হল নিয়ন্ত্রিত বিশৃঙ্খলা, তবে একবার যখন বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় তখন প্রায়ই সেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এটাই ইতিহাসে শিক্ষা। কিন্তু কেউ সেটা শিখতে চায় না। রুশরা বলে ইতিহাস শিক্ষক নয়, ইতিহাস ওয়ার্ডেন। ইতিহাস কাউকে শেখায় না, তবে কেউ সময় মত পড়া মুখস্ত না করলে তাকে কঠিন শাস্তি দেয়।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো