চলমান সংবাদ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যক্রমে সমস্যা: ব্যবসায়ীরা শুল্ক ছাড়ের সুযোগ নিচ্ছে, সাধারণ মানুষ চাপে

নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও মূল্যস্ফীতির চাপ কমছে না, বরং বাড়ছে৷ অক্টোবরে গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)৷

ঢাকা, [তারিখ] – বিশ্লেষকরা বলছেন, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে দেশের মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে, বিশেষ করে নির্দিষ্ট এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিলেও, সেগুলোর যথাযথ ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিমত জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকরা।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘বাজারে এতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ বলছে দাম কমছে না, অথচ এনবিআর অনেক সুবিধা দিয়েছে। ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারপরও নিত্যপণ্যের দাম কমে না। মানুষ অধৈর্য হয়ে গেছে, এটাই স্বাভাবিক।’’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, ‘‘মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে আরো আট মাস লাগবে।’’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর মতে, গত অক্টোবর মাসে দেশের মূল্যস্ফীতি ১০.৮৭ শতাংশে পৌঁছেছে। খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে চাল ও সবজির দাম বাড়ানোর কারণে এটি বৃদ্ধি পেয়েছে। অক্টোবরে খাদ্যমূল্যস্ফীতি ১২.৬৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা জুলাইয়ের চেয়ে অনেক বেশি।

সরকারের উদ্যোগ এবং পদক্ষেপ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। এর মধ্যে পেঁয়াজ, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো হয়েছে। কিন্তু বাজারে এর প্রভাব এখনও তেমন চোখে পড়ছে না। বিশেষজ্ঞরা জানান, ব্যবসায়ীরা এই সুবিধাগুলো কাজে লাগাচ্ছে এবং পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. নুরুল আমীন বলেন, ‘‘এলসি মার্জিন তুলে দেয়ায় আমদানি সহজ হয়েছে, কিন্তু বাজারে সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকায় দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না।’’ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘‘বাজার মনিটরিংয়ের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীরা সরকারের পদক্ষেপের সুবিধা নিচ্ছে, কিন্তু ভোক্তাদের কোনো উপকার হচ্ছে না।’’

মূল্যস্ফীতির প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা জানান, মূল্যস্ফীতির কারণে নির্দিষ্ট এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের জীবনযাত্রা আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘‘খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন নিম্ন আয়ের মানুষ।’’

সরকারের প্রতিক্রিয়া

এ পরিস্থিতিতে নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘‘বাজারে স্বস্তি ফেরানোর জন্য আমি কাজ করবো। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’’ অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, ‘‘সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে সেগুলোর ফল পাওয়া যাচ্ছে না।’’

বাজারের মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের টানা কার্যক্রম এবং বাজার মনিটরিংয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিশ্লেষকরা। তবে সরকারের দাবি, সংকট সমাধানের জন্য আরও সময় প্রয়োজন।