জাতীয় নাগরিক পার্টিতে বিভক্তি, হাসনাত আব্দুল্লাহর সেনাবাহিনী নিয়ে মন্তব্যের পর সৃষ্টি হচ্ছে চাপ
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর এক ফেসবুক পোস্টের পর দলের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে দলের অন্যতম নেতা সারজিস আলমের প্রকাশিত বক্তব্যে দেখা গেছে, তিনি হাসনাত আব্দুল্লাহর সাথে একমত নন। এছাড়া, দলটির অন্যান্য নেতারাও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে এমন বক্তব্যের প্রতি প্রশ্ন তুলছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, ক্যান্টনমেন্টে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের পরিকল্পনা চলছে। তার এই বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। পরদিন শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়। সেইসব বিক্ষোভে হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানানো হয় এবং সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের সমালোচনা করা হয়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে এসেছে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া। বিএনপিসহ বেশ কিছু দল আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ না করে, গণ-অভ্যুত্থানে জড়িত নেতাদের বিচার দাবি করছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দল আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহর মন্তব্যের পর, দেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। তার বক্তব্যে সেনাবাহিনীকে প্রশ্নের মুখে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচনী বিষয় নিয়ে পুনরায় বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এনসিপি’র অন্যান্য নেতারা হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যে বিরোধিতা করেছেন। দলের নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সিলেটে একটি অনুষ্ঠানে ওই বক্তব্যকে শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে উল্লেখ করেছেন। এই পরিস্থিতি থেকে ধারণা করা হচ্ছে, এনসিপি সম্ভবত এখন চাপের মুখে রয়েছে।
রোববার দুপুরে, এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলম ফেসবুকে একটি পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি দাবি করেন, ১১ই মার্চ ঢাকার সেনানিবাসে সেনাপ্রধানের সাথে আলোচনায় তিনি উপস্থিত ছিলেন, এবং সেখানে সেনাপ্রধান আওয়ামী লীগের রাজনীতি বা নির্বাচনের বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দেননি, শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, হাসনাত আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, সেনাপ্রধানের মন্তব্যের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেছেন এবং অভিযোগ করেন যে, সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে চাইছে। তবে, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মন্তব্য করছেন যে, এটি দেশের রাজনীতিতে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি জাতীয় নাগরিক পার্টির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।