মতামত

বেসরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে মানবাধিকার ও মাতৃত্বকালীন ছুটির সমস্যা: এক অভিজ্ঞতার কাহিনী

ফজলুল কবির মিন্টু
সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি

অতি সম্প্রতি, একটি বেসরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন সহকারী ব্যবস্থাপক, যিনি ২০১৮ সালে উক্ত প্রতিষ্ঠানে ফ্রন্ট ডেস্কে কাজ শুরু করেন, তার চাকুরীর অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি সন্তান সম্ভাবা হন এবং তার প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল ১৪ আগস্ট। দীর্ঘ ছয় বছরের চাকুরী জীবনে তিনি সততা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সাথে কাজ করে আসছিলেন, কিন্তু মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় তার সঙ্গে যা ঘটল তা চরম অমানবিক ও অবৈধ।
দেশের শ্রম আইনের ধারা ১০০ এবং আইএলও কনভেনশন-১ অনুসারে, কর্মচারীদের দিয়ে দৈনিক ৮ ঘণ্টার অধিক কাজ করানো বেআইনি, তবে মালিকের বিশেষ প্রয়োজনে সর্বাধিক ২ ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করানো যেতে পারে। কিন্তু তিনি প্রতিদিন নিয়মিত ৪ ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করলেও কোনো ওভারটাইম ভাতা পাননি। বরং সন্তান সম্ভাবা হওয়ার পর তিনি ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারছিলেন না বিধায় কোন বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই তার বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়।
একপর্যায়ে তাকে কর্মক্ষেত্রে আসতে নিষেধ করা হয়, যা তার জন্য ছিল এক ধরনের মানসিক চাপ। তিনি পুরো জুন মাস এবং জুলাইয়ের ১৩ তারিখ পর্যন্ত নিয়মিত কাজ করলেও তাকে জুন মাসের বেতন এবং পরবর্তী সময়ে কোনো বেতন প্রদান করা হয়নি।এমনকি শ্রম আইন অনুযায়ী ১১২ দিন মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যাপারেও তাকে কোন কিছুই অবহিত করা হয়নি।
অধিকন্তু যখন তিনি বেতন চাইতে যান, তখন অভিযোগ করা হয় যে তিনি ‘Report Cancel Refund’ এর টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এই অভিযোগের পরে, তিনি জানতে পারেন মিনু চিং মারমা নামের তার অধীনস্থ সহকর্মী তার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কিছু কার্যকলাপ করেছে, যা ছিল সম্পূর্ণ তার অজানা। বিষয়টি প্রমানাদিসহ তিনি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে রহস্যজনক কারনে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি।
এমন পরিস্থিতিতে, তিনি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন এবং তার পক্ষ থেকে একটি চিঠি প্রদান করেন, যাতে তিনি তার অধিকার ফিরে পাওয়ার এবং বকেয়া বেতন ও মাতৃত্বকালীন ছুটির টাকা পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, প্রতিষ্ঠানটি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে, তিনি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন।
এই ঘটনা একদিকে কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতি বৈষম্য এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি দৃষ্টান্ত, অন্যদিকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। মাতৃত্বকালীন ছুটি একটি মৌলিক অধিকার, যা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে, সেই জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।

(লেখকঃ সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি)