শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ ও স্বচ্ছতা বাড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে : শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা

ঢাকা, ১ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ ও খাতের স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য আমাদের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও কিছু কারখানা শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, যা মূলত আর্থিক অব্যবস্থাপনার কারণে। তৈরি পোশাক শিল্পে আর্থিক শৃঙ্খলার অভাব এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
আজ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজ (সিএমএস) এবং সেন্টার ফর লিগ্যাল রিসার্চ (সিএলআর) যৌথভাবে ‘শ্রম সংক্রান্ত বিরোধের বিকল্প নিষ্পত্তি (এডিআর)’ বিষয়ক এক সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
এই সংলাপে শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, নীতি-নির্ধারক এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও)-এর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সংলাপে বাংলাদেশে শ্রম বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এডিআর ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং এর সম্ভাব্য সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
এনএসইউ’র স্কুল অফ হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস এর ডিন ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম বাংলাদেশের শ্রম আদালতে ২১ হাজারেরও বেশি মামলার জটের কথা তুলে ধরেন, যার ৭৫ শতাংশ নির্ধারিত সময়সীমার বাইরে চলে গেছে।
তিনি বলেন, ‘এডিআর ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়ন আদালতের মামলার চাপ কমাতে, আইনি ব্যয় হ্রাস করতে এবং বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সহায়ক হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক নাফিজ আহমেদ বলেছেন, এডিআর পদ্ধতি স্বল্প ব্যয়, দ্রুত নিষ্পত্তি এবং নমনীয়তা নিশ্চিত করলেও এর সাফল্য মূলত পক্ষগুলোর স্বেচ্ছা সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনগত কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি সুগঠিত এডিআর ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে।’
এসআইপিজি এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো আম্বাসাডর মোহাম্মদ সুফিউর রহমান উল্লেখ করেন, আইএলও-এর ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত চলমান মামলার বিষয়ে সতর্ক করেন, যা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, ‘শ্রম সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অবস্থান রক্ষায় এডিআর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান জানান সরকার নীতিগতভাবে একটি সালিসি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী সপ্তাহে এই উদ্যোগটি আইএলও-এর সঙ্গে আলোচনা করব, যাতে এটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়।’
আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. তুওমো পোটাইনেন বলেন, এডিআর ব্যবস্থাকে সফল করতে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘শুধু আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়। একটি কার্যকর শ্রম আদালত, দক্ষ এডিআর প্ল্যাটফর্ম এবং শক্তিশালী শ্রম মন্ত্রণালয় দরকার, যাতে সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়।
এনএসইউ’র কোষাধ্যক্ষ ও উপ-উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আবদুর রব খান জানান এনএসইউ শ্রম বিরোধ নিষ্পত্তির গবেষণা শক্তিশালী করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটি কার্যকর এডিআর ব্যবস্থা গড়ে তুললে আদালতের চাপ কমবে এবং একটি ন্যায়সঙ্গত ও স্থিতিশীল শ্রম পরিবেশ তৈরি হবে।’
এনএসইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী নীতিগত সংস্কার এবং শ্রম বিরোধ নিষ্পত্তিতে কার্যকর পরিবর্তন আনতে একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, এই ধরনের সংলাপ একটি দক্ষ ও ন্যায়সঙ্গত এডিআর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই যাত্রায় অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশেষ করে লিবারেল আর্টস উইং এবং সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে, যেখানে গবেষণা-ভিত্তিক সমাধান এবং তথ্যনির্ভর নীতি প্রণয়নকে উৎসাহিত করা হবে।’
এনএসইউ’র রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজ (সিএমএস)-এর সমন্বয়ক ড. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।