জাহাজভাঙা শিল্পে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন: শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক ২০২৪ সালের তথ্য উপস্থাপন -২০২৫ সালের জানুয়ারী থেকে নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়নে মালিক পক্ষের নীতিগত সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার অবস্থা নিয়ে এক তথ্য উপস্থাপন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত।
সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন। তিনি শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করতে সরকার ও মালিক পক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
শ্রমিকদের গ্রিভ্যান্স, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক ২০২৪ সালের তথ্য উপস্থাপন করেন জাহাজভাঙা শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ক এবং জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের সদস্য সচিব ফজলুল কবির মিন্টু। তিনি জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি, দুর্ঘটনা, ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং ২০২৪ সালে ঘটিত বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও তাদের প্রভাব নিয়ে তথ্য প্রদান করেন।
এছাড়া, সভার শুরুতে ২০২৪ সালে জাহাজভাঙা শিল্প খাতে নিহত ৭ শ্রমিকের স্মরণে ৭টি মোমবাতি প্রজ্জলন করা হয়। এই বিশেষ আয়োজনটি নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানানো হয়। মোমবাতি প্রজ্জলনের মাধ্যমে সভার অংশ গ্রহণকারীরা শ্রমিকদের প্রতি তাদের সমর্থন এবং সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক শিপন চৌধুরী, বাংলাদেশ শিল বিল্ডার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশনের সচিব মোঃ ছিদ্দিক, শিল্প সম্পর্ক শিক্ষায়তনের অধ্যক্ষ রুমানা আক্তার, চট্টগ্রাম শ্রম দপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসসুদুল আলম, উপস্থিত অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক মিজানুর রহমান ইউসুফ, শ ম জামাল উদ্দিন, এডভোকেট জহির উদ্দিন মাহমুদ, দিদারুল আলম চৌধুরী, নুরুল আবসার, জাহাজভাঙা শ্রমিকনেতা মোঃ আলী, কে এম শহিদুল্লাহ, মোঃ ইদিছ, মোঃ মানিক মণ্ডল, জামাল উদ্দিন, মোঃ মহিউদ্দিন।
সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
সভায় বক্তারা বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার জন্য যথাযথ আইন বাস্তবায়ন এবং সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কাজের পরিবেশ, ন্যায় সঙ্গত এবং বাঁচার মত মজুরি প্রদানের সঠিক ব্যবস্থা এবং দুর্ঘটনার পর চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা ও চিকিতসাকালীন সবেতন ছুটি পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এছাড়া, সরকারকে জাহাজভাঙা শিল্পের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলা এবং শ্রম আইন বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের অধিকার রক্ষায় গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব হবে।
তারা বলেন, প্রকৃত কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করে জাহাজভাঙা টেকসই শিল্প প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
সভায় শিপ ব্রেকিং মালিক সমিতির সচিব জনাব ছিদ্দুকুর রহমান জানান মালিক সমিতি জাহাজভাঙা শ্রমিকদের মাসিক নিম্নতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা বাস্তবায়নের ব্যাপারে মালিক সমিতি নীতিগত একমত হয়েছেন। ২০২৫ এর জানুয়ারী থেকে যেন সকল শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি প্রদান করা হয় সেটা জানিয়ে দেয়ার জন্য আজ সন্ধ্যায় শিপ ব্রেকিং সেক্টরের সকল মালিককে ডাকা হয়েছে। তিনি আগামীকাল থেকেই জাহাজভাঙা শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়নের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক শিপন চৌধুরী বলেন, ২০১৮ সালে ঘোষিত নিম্নতম মজুরি অদ্যাবধি বাতবায়িত না হওয়া দুঃখজনক। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক সময় পার হয়ে গেছে। জাহাজভাঙা সেক্টরে নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়নের ব্যাপারে আর কোন ছাড়া দেয়া যাবে না। তিনি আরো জানান, শ্রমিকেরা কিছু মালিকের বিরুদ্ধে দুইটা মজুরি শিট তৈরি করেন বলে অভিযোগ করেছেন। সেই ব্যপারেও মালিক পক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে বলে তিনি সভায় অবহিত করেন।
সভার সভাপতি তপন দত্ত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় মালিক সমিতি এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ৭ বৎসর আগে নিম্নতম মজুরি ঘোষিত হয়েছে। ৫% করে ইনক্রিমেন্ট হলে ২০১৮ সালের ঘোষিত মজুরি এখন ২৫/২৬ হাজার হওয়ার কথা। সুতরাং নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়নে যেন কোন ধরণের চালাকি বা গড়িমসির আশ্রয় নেয়া না হয় সেই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।