বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (১৮০): যুদ্ধ ও শান্তি

-বিজন সাহা     

কিছুদিন আগে আমরা যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম যুদ্ধ যতদিন পর্যন্ত লাভজনক থাকবে ততদিন ব্যবসায়ীরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। সেটা যেমন রুশ ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য সত্য তেমনি সত্য অন্য যেকোনো যুদ্ধের জন্য। প্রাচীন কালে রাজারা ভূমি দখল করত, এখন অস্ত্র বিক্রি করে। কিন্তু সব কিছুর মূলে মুনাফা, বিশেষ করে বিশ্ব যখন পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় চলে। তবে লাভ লোকসান একেক দলের একেক রকম। যদি আমেরিকার জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ সারাবিশ্বের উপর তার কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য হয় আর সে দেশের মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রির পাহাড় প্রমাণ মুনাফার জন্য হয়, রাশিয়ার জন্য এই যুদ্ধ অস্তিত্বের প্রশ্ন। আর্থিক ক্ষতি হলেও, ব্যবসা না হলেও এই যুদ্ধ তাকে চালিয়ে যেতে হবে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আর যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সমাজে শান্তি বজায় রাখার জন্য। কারণ এখন যারা যুদ্ধের অর্থনীতিতে নিয়োজিত তাদের জন্য উপার্জনের বিকল্প ব্যবস্থা না করে শান্তি চুক্তি করা হবে আরও বেশি বিপজ্জনক। সেটা তলিয়ে দেখতে আমরা আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতে পারি। যুদ্ধের পর হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা এক দিনেই বেকার হয়ে পড়ে। তাদের না ছিল উপার্জনের ব্যবস্থা না ছিল সামাজিক নিরাপত্তা। ফলে তাদের অনেকেই বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়, যদিও সঠিক ভাবে এই শক্তিকে ব্যবহার করতে পারলে তারাই হতে পারত নতুন দেশ গড়ে তোলার অগ্র সৈনিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাকশাল গঠনের পেছনে এসব ভাবনা ছিল কিনা জানি না। তবে সোভিয়েত ইতিহাস থেকে বোঝা যায় পরিকল্পিত অর্থনীতি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আর সে কারণেই যুদ্ধের পরে সবাইকে দেশ গড়ার কাজে নিযুক্ত করতে পেরেছিল সোভিয়েত সরকার। আরও একটা উদাহরণ হিসেবে মনে করতে পারি ক্যারিবিয়ান ক্রাইসিসের কথা। চুক্তি অনুযায়ী তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবা থেকে আর আমেরিকা তুরস্ক থেকে নিজ নিজ পারমাণবিক অস্ত্র সরিয়ে নেয়। এখন কথা হল কেন সোভিয়েত ইউনিয়ন এত সহজে সেটা করতে পারলেও আমেরিকার পক্ষে সেটা সহজ ছিল না, আর তুরস্ক থেকে আমেরিকান অস্ত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল গোপনে। পুঁজিবাদী বিশ্বে সব কিছুর মতই অস্ত্রও তৈরি করে প্রাইভেট কোম্পানি। সেখানে বিভিন্ন টেণ্ডারের মাধ্যমে কেউ অস্ত্র সরবরাহের অনুমতি পায়। এরপর শুরু হয় বিনিয়োগের কাজ। পুঁজির প্রধান লক্ষ্য মুনাফা। যুদ্ধ বন্ধ মানে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ, অস্ত্র তৈরির কারখানা বন্ধ, কোম্পানি ক্ষতির সম্মুখীন। সেটা পূরণ করবে কে? তাই পুঁজিবাদী সমাজে কোন কিছু উৎপাদন যেমন সময় সাপেক্ষ, তেমনি সময় সাপেক্ষ সেটা বন্ধ করা। সোভিয়েত ইউনিয়নে কি হত? ট্যাঙ্ক তৈরির জন্য উৎপন্ন ইস্পাত অন্য কাজে ব্যবহার করা হত। এরকম সব ক্ষেত্রেই। এ জন্যে কারো অনুমতির দরকার হত না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নিজেদের মধ্যে বসে ঠিক করত এসব বিষয়। আর এ কারণেই সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল এত দ্রুত পারমাণবিক বোমা তৈরি করা। তবে এখন জানা যায় যে কাজ আসলে শুরু হয়েছিল চল্লিশের দশকের শুরুতেই যখন জার্মান বিজ্ঞানী ক্লাউস ফুক্স যিনি জার্মান পারমানবিক প্রকল্পের সাথে পরিচিত ছিলেন এবং পরে ইংল্যান্ডে পালিয়ে যান এবং ম্যানহাটন প্রজেক্টে অংশ গ্রহণ করেন, নিজের উদ্যোগে সোভিয়েত বিজ্ঞানীদের কিছু কিছু তথ্য সরবরাহ করেন। তাঁর ভাষায় সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা নিজেরাই এসব পারত, তবে হয়তো বেশি সময় লাগত। ইতিমধ্যেই যেসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল তিনি তাদের সেই পথে না চলার ব্যবস্থা করেন। শুধুমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিকল্পিত অর্থনীতির কারণেই দ্রুত এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল তৎকালীন নেতৃত্ব। উল্লেখ করা যায় ট্রুম্যান যখন স্তালিনকে পারমাণবিক অস্ত্রের কথা বলেন স্তালিন কোন রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। চার্চিল আর ট্রুম্যানের ধারণা ছিল স্তালিন বিষয়টি বোঝেননি। বাস্তবতা হল স্তালিন এসব জানতেন। যাহোক আমরা আলোচ্য বিষয় থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। হ্যাঁ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ হল তখন দেশ গড়ার কাজ ছিল, তাই সমস্ত শক্তি সেদিকেই নিযুক্ত করা গেছিল। আর যেহেতু সরকার ছিল চাকরি দেবার একমাত্র মালিক এখানে সেরকম কোন সমস্যা হয়নি। একই কথা আফগান যুদ্ধফেরতদের সম্পর্কে বলা যাবে না বা যারা চেচনিয়ায় যুদ্ধ করেছিল তাদের সম্পর্কেও বলা যাবে না। ভেঙ্গে পড়া সোভিয়েত বা নতুন রাশিয়ার অর্থনীতি তাদের পুনর্বাসন করতে পারেনি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এখন রাশিয়ার অর্থনীতি বদলে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে সে ফিরে যাচ্ছে পরিকল্পিত অর্থনীতিতে। আর এ কারণেই পশ্চিমা বিশ্বের সব হিসেব নিকেশ ভুল প্রমানিত করে তারা অতি দ্রুত যুদ্ধের অর্থনীতি বাস্তবায়িত করতে পেরেছে, ফলে এখন তাদের অস্ত্র উৎপাদন ৫১ টি দেশের উৎপাদনকে ছাড়িয়ে গেছে। অনেকের ধারণা রাশিয়া এখন ধীরে ধীরে মিশ্র অর্থনীতিতে ফিরে যাচ্ছে যেখানে পরিকল্পিত অর্থনীতির প্রাধান্য দিন দিন বাড়বে। আর এটাই তাকে যুদ্ধ পরবর্তী বিশৃঙ্খলার হাত থেকে রক্ষা করবে। যদি সেটা হয় তাহলে রাশিয়াকে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার পশ্চিমা প্রচেষ্টা মাঠে মারা যাবে আর সেটা হবে পশ্চিমা বিশ্বের কারণেই। কথায় বলে সুখ ছিল না, অসুখ সাহায্য করল। ফলে আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু হবে দুই সিস্টেমের মধ্যে।

যুদ্ধ সোভিয়েত সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল। তিরিশের দশকে স্তালিন পার্টির ভেতরে ও বাইরে যে শুদ্ধি অভিযান চালান যুদ্ধ শেষে সেটা প্রায় নাই হয়ে যায়। ধর্মের উপর নিপীড়ন বন্ধ করতেও তিনি বাধ্য হন যাতে বিশ্বাসী মানুষেরা জন্মভূমির জন্য লড়াইয়ে নামে। এভাবে প্রযুক্তির পাশাপাশি শুধু সামাজিক জীবনেই পরিবর্তন আসেনি, পরিবর্তন আসে সামাজিক সম্পর্কেও। সময়ের সাথে নিজেকে বা রাষ্ট্রেকে পরিবর্তন করার অক্ষমতা পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত সমাজে স্থবিরতার জন্ম দেয় যার হাত ধরে আসে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও সোভিয়েত ভাঙ্গন। