চলমান সংবাদ

নারীদের জন্য ৩০০ সংসদীয় আসনের সুপারিশ: নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার হাতে হস্তান্তর

নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও আইনসভায় সরাসরি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনের জন্য একটি সাধারণ ও একটি সংরক্ষিত নারী আসনের প্রস্তাব করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। এতে মোট সংসদীয় আসনের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬০০-তে। সরাসরি ভোটের মাধ্যমে উভয় ধরনের আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাবও করেছে কমিশন।

শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে কমিশনের প্রতিবেদন তুলে দেওয়া হয়। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বিস্তারিত সুপারিশ তুলে ধরেন।

শিরীন পারভীন হক বলেন, “জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ৩০০ আসন আর যথেষ্ট নয়। আমরা যদি সত্যি চাই নারীরা আইনসভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুক, তাহলে এই পরিবর্তন জরুরি। অনেকেই বলছেন ৬০০ চেয়ার বসানো যাবে না সংসদ ভবনে—কিন্তু সেটি বড় সমস্যা নয়। প্রয়োজন হলে ভাঁজ করা চেয়ারও ব্যবহার করা যেতে পারে।”

কমিশন মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই এই গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব। প্রধান উপদেষ্টাও তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো দ্রুত কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই উদ্যোগ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারা বিশ্বের নারীদের জন্য এক দৃষ্টান্ত হতে পারে। এটা জাতীয় দলিলের মতো করে ছাপাতে হবে, যেন এটি সকলের নাগালে থাকে এবং অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়।”

কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা তাদের সুপারিশ তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছে—তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য প্রাসঙ্গিক, এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বপ্ন ও প্রত্যাশাভিত্তিক।

কমিশনের ১৫ দফা সুপারