৩২ নম্বর: কেউ কাটছেন গাছ, কেউ রড, আছেন ভাঙারি ব্যবসায়ীও
আবদুল আজিজ ও জসীম উদ্দিন নষ্ট হয়ে যাওয়া আসবাব, কাঠের জিনিস বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করেন। পরে সেগুলো টুকরা করে লাকড়ি বানিয়ে বিক্রি করেন। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁদের দেখা গেল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে।
সেখানে উপড়ে ফেলা একটি কাঁঠালগাছ কুঠার দিয়ে কাটছিলেন দুজন। কী করবেন জানতে চাইলে আবদুল আজিজ বললেন, ‘গাছটি ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিয়ে যাবেন। পরে সেগুলো লাকড়ি বানিয়ে বিক্রি করবেন।’
গাছের টুকরা নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি ঠেলাগাড়ি এনেছেন আবদুল আজিজ।
![কেউ হাতুড়িপেটা করে আংশিক বের হয়ে থাকা রড পুরোটা বের করার চেষ্টা করছেন। আজ শনিবার সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে](https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2025-02-08%2Ftaqx3vnu%2Fdhanmondi_2.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress&fmt=webp)
শুধু এই দুজনই নয়, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটির ধ্বংসস্তূপে শতাধিক মানুষ এমন ভাঙা-কাটায় ব্যস্ত। কেউ ধ্বংসস্তূপ থেকে রড-লোহা কাটছেন, কেউ হাতুড়িপেটা করে আংশিক বের হয়ে থাকা রড পুরোটা বের করার চেষ্টা করছেন, কেউ আবার ভাঙারিতে বিক্রি করা যাবে, এমন যা যা পাচ্ছেন, সবই নিচ্ছেন।
গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়িটির একটি কলামে হাতুড়ি-শাবল দিয়ে আঘাত করে করে ভেতরের রডগুলো বের করার চেষ্টা করছিলেন আসলাম মিয়া। সঙ্গে ছিলেন দুই ছেলে ও স্ত্রী। তাঁরা থাকেন জিগাতলায়।
আসলাম মিয়া বলেন, ‘সকাল আটটায় আসছি। প্রায় অর্ধেক ভাঙা শেষ। আরও দেড় দুই ঘণ্টা লাগতে পারে। এহানে ২০-২৫ কেজি রড হইতে পারে। ৭০০-৮০০ টাকায় বেচা যাইব।’
৩২ নম্বরের বাড়িটির ধ্বংসস্তূপ থেকেই লোহালক্কড় কিনতে ভিড় করছেন ভাঙারি ব্যবসায়ীরাও। ভাঙারি ব্যবসায়ী শিকদার আলী এখানে এসেছেন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫০ কেজি রড ও কিছু ভাঙা টিন, কাচ, প্লাস্টিক এসব কিনেছেন। রডের মানভেদে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে কিনছেন বলেও জানান তিনি।
ভেঙে-কেটে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আসা নিম্নআয়ের লোকজনের পাশাপাশি আজও উৎসুক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। তাঁদের বেশির ভাগই নিজ নিজ মুঠোফোনে ছবি কিংবা ভিডিও ধারণে ব্যস্ত ছিলেন। কেউ আবার ভিডিও কলে ওপাশে থাকা কোনো স্বজন বা বন্ধুকে বাড়িটির ধ্বংসস্তূপ দেখান।
গত বুধবার রাত ৮টা থেকে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র), ক্রেন ও বুলডোজার দিয়ে বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর ভাঙার কাজ বন্ধ থাকলেও দিনভর ওই বাড়ি ঘিরে ছিল বিক্ষুব্ধ ও উৎসুক জনতার ভিড়। গতকাল শুক্রবারও রড কাটা, স্টিলের কাঠামো নিয়ে যাওয়া ও উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বুধবার রাতে ধানমন্ডির ওই বাড়ি ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বুধবার রাতেই ক্রেন, এক্সকাভেটর এনে বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়। রাতে যুক্ত হয় একটি বুলডোজার। গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত নীল রঙের এক্সকাভেটর দিয়েই ভাঙার কাজ করা হয়।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর শুরুর পর বুধবার রাতে খুলনার ‘শেখ বাড়ি’তে ভাঙচুরের প্রথম খবর আসে। এরপর কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িতে হামলা হয়। এরপর গত দুই দিনে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কমপক্ষে ৩৩টি বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ পরিবারের সদস্যদের অন্তত অর্ধশত ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের আটটি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া