চলমান সংবাদ

আদিবাসী শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা

-ফজলুল কবির মিন্টু

বাংলাদেশের আদিবাসী শ্রমজীবী জনগণের জীবনযাত্রা দীর্ঘকাল ধরে নানাবিধ আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বঞ্চনা, বৈষম্য এবং পশ্চাদপদতার শিকার। এসব মানুষ সমতল ও ৩ পার্বত্য জেলা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করলেও তাদের জীবন এবং জীবিকা আজো হুমকির সম্মুখীন। আদিবাসী শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের সুরক্ষা, ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরি।

আদিবাসী শ্রমজীবী মানুষদের জন্য প্রয়োজন এমন একটি পরিবেশ যেখানে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে এবং তাদের পেশার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। তাদের কৃষিকাজ, হস্তশিল্প, এবং অন্যান্য স্থানীয় পণ্য উৎপাদন ব্যবস্থায় ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি তাদের সবচেয়ে মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত। এই প্রেক্ষাপটে, মধ্যস্বত্বভোগী এবং সিন্ডিকেটের বাজার নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া অত্যাবশ্যক, যা আদিবাসী শ্রমিকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

একইভাবে, অপার সম্ভাবনাময় ট্যুরিজম শিল্পের উন্নয়ন এবং উপযুক্ত অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে, আদিবাসী শ্রমজীবী মানুষদের জন্য অর্থনৈতিক সুফল সৃষ্টি করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে অবকাঠামোর অভাব এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই ট্যুরিজম শিল্পের সঠিক উন্নয়ন এবং স্থানীয় শ্রমিকদের সুরক্ষিত কর্মসংস্থান তৈরি করা জরুরি।

৩ পার্বত্য জেলায় ভৌগলিক ও পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে আদিবাসী শ্রমজীবী মানুষরা বাস্তুচ্যূত হয়ে পড়ছে, যা তাদের জীবিকা ও নিরাপত্তা সংকটে ফেলছে। এই অঞ্চলে শিল্পায়ন ও পরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে তাদের জীবনমান উন্নয়ন করতে হবে। এছাড়া, আদিবাসী নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।

একইভাবে, সমতলে কর্মরত আদিবাসী শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত আবাসন সুবিধা, সামাজিক সন্ত্রাস থেকে নিরাপত্তা, এবং স্বীকৃত উৎসবের ছুটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেসব শ্রমিকদের জন্য উৎসবের সময়ে অবকাশ ও ছুটি দেয়া উচিত, যাতে তারা নিজেদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনের অংশ হতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে আদিবাসী শ্রমজীবী মানুষের জন্য একটি পৃথক উইং প্রতিষ্ঠা এবং তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, এবং উদ্যোক্তা সহায়তা প্রদান করা হলে তারা তাদের পেশায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হবে। এর মাধ্যমে আদিবাসী জনগণের জীবনযাত্রা এবং তাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে।

অবশেষে, আদিবাসী জনগণের ভূমি-অধিকার রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রের উচিত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাদের আভ্যন্তরীণ অভিবাসন ও দেশত্যাগের ঝুঁকি কমানো, যাতে তারা নিরাপদে এবং সম্মানের সাথে নিজেদের ভূমিতে বসবাস করতে পারে।

এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আদিবাসী শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা, অধিকার এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।

(লেখকঃ সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি)