বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি সহিদুল্লা চৌধুরী স্মরণসভায় বক্তারা -সহিদুল্লা চৌধুরী শ্রমিক স্বার্থে আপোষহীন ছিলেন
কিংবদন্তি শ্রমিকনেতা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি, পাট, সুতাও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সহিদুল্লা চৌধুরী বিগত ৩ জানুয়ারী ২০২৫ মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর স্মরণে গতকাল ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবস্থ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্তের সভাপতিত্বে এবং টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত স্মরণ সভায় অতিথি বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহাম্মদ, শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তসলিমা আক্তার, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আবসার,বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক শওকত আলী,টিইউসি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু, বাশখালি সি এন জি পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম, বেসরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রহিম, আমিন জুট মিল সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল খালেক, টিইউসি পাঁচলাইশ-বায়েজিদ আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ হানিফ, সাধারণ সম্পাদক মহিন উদ্দিন, পাহাড়তলি আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত দত্ত, কমিউনিটি সেন্টার ও ডেকোরেটার্স শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ পারভেজ, মোঃ রাশেদ, মোঃ ইমরানুল ইসলাম প্রমুখ।
স্মরণ সভার শুরুতে শ্রম সংস্কার কমিশন, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা, চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদসহ টিইউসি’র অন্তর্ভূক্ত ২২টি সংগঠনের পক্ষ থেকে সহিদুল্লা চৌধুরীর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। অতঃপর সুর ধ্বনি অঙ্গনের পরিচালনায় শিল্প সীমা হোল ও শ্রীময়ী আদ্রিতা দাশ শোক সংগীত পরিবেশন করেন।
স্মরণ সভায়, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, শ্রমিকনেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশের সকল শ্রমিক সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন। তিনি বিলেন, একটা সাধারণ ধারনা আছে, নতুন প্রজন্ম থেকে আর কোন সহিদুল্লা চৌধুরী জন্ম হবে না। কিন্তু এটা সঠিক নয়। তিনি বর্তমান প্রজন্ম থেকেই –বিশেষত চট্টগ্রাম থেকে সহিদুল্লা চৌধুরী সৃষ্টি হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সহিদুল্লাহ চৌধুরীর উপস্থিতি আমাদেরকে বিভিন্ন প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে এবং সাহসী হতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। সহিদুল্লা চৌধুরী জানতেন, শ্রমিক আন্দোলনকে সাফল্যমন্ডিত করতে হলে প্রস্তুতি নিতে হয় এবং অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হয়। ফলে তিনি প্রস্তুতি ছাড়া কোথাও কওন আলোচনায় বসতেন না। এ শিক্ষাটাও আমাদের রপ্ত করতে হবে। তাহলেই সহিদুল্লা চৌধুরীর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা নিবেদন সম্ভব হবে। শ্রম সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, স্কপের পক্ষ থেকে সহিদুল্লাহ ভাইয়ের নেতৃত্বে পাটকল আধুনিকায়নের একটা প্রস্তাবনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এতে সহিদুল্লা ভাই হিসাব করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, পাট কলের নতুন ও আধুনিক তাঁত স্থাপন করে এবং তাঁত স্থাপনকালীন শ্রমিকদের মজুরি বাবদ খরচ সব মিলিয়ে ১২শত কোটি টাকার প্রয়োজন। তিনি আরো হিসাব করে দেখিয়েছেন, নতুন তাঁত স্থাপন করা হলে পাটকল সমূহের উৎপাদন ৯ লক্ষ টনের স্থলে ২৫ লক্ষ টনে উন্নীত করা সম্ভব হবে। এর ফলে পাটকল শ্রমিকদের মাসিক বেতন ২৫ হাজার টাকা করে দিলেও পাটকলগুলো লাভজনক হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য তৎকালীন সরকার সহিদুল্লাহ ভাইয়ের প্রস্তাব গ্রহন করে নাই। সরকার ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল –যা ছিল দেশের স্বার্থ বিরোধী।
সভায় উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, সহিদুল্লা চৌধুরী শ্রমিক স্বার্থে আপোষহীন ছিলেন। তিনি সব সময় শ্রমিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি তাঁর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হন নি।
স্মরণসভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন, সুপর্না বড়ুয়া এবং সহিদুল্লাহ চৌধুরীর জীবনী পাঠ করেন হোটেল সেন্ট মার্টিন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান।