জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন- সিপিবি সভাপতি
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মোঃ শাহ আলম বলেন, মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ দমবন্ধ অবস্থায় দিন যাপন করছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক। নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটছে না।
সিপিপি সভাপতি বলেন, দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র এখনো চলছে- বিরাজনীতিকরণের পায়তারা চলছে। সংস্কারের নামে নির্বাচন দিতে নানা তালবাহানা ষড়যন্ত্রের অংশ। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার দিকে এই সরকারের মনোযোগ জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচন ছাড়া, গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এই দম বন্ধ অবস্থায় অবসান ঘটবে না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে গতকাল ২৮ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৫টায় চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশে সিপিবি সভাপতি এসব কথা বলেন।
মব ভায়োলেন্স বন্ধ ও জনজীবনের সংকট নিরসন করা, দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসের কাজের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহার সভাপতিত্বে এবং জামাল উদ্দীনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শাহ আলম, সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মছি উদ দৌলা, রেখা চৌধুরী, কোতোয়ালী থানার সম্পাদক দেবাশীষ দেবু প্রমুখ
বক্তারা বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে এক বুক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে লড়াই করে স্বৈরাচার পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু ঐ বিগত সরকারের নীতি অব্যাহত থাকার কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমানো যাচ্ছে না। বহুল আলোচিত সিন্ডিকেট ভাঙ্গা যাচ্ছে না। শ্রমিকের জাতীয় ন্যূনতম মজুরির কোন খবর নেই। গ্রামের কৃষক ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না। ক্ষেতমজুরসহ সাধারণ মানুষের ৩৬৫ দিনের কাজের গ্যারান্টি নেই। শিক্ষা স্বাস্থ্যের দূরাবস্থা দূর হয়নি। সাধারণ মানুষের আয় কমে গেলেও জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। বড়লোকের উপরে বাড়তি কোন ভ্যাট ট্যাক্স নেই অথচ বিভিন্ন পণ্যের উপর ভ্যাট বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করে তোলা হচ্ছে। এরমধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে।
বক্তারা আরো বলেন, অগণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে নানা ধরনের অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তারা দেশকে আরও অশান্ত করতে চাইবে। শত শত মানুষের রক্তদানের মধ্য দিয়ে ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে যে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হলো, আজ ক্ষমতার দাপটে তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে চলেছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দাপট বেড়ে চলেছে। মানুষের গণতন্ত্রের আকাঙ্খা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস পার হলেও মানুষ এখনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না। দিন যত যাচ্ছে নানা ধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাহীনতা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এলাকার মানুষ মসজিদের মাইক ব্যবহার করে এসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হচ্ছে। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে দ্রুত জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার নির্বাচনের কথা শুনলেই নানা ধরনের যুক্তি, কুযুক্তি হাজির করছেন । তাই অতিসত্বর দরকার নির্বাচিত সরকার।
বক্তারা বলেন, আমূল পরিবর্তন ছাড়া মুক্তি নেই। এই আমূল পরিবর্তনের জন্য সংস্কার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। তাই সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনের কাল বিলম্ব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই বক্তারা অতি দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানান। সন্ত্রাসী, মব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।