শীর্ষ খবর:
চলমান সংবাদ

জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় শ্রমিক নিহতের ঘটনায় স্কপের মানববন্ধন: নিরাপত্তা প্রটোকল ও ক্ষতিপূরণ দাবি

 

গত ১৩ এপ্রিল জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় লিফটের তার ছিঁড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এর উদ্যোগে আজ সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
স্কপ-এর যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আবসারের সভাপতিত্বে এবং জাহিদ উদ্দিন শাহিনের সঞ্চালনায় আয়োজিত উক্ত মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার, বিএলএফ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হক শিমুল, টিউসি’র কেন্দ্রীয় সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু,  ফ্রী ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস-এর রিজওয়ানুর রহমান খান, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট  মোঃ ইমরান হোসেন, বিএলএফ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি নূরুল আবছার তৌহিদ, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা মোঃ সোহাগ, বেসরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মো: মিজান, জাহাজভাঙা শ্রমিক নেতা মোঃ আলী, বিএমএসএফ নেতা মনিরুল ইসলাম, নারী নেত্রী নাজমা আক্তার, বিএলএফ যুব কমিটির সভাপতি জাবেদ চৌধুরি, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার কার্যকরী সভাপতি আবদুল হালিম এবং রেল শ্রমিক দল নেতা মাহফুজুর রহমান বাবু।
প্রধান অতিথি এ এম নাজিম উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত দুই শ্রমিকের পরিবারকে শ্রম আইন এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর কনভেনশন ১২১ অনুসারে আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় এর আগেও একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষকে কখনো জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি, ফলে এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের প্রতি এধরনের অবহেলা ভবিষ্যতে আর মেনে নেয়া হবে না। প্রতিটি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এবং প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
মানববন্ধনে অন্যান্য বক্তারা বলেন, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ নিরূপণে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্তকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জিপিএইচ ইস্পাতের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। তারা দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করে একটি কারেক্টিভ অ্যাকশন প্লান প্রণয়নের দাবি জানান।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের রিরোলিং ও স্টিল মিলগুলোতে বর্তমানে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকরা কাজ করছেন। তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মান অনুসারে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে রিরোলিং ও স্টিল মিলগুলোর জন্য একটি পৃথক সেফটি প্রটোকল তৈরির আহ্বান জানান।
এছাড়া সমাবেশে অবিলম্বে শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতিটি স্টিল ও রিরোলিং মিল-এ সেফটি কমিটি গঠন এবং গ্রুপবীমা চালুর দাবি জানানো হয়।
বক্তারা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এ সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া বা পরিদর্শন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। তারা জানতে চান, সংশ্লিষ্ট দপ্তর দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে কি না, করলে কী ফলাফল এসেছে এবং সেই অনুযায়ী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না?
বক্তারা আরও বলেন, “সমগ্র রিরোলিং ও স্টিল খাত আজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। উৎপাদনের নামে শ্রমিকদের জীবনের বিনিময়ে মুনাফা অর্জন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই সেক্টরে সুনির্দিষ্ট ও বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা নীতিমালা তৈরি না হলে ভবিষ্যতে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে বলে মানববন্ধনে অভিমত ব্যক্ত করা হয়।