মার্কিন নির্বাচন নিয়ে ড. সাঈদ ইফতেখার আহমেদ এর বিশ্লেষণ
মার্কিন নির্বাচনে আরব আমেরিকানরা (মুসলিম এবং খ্রিস্টান) এবার ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে ভোট দিচ্ছেন না মধ্যপ্র্যাচ্যে তাদের নীতির কারণে। তাঁরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও ভোট দিবেন না। কিছু ব্যতিক্রম বাদে তাঁরা এবার ভোট দিচ্ছে গ্রিণ পার্টির প্রার্থী, ইসরাইল বিরোধী জিল স্টেইনকে।
ইহুদী বংশোদ্ভূত স্টেইন পেশায় একজন চিকিৎসক। ঐতিহাসিক ভাবে আরব-আমেরিকানদের ভোট ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা পেতেন। কিন্তু এবার এর ব্যতিক্রম ঘটছে।
বামপন্থী,প্রগতিশীল, সেক্যুলার, peace activist–এদের একটা অংশও হ্যারিসের পরিবর্তে স্টেইনকে বেছে নিচ্ছেন। এদের অতীব ক্ষুদ্র আরেকটা অংশ এবার কাউকেই ভোট দিচ্ছেন না। এর ফলে মনে করা হচ্ছে গতবারের চেয়ে স্টেইনের ভোট এবার বেশ কিছুটা বাড়বে। তারপরেও গতবারের চতুর্থ অবস্থান থেকে এবারো তৃতীয় স্থানে তিনি উঠে আসতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। তবে স্টেইনের ভোটগুলি হ্যারিসের ভোট ব্যাঙ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যা আখেরে ট্রাম্পকে সুবিধা দিবে।
অন্যান্যবারের চেয়ে ভারতীয়-আমেরিকানদের ভোট নানা কারণে এবার ট্রাম্প বেশী পাবেন। মোদীর সাথে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতার কারণে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ভারতীয়-আমেরিকান হ্যারিসের বদলে ট্রাম্পকে বেছে নিবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতীয়-আমেরিকানদের আনুমানিক ভোট ২২ লাখের মত।
৯০ শতাংশের উপর বাংলাদেশী-আমেরিকানদের ভোট সব সময় ডেমোক্র্যাটদের বাক্সে পড়লেও এবার এ হারটা কমতে পারে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার কারণে। ফলে ট্রাম্প আগের যে কোন সময়ের চেয়ে এবার এ বাংলাদেশী কমিউনিটির কাছ থেকে বেশী ভোট পাবেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
মূলধারার জনগোষ্ঠীর মাঝে হ্যারিসের নারী ভোট বেশী পাবার সম্ভাবনা রয়েছে রিপাবলিকানদের গর্ভপাত বিরোধী অবস্থানের জন্য। তবে সার্বিকভাবে রক্ষণশীল, পুরুষতান্ত্রিক মার্কিন সমাজে এখনো কোন নারীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখার মনস্তত্ব অনেকের মাঝেই গড়ে উঠেনি। এটা ট্র্যাম্পের জন্য একটা বড় প্লাস পয়েন্ট।
মার্কিন establishment এবং মূল্ধারার মিডিয়া চাচ্ছে না নির্বাচনে ট্র্যাম্প জিতে আসুক। ট্র্যাম্পের জাতীয় পর্যায়ে রক্ষণশীল, দক্ষিণপন্থী নীতি নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নেই। তাদের সমস্যা হল তাঁর আন্তর্জাতিক নীতি নিয়ে। ট্র্যাম্প ক্ষমতায় আসলে রাশিয়া-চীন, বিশেষতঃ রাশিয়া বিশ্ব রাজনীতিতে বর্তমানের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে চলে যাবে বলে তারা মনে করছেন। আর এ জায়গাটাতেই তাদের শঙ্কা।
ট্র্যাম্প ইতিমধ্যে জানিয়েছেন তিনি নির্বাচিত হলে ইউক্রেইনকে সমর্থন দেবেন না এবং একদিনে রুশ-ইউক্রেইন যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন। ভারতের সাথে সম্পর্ককে উচ্চমাত্রায় নেবার ঘোষণাও তিনি দিয়েছেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে মার্কিন নীতির পরিবর্তনের ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এটি পরিস্কার যে, ট্র্যাম্প নির্বাচিত হলে এতদিন ধরে চলে আসা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির একটা আমূল পরিবর্তন হতে পারে।
নানাবিধ জনমত জরীপে ট্র্যাম্প কিছুটা এগিয়ে আছেন। তবে তারপরেও শেষ পর্যন্ত তিনি জিতে আসতে পারবেন কিনা সেটা দেখার জন্য আমাদের আরো দুই-তিনটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।
( লেখাটি ড. সাঈদ ইফতেখার আহমেদ এর ফেসবুক পোষ্ট থেকে সংগৃহীত)