পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ: কঠিন হলেও সম্ভব, বলছে সরকার
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সক্রিয় হয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে পাচার করা অর্থের একটি বড় অংশ জব্দ করা সম্ভব হতে পারে। এজন্য বিদেশি আইনি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং কয়েকটি সম্পদ যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথাবার্তাও চলছে।
গত ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় গভর্নর বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে চিঠি দিচ্ছি, বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দিচ্ছি। এই প্রক্রিয়ায় ছয় মাসের মধ্যে বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দ করা হবে।’’
তবে এখন পর্যন্ত পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বড় কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। সিঙ্গাপুর থেকে ২০১২-১৩ সালে প্রায় এক মিলিয়ন ডলার ফেরত আনা ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো উদাহরণ নেই।
‘আড়াই-তিন লাখ কোটি টাকা পাচার’
গভর্নর জানান, শুধুমাত্র চট্টগ্রামের একটি বড় গ্রুপই ব্যাংক খাত থেকে এক থেকে দেড় লাখ কোটি টাকা নিয়েছে। দেশের বড় বড় গ্রুপগুলো মিলে পাচার করেছে আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা বলে তার ধারণা।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও জানিয়েছেন, ‘‘চলতি বছরের মধ্যেই পাচার হওয়া অর্থের কিছু অংশ ফেরত আনা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা চলছে।’’
আইনি জটিলতা বড় বাধা
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর এক কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে তারা মন্তব্য করতে চান না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হাসান খান বলেন, ‘‘আমরা পুরোপুরি অন্ধকারে আছি। গভর্নর মহোদয়ের কাছে নিশ্চয়ই তথ্য রয়েছে।’’
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১২টি দেশে ৭১টি মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৭টির জবাব এসেছে, তবে তাতে কেবল তথ্য রয়েছে, অর্থ ফেরতের প্রতিশ্রুতি নেই।
জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম বলেন, ‘‘অর্থ পাচার প্রমাণ করতে বাংলাদেশের আদালতের রায় থাকতে হবে। তারপর বিদেশি আদালতে সেই রায় গ্রহণযোগ্য কি না, তা দেখা হবে। প্রতিটি দেশের নিয়ম ভিন্ন।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগে। বিদেশে আইনজীবী নিয়োগ করতে খরচও হয়। তার পরও কাজটি অসম্ভব নয়।’’
বিদেশে বিনিয়োগের বৈধতা বড় চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক অর্থ বিদেশে বাড়ি-গাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা সেই দেশের দৃষ্টিতে বৈধ। ফলে তা ফেরত আনা কঠিন। কোনো কোনো দেশ আবার বিনিয়োগ বাড়াতে সেই অর্থের বৈধতা দিয়েছে।
যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘‘যে অর্থ পাচার হয়েছে সেটি বৈধ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হলে সেটি ফেরত আনা কঠিন হয়ে পড়ে।’’
ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা: টিআইবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক আইনি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ ভালো উদ্যোগ, তবে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ অনেক সময় যারা পাচারে সহায়তা করে তারাই ফেরতের কাজেও জড়িত থাকে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যদি সরকার আন্তরিকভাবে চায়, তাহলে অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। গভর্নর ও উপদেষ্টা যেভাবে বলছেন, যদি সত্যি এ বছর কিছু অর্থ জব্দ করা যায়, তবে তা হবে বড় সাফল্য।’