মতামত

স্বাধীনতার চেতনা ও ড. ইউনূসের বক্তব্য: একটি প্রতিফলন -ফজলুল কবির মিন্টু

ফজলুল কবির মিন্টু
সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি

সম্প্রতি নিউইয়র্কে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি বক্তব্য দেশের স্বাধীনতা ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি যে অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে, তা কেবল একটি ব্যক্তিগত মতামত নয়; বরং এটি আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য আত্মত্যাগ করা লাখ লাখ মানুষের প্রতি একধরনের অসম্মান।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব:

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। এই যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন, অঙ্গহানি হয়েছে, এবং দেশের জন্য একটি নতুন ভিত্তি তৈরি করা হয়েছিল। আমাদের ইতিহাসের এই অধ্যায়টি শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়; এটি একটি জাতির আত্মপ্রকাশের চিত্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেম, সংগ্রাম, এবং স্বাধীনতার গুরুত্ব নিহিত রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতি অবজ্ঞা:

ড. ইউনূসের মন্তব্য, “ছাত্ররা রিসেট বাটন চেপে সবকিছু মুছে দিয়েছে,” শিক্ষার্থীদের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম সেই জাতীয় ইতিহাসের অংশ, যারা দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের বিদ্যমান সংগ্রাম এবং অধিকার আদায়ের চেষ্টা কেবল তাদের ভবিষ্যতের জন্য নয়, বরং আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের পক্ষে এমন মন্তব্য করা, যা তাদের আন্দোলনকে ছোট করে দেখায়, তা কেবল মেধার অভাবই নয়, বরং ইতিহাসের প্রতি অসম্মান।

২০২৪ এর আন্দোলন ও ১৯৭১:

ড. ইউনূস কী ২০২৪ এর আন্দোলনের বিজয় গাঁথা দিয়ে ১৯৭১ কে মুছে দিতে চান? আমরা দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই, ২০২৪ আমাদের জাতির ইতিহাসের অন্যতম মাইলফলক হতে পারে, কিন্তু ২০২৪ কখনোই ১৯৭১ এর সমকক্ষ হতে পারে না। তাই ২০২৪ দিয়ে ১৯৭১ কে মুছার চেষ্টা হলে সেটা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের জাতির মূল ভিত্তি; একে অবজ্ঞা করা মানে আমাদের অস্তিত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছোঁড়া।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্মান জানানো:

আমাদের উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, তার মূল্যবোধ এবং আত্মত্যাগকে সম্মান জানানো। শিক্ষার্থীরা কখনও ‘রিসেট বাটন’ চাপার কথা চিন্তা করতে পারে না; তারা পরিবর্তনের জন্য লড়াই করে, জাতির সামনে নতুন আশা নিয়ে আসে। তাদের এই প্রচেষ্টা দেশের উন্নতির জন্য অপরিহার্য।

সমাপ্তি:

সব শেষে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা একান্ত প্রয়োজন। এটি শুধু আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস নয়, বরং আমাদের ভবিষ্যতের পথনির্দেশক। আমাদের প্রত্যেকেরই এই চেতনাকে রক্ষা করতে হবে, যেন আমাদের আগামী প্রজন্ম তাদের সংগ্রামের গল্পগুলো ভুলে না যায়। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ, এবং তার ইতিহাসকে সম্মান জানানো আমাদের সকলের দায়িত্ব।