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিকল্পিত অর্থনীতি যদি তাকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারে তাহলে এখন সেদিকে ফিরে যাওয়া কেন। আমার ধারণা এদেশের বর্তমান নেতৃত্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস থেকে যেমন শিক্ষা নিয়েছে তেমনি পশ্চিমা অর্থনীতির দুর্বলতার কথাও মাথায় রাখছে। তাই পরিকল্পিত অর্থনীতিতে ফিরে যাওয়া মানে শতভাগ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পরিকল্পিত অর্থনীতিতে ফিরে যাওয়া নয়, প্রাইভেট পুঁজির বিরাট অংশগ্রহণের পরিবেশ বজায় রাখা। তবে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে তাদের থাকবে কন্ট্রোল প্যাকেট। কথায় বলে ভাঙা সহজ কিন্তু গড়া কঠিন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর চুবাইস ও গাইদারের মূল লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব এদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলা যাতে কল-কারখানার উপর ভিত্তি করে এদেশের আবারও সমাজতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। ফলে জলের দামে বিক্রি হয়ে যায় কল-কারখানা, যার বেশিরভাগ আর চালু হয়নি, মেটাল হিসেবে বিক্রি করেছে নতুন মালিকেরা। অনেক কষ্টে সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় অংশ বাঁচিয়ে রাখতে পারে। আমার মনে আছে দুবনায় যেখানে সোভিয়েত আমলে এবং এখন মিসাইল তৈরি হয় সেখানে নব্বুইয়ের দশকে হাড়ি পাতিল এসব তৈরি হত। কল-কারখানার সাথে সাথে চলে গেছে বিশেষজ্ঞরা, নতুন করে গড়া হয়নি কাউকে। আর এসব কারণেই রাশিয়াকে যেতে হয়েছে বিশেষজ্ঞের দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে। ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন করে প্রচুর মানুষের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি করেছে, নব্বুইয়ের দশকে এবং তার পরেও সেনাবাহিনীর চাকরি তাচ্ছিল্যের চোখে দেখা হত, এখন সেটা গৌরবের চাকরি হয়ে ফিরে আসছে। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করছে তাদের এক বিরাট অংশ গ্রাম বা মফঃস্বল শহরের যেখানে চাকরির বাজার বরাবরই মন্দা। তাই যুদ্ধ শেষে এদের কর্মসংস্থান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অন্যদিকে এই যুদ্ধে মস্কো, পিতের সহ বড় বড় শহরের উচ্চ বেতনে চাকরিরত অনেক লোকজন অংশ নিয়েছে। সেটাও সমাজে পজিটিভ রেসোন্যান্স তরি করেছে। তবে যুদ্ধ হল রেলগাড়ির মত যা ব্রেক কষার পরেও ইনারশিয়ায় মাইলের পর মাইল চলতে পারে। তাই যুদ্ধ ফর্মালি শেষ হলেও তার রেশ থাকবে দীর্ঘ দিন, দীর্ঘ দিন সমাজে থাকবে উদ্বৃত্ত শক্তি। সেটাকে সঠিক পথে চালানোর জন্য হলেও রাশিয়া হয়তো মিশ্র অর্থনীতির পথে হাঁটবে। হয়তো বা সেটা হবে লেনিনের নিউ ইকোনমিক পলিসির মত কিছু একটা।

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (১৭৯): বিজয়ের মাস -বিজন সাহা

তবে যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত কবে, কোন শর্ত সাপেক্ষে শেষ হবে সেটা বলা কষ্ট। কিছুদিন আগে টাকার কার্লসনকে দেয়া সেরগেই লাভরভের ইন্টার্ভিউ, ১৯ ডিসেম্বর ভ্লাদিমির পুতিনের প্রেস কনফারেন্স কাম জাতির সাথে প্রশ্নোত্তরের সেশনে যেটা বোঝা যায় তা হল রাশিয়া শুধু নিজের নিরাপত্তার লিখিত গ্যারান্টি পেলেই যুদ্ধ বিরতিতে যাবে। কোন রকম সাময়িক ব্যবস্থা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এখন পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনের কাছে দাবি করছে ১৮ বছর বয়সের বেশি সবাইকে যুদ্ধে পাঠাতে। প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে কীভাবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষকে প্রায় বিনা প্রশিক্ষণে যুদ্ধে পাঠাচ্ছে। ইউক্রেনের সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ক্ষমতার উপরের দিকে অবস্থানকারী প্রায় সবাই আত্মীয় স্বজনদের পশ্চিমা বিশ্বে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়েছে। পক্ষান্তরে রাশিয়ার অনেক সংসদ সদস্য ম্যান্ডেট জমা দিয়ে যুদ্ধে গেছে। এটাও আবারও প্রমাণ করে যুদ্ধটা কার। ইউক্রেনে জেলেনস্কি ও এলিট শ্রেণির যারা এ থেকে প্রচুর অর্থ পাচ্ছে এবং যাদের ভেসে থাকার একটাই উপায় – যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। পশ্চিমা বিশ্বের কারণ তাদের মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রি প্রচুর মুনাফা করছে আর সেসব দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনরা কোন না কোন ভাবে এসব কোম্পানির সাথে জড়িত যেমন অনেক দেশেই ডাক্তাররা জড়িত ফারমাসিটিক্যাল কোম্পানির সাথে। তাছাড়া আমেরিকা থেকে শুরু করে সারা বিশ্বেই আজ নিওলিবারেল গণতন্ত্র ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা সমাজে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে, নির্বাচনে তাদের প্রার্থীরা হেরে যাচ্ছে। একমাত্র যুদ্ধই তাদের জন্য ক্ষমতায় থাকার একটা ন্যারেটিভ তৈরি করতে পারে। একারণেই নৈতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির পরেও পশ্চিমা এলিট শ্রেণি আজ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সব করছে। মরছে অসহায় মানুষ। এদের কথা কি কেউ কখনও ভেবেছে? এরা যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে রাখার জন্য কাঠ মাত্র। অবশ্য ট্রাম্প জেতায় অনেকেই আশাবাদী এবার হয়তো আমেরিকা ও রাশিয়া কোন এক চুক্তিতে আসবে ইউক্রেন নিয়ে। কিন্তু সমস্যা কি ইউক্রেনে? দুই জার্মানি এক হবার সময় পশ্চিমা বিশ্ব সোভিয়েত ইউনিয়নকে তার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু বিগত ৩৫ বছরে তারা একের পর এক সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে যাচ্ছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়া আমেরিকার কাছে নিজের নিরাপত্তা দাবি করে যার একটি ছিল ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাখা। সেই দাবি থেকে এখনও রাশিয়া সরেনি, সরবে বলে মনে হয় না, কেননা এটা তার অস্তিত্বের প্রশ্ন। প্রশ্ন আসতে পারে রাশিয়া এত শক্তিশালী এক দেশ, তার কেন এই গ্যারান্টি দরকার? কারণ বিগত কয়েক শ’ বছর ধরে রাশিয়া বার বার পশ্চিমা বিশ্ব দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে – তা সে পোলিশদের দ্বারাই হোক, ফ্রান্সের দ্বারাই হোক আর জার্মানির দ্বারাই হোক। রাশিয়া আক্রমণ করেনি, রাশিয়া আক্রান্ত হয়েছে। তাই বর্তমান যুগে এ ধরণের গ্যারান্টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই রাশিয়ার শক্তি আছে, আছে পারমাণবিক অস্ত্র। কিন্তু রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে চায় না, পৃথিবী ধ্বংস করতে চায় না। তাই সে বার বার পশ্চিমা বিশ্বের কাছে আবেদন জানিয়েছে এমন এক নিরাপত্তা চুক্তির যা সবাইকে ভবিষ্যৎ যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচাবে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব সেটাকে নিজেদের পরাজয় বলেই মনে করে। তাই দুই পক্ষের, বিশেষ করে ট্রাম্প ও পুতিনের শত ইচ্ছে থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোন মতৈক্যে আসা খুব সহজ হবে না। মানুষ যতদিন পর্যন্ত নিজেদের যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করতে দেবে ততদিন পর্যন্ত তার মুক্তি নেই, মুক্তি নেই পৃথিবীর যুদ্ধের হাত থেকে। ইউরোপে এলিটদের মধ্যে এখন যে পরিমাণ যুদ্ধের উন্মাদনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে – তাতে যতদিন না সেসব দেশের জনগণ এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামছে – যুদ্ধ চলবে, চলবে যতদিন না ইউরোপ আর ভাগ্য খারাপ হলে সমস্ত উত্তর গোলার্ধ পারমাণবিক শীতে এক মহাশ্মশানে পরিণত হয়।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো