পরিবর্তনের স্বপ্ন কি ব্যর্থতায় রূপ নিচ্ছে? -ফজলুল কবির মিন্টু
দেশে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাব, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও নেতৃত্বের অভাব মিলেমিশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে। এমন দুটি ঘটনা সম্প্রতি চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিকে ঘিরে জনমনে এক গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
আইনজীবীদের মনোনয়নপত্র নিতে বাধা – একটি অশুভ নজির
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা বাধার মুখে পড়েন। সভাপতি প্রার্থী আবদুর রশিদ এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ফখরুদ্দিন চৌধুরীসহ চারজন লিখিত অভিযোগে জানান, সমিতির পাঠাগার থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গেলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, সেখানে কিছু বহিরাগত উপস্থিত ছিল, এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের জানিয়েও কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি।
আবদুর রশিদ বলেন, “চট্টগ্রাম বারের ইতিহাসে এ রকম ঘটনা কখনো ঘটেনি। এটি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
এই ঘটনা শুধু একটি নির্বাচনকে ঘিরে বাধা নয় বরং এর মাধ্যমে আমরা প্রত্যক্ষ করছি—অশুভ রাজনৈতিক প্রভাব কীভাবে স্বাধীন পেশাগত প্ল্যাটফর্মগুলোতেও প্রভাব বিস্তার করছে।
সাংবাদিক ইউনিয়নের অফিস দখল – মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হুমকি
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের নবনির্বাচিত সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর একটি ফেসবুক পোস্টে জানা যায়, তাদের অফিস কে বা কারা তালা লাগিয়ে দখলে রেখেছে। নির্বাচন হয়ে গেছে, বৈধভাবে একটি কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, অথচ এখনো তাদের অফিসে ঢোকার অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি।
এ নিয়ে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছে, এখন তারা কার্যকর কোনো অগ্রগতির অপেক্ষায় আছেন।
এই ঘটনা আবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়—গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আজ কতটা অনিরাপদ ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের প্রশ্ন
এই দুইটি ঘটনা একটি বড় বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে: দেশের কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিবর্তন আসলেও পরিস্থিতির কোনো মৌলিক উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে না। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা নেতৃত্বের মানোন্নয়ন হয়নি বলেই জনমনে এক গভীর হতাশা তৈরি হয়েছে।
মব ভায়োলেন্স ও দলীয় প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড দেশের প্রতিটি স্তরে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। যে স্বপ্ন নিয়ে সাধারণ মানুষ, এমনকি তরুণ প্রজন্ম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল, সেই স্বপ্ন আজ ভেঙে পড়ার উপক্রম।
“যে লাউ সে কদু” – একটি বেদনাদায়ক অভিব্যক্তি
আজকে অনেকেই বলছেন, “যে লাউ সে কদু”। এ কথাটি যেন বাস্তবতাকে তুলে ধরছে—পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু তার মানে কিংবা ফলাফল আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
শেখ হাসিনার পরিবর্তে ড. ইউনূস এলেও যদি প্রশাসন ও নেতৃত্বের গুণগত পরিবর্তন না আসে, তাহলে জনগণের জীবনে কী আসে যায়?
উপসংহার: সঠিক নেতৃত্বের অভাবই কি মূল সংকট?
এখনো সময় আছে। দেশের এই পরিস্থিতিকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক পরিপক্বতা, সঠিক নেতৃত্ব এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। না হলে, ৫ আগস্টের গণজাগরণের যে স্বপ্ন ছিল, তা কেবল ইতিহাসের আরেকটি ‘অসফল বিপ্লব’ হয়েই থেকে যাবে।
(লেখকঃ সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি)