চলমান সংবাদ

ইয়াংওয়ান চেয়ারম্যান কিহাক সাং পেলেন বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব

বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানে অসামান্য অবদান রাখায় কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের শিল্প খাতের বিকাশ ও বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক আয়ে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এ সম্মানে ভূষিত করা হয়। একইসাথে বিনিয়োগে বিশেষ অবদানের জন্য ‘এক্সিলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়েছে চার কোম্পানিকে। গতকাল (বুধবার) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদানের পাশাপাশি উদ্ভাবনে ফ্যাব্রিক লাগবে লিমিটেড, বিদেশি বিনিয়োগ ক্যাটাগরিতে বিকাশ, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস ও ওয়ালটনকে এক্সেলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়। তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের ‘অগ্রদূত’ কিহাক সাং সম্মাননার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত ও কৃতজ্ঞ।’ কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদানের ধারণাটি প্রথম কয়েক সপ্তাহ আগে চীনের হাইনানে আলোচনা করা হয়েছিল।

জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব এবং কোরিয়ান নাগরিক বান কি–মুন, বিওএও ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে এক বৈঠকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন– কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য বাংলাদেশের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, যিনি এই দেশকে তার হৃদয়ে ধারণ করেন এবং বাংলাদেশকে কোরিয়ান ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি পরিচিত নাম করে তুলেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত কর্মকর্তাদের কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেন।

সম্মানসূচক নাগরিকত্বের মাধ্যমে কিহাক সাং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, ফাদার রিচার্ড মারিনো এবং গর্ডন গ্রিনিজের মতো নির্বাচিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে যোগ দিলেন, দেশের সকল মানুষ যাদেরকে তাদের অতি আপন মনে করে।

কিহাক সাং ৮০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রথমবারের মত বাংলাদেশে আসেন। সে সময় বাংলাদেশের পোশাকশিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম বিদেশি বিনিয়োগকারী। চট্টগ্রামে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি এদেশে বিনিয়োগ এবং তৈরি পোশাক খাতে কার্যক্রম শুরু করেন। তখন থেকেই দেশের অর্থনীতিতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশের শিল্প খাতের বিকাশ ও বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান, বৈদেশিক আয়ে রয়েছে তার বড় অবদান। চট্টগ্রাম ইপিজেডের বৃহত্তম কারখানা ইয়ংওয়ান কর্পোরেশন ছাড়াও আনোয়ারায় তিনি গড়ে তুলেছেন কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা বা কেইপিজেড। সেখানে তার ইয়াংওয়ানের ৪৮টি কারখানা রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি অন্তত ৭২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যানুসারে ইয়াংওয়ান করপোরেশন গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৮৬ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ৮০ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক।

ঢাকায় চলমান চারদিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের অংশ হিসেবে কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ এসে চট্টগ্রামের কোরীয় ইপিজেড ঘুরে দেখেন। এর পেছনে মূল ভূমিকা রাখেন ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং।

কোরিয়ান বিনিয়োগকারীরা গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীর উদ্দিন, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।