এক যুগ পর ঢাকা ইসলামাবাদ সচিব পর্যায়ের বৈঠক কাল
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের দেড় দশক পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বলা যায় এক ধরনের স্থবিরই ছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক স্বাভাবিকের দিকে যাওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। অন্তর্বর্তী সরকারকে শুরুতেই সমর্থন জানিয়ে সহযোগিতার বার্তা দেয়ে দেশটি। গত আট মাসে স্থবির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পাকিস্তান বিশেষ মনোযোগ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালোচ। কাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক হবে। প্রায় এক যুগের বিরতিতে এ বৈঠক হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, কাল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বৈঠকে নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন।
এদিকে আগামী রবিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফর এবং এদিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে এটি কিছুটা পেছাচ্ছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘উনি (ইসহাক) যে আসবেন এটা চূড়ান্ত হয়েছে। এ মাসের শেষের দিকে হবে।’ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের সব দিক নিয়েই দুই বৈঠকে কথাবার্তা হবে বলে জানান উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের সব কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দুজনেরই সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
জানা গেছে, দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে নানা বিষয়ের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আকাশপথে সংযুক্তি, প্রতিরক্ষা, কৃষি খাতে সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পেতে পারে। সাংস্কৃতিক বিনিময়ের লক্ষ্যে একটি বিশেষায়িত কর্মসূচির প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে পাকিস্তানকে। এর আগে দুই দেশের সবশেষ সচিব পর্যায়ের বৈঠকটি ২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে হয়েছিল। ফলে ওই বৈঠকের ধারাববাহিকতায় প্রস্তাবিত কোনো সমঝোতা বা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এর মধ্যে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। ভিসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিরও ইঙ্গিত আছে। পাকিস্তানের একটি কম খরচের (লো কস্ট) বিমান সংস্থা ফ্লাই জিন্নাহ বাংলাদেশে যাত্রী পরিবহন শুরুর অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানকে উড়োজাহাজ চলাচলের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। এখন পাকিস্তানের বিমান পরিচালনা সংস্থাটি জিএসএ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি গত ১৫ বছরে বেশ সীমিত হয়ে পড়ে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। ২০২৩-২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানি ছিল মাত্র ৬ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। আর পাকিস্তান থেকে আমদানি ছিল ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার।