চলমান সংবাদ

পুলিশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ: সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ

পুলিশের দুর্নীতির বিভিন্ন খাত চিহ্নিত করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পুলিশ সংস্কার কমিশন একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ঘুষ গ্রহণ, চাঁদাবাজি, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাতের মতো দুর্নীতির ৯টি প্রধান খাত শনাক্ত করা হয়েছে।

গত শনিবার পুলিশ সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ১৫ জানুয়ারি জমা দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবেদনটির মধ্যে পুলিশ বাহিনীতে দুর্নীতির বিস্তার এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার লঘু দণ্ড ও ২৩ হাজার ৫৫০টি গুরুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

পুলিশে দুর্নীতির ৯টি খাত
প্রতিবেদনে পুলিশের মধ্যে ৫টি প্রধান দুর্নীতির খাত চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত দুর্নীতি হলো ঘুষ গ্রহণ এবং আর্থিক দুর্নীতি, যা সাধারণত থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) গ্রহণ থেকে শুরু করে গ্রেপ্তার, অভিযোগপত্র প্রস্তুত, এবং বিচারিক কার্যক্রমে হাজিরার সময় ঘটে থাকে।

দ্বিতীয় খাত হিসেবে রিমান্ডে আসামি নির্যাতন চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে আসামিদের নির্যাতন করে অর্থ আদায় একপ্রকার নিয়মে পরিণত হয়ে উঠেছে।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতি হলো নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য। বিশেষত কনস্টেবল নিয়োগে কয়েক লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে।

এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ভুয়া বা গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার বিষয়েও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ এর দুর্নীতিও একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

অফিসের বাইরের দুর্নীতির খাত
প্রতিবেদনে পুলিশ বাহিনীর বাইরের চারটি দুর্নীতির খাত উল্লেখ করা হয়েছে, যা রয়েছে সরকারের মূল কাঠামোর বাইরে। এর মধ্যে চাঁদাবাজি অন্যতম, যেখানে সড়ক ও মহাসড়কে পুলিশকে টাকা দিতে হয়। ফুটপাত ব্যবসা, বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায়, পুলিশ সদস্যদের চাঁদাবাজির আরেকটি বড় ক্ষেত্র।

অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত এবং অবৈধ মাদক, মানব পাচার, অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ। কিছু পুলিশ সদস্য অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের কার্যক্রমে সাহায্য করে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে। এ ছাড়া ক্রসফায়ার বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বলপূর্বক গুম বিষয়গুলোও সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

দুর্নীতি মোকাবিলায় সুপারিশ
পুলিশ সংস্কার কমিশন দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য দুটি প্রধান সুপারিশ করেছে:
১. সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশ কার্যক্রমের উপর নজরদারি বাড়ানো। ২. বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে ধীরে ধীরে পুলিশের দুর্নীতি নির্মূল করা, যাতে স্থানীয় জনগণ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন জানিয়েছেন, “এ সংস্কারের মাধ্যমে আমরা পুলিশ ও সাধারণ জনগণের সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছি, যাতে পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনগণের বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।”

এ প্রতিবেদন থেকে পরিষ্কার, পুলিশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় এসেছে, আর এটি সফল করতে প্রয়োজন সকলের অংশগ্রহণ।