শ্রম সংস্কার কমিশনের সাথে চা শ্রমিক প্রতিনিধিদের মত বিনিময় -চা শ্রমিকদের ভূমির অধিকার, গ্র্যচুইটি প্রদান এবং শ্রম আইনে বৈষম্য নিরসনের দাবি
আজ সকাল ১১টায় ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক হলে শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন দত্তের সাথে চা শ্রমিক প্রতিনিধিদের এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফটিকছড়ি উপজেলার নির্বাহী অফিসার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত মত বিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খান, বিজেএসএফ এর সাধারণ সম্পাদক জাহিদ উদ্দিন শাহিন, টিইউসি কেন্দ্রীয় সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু এবং চট্টগ্রাম ভ্যালির অধীনস্থ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিক প্রতিনিধির মধ্যে ভ্যালি কমিটির সভাপতি নিরঞ্জন নাথ, সহসভাপতি বিনা রায়, সাধারণ সম্পাদক যতন কর্মকার, উপদেষ্টা প্রদীপ দাশ, মৃদুল কর্মচারী, বাদল মুন্ডা, বিপ্লব মুন্ডা, রবীন চন্দ্র দে, সাধন চক্রবর্তী, মদন রাজগড় প্রমুখ শ্রমিক নেতা।
মত বিনিময় সভায় চা শ্রমিকেরা তাদের বঞ্চনার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তারা জানান, বংশ পরস্পরায় শত বছরের অধিক সময়কাল চা বাগান শ্রমিকেরা ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার বাগান এবং ব্যবসা করার জন্য মালিককে শত বিঘা জমি ইজারা দিতে পারেন কিন্তু যাদের শ্রমে এবং ঘামে চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের থাকার জন্য কোন জমি থাকবে না –সেটা মেনে নেয়া যাবে না। তারা আরো জানান, নিজস্ব ভূমি না থাকার কারনে চা শ্রমিকের সন্তানেরা কোন সরকারী চাকরি পায় না। পাসপোর্ট করতে পারে না। এক খন্ড ভূমি রক্ষা করার জন্য চা শ্রমিকদের প্রত্যেক পরিবার থেকে কমপক্ষে একজন হলেও চাকরি করতে হয়। অন্যথায় ভূমি হারাতে হয়। মালিক প্রদত্ত ভূমিতে অবস্থান করলে চা শ্রমিকেরা শ্রম আইন অনুযায়ী গ্র্যচুইটি পায় না। প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়েও চলে নানা ফন্দি ফিকির। ২০ বৎসর বয়সে চাকুরী শুরু করার পরও বিভিন্ন অজুহাতে ৪০ বছর পেরিয়ে প্রভিডেন্ট ফান্ডের সদস্য হতে পারে। তারা বলেন, শ্রম আইনে সকল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য নৈমিত্তিক ছুটির উল্লেখ থাকলেও চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটি নাই। সকল সেক্টরের শ্রমিকেরা ১৮ দিনে ১ দিন অর্জিত পেলেও চা শ্রমিকেরা অর্জিত ছুটি পায় ২২ দিনে ১ দিন । এধরনের বৈষম্যমূলক ধারা গুলো সংশোধন করা প্রয়োজন। মত বিনিময় সভায় চা শ্রমিকেরা তাদের সন্তানদের জন্য সরকারী চাকুরীতে কোটা প্রথা চালু করার দাবি জানান।
শ্রমিকেরা বর্তমান দৈনিক মজুরি ১৭৮ টাকার পরিবর্তে দৈনিক ৫০০ টাকা করার দাবি জানান। শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত শ্রমিকদের মতামত খুব গুরুত্ব সহকারে শুনেন। তিনি বলেন, শ্রমিকদের সকল দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। তিনি চা শ্রমিকদের নিজস্ব ভূমি না থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি শ্রম আইনে চা শ্রমিকদের জন্য বৈষম্যমূলক আইনগুলো চিহ্নিত করে, তা সংশোধন করার ব্যাপারে শ্রম অধিকার কমিশনে পেশ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোজাম্মেল হক চৌধুরী চা শ্রমিকেরা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তিনি শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্তের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, চা শ্রমিকদের যদি বৈষম্য থেকে মুক্তি দেয়া যায় তাহলে শ্রম সংস্কার কমিশন চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন চা পান করে আমরা সতেজতা ফিরে পাই এবং একইসাথে আমাদের সারাদিনের কাজ শুরু করি কিন্তু চা শ্রমিকদের ব্যাপারে আমরা কোনখোঁজ রাখিনা –যা খুবই দুঃখজনক।
তিনি জানান, ফটিকছড়ি উপজেলায় সাড়ে ৬ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ১৫ হাজার চা শ্রমিক রয়েছে। এই সকল চা শ্রমিকদের ভালো মন্দের ব্যাপারে তার সুদৃষ্টি থাকবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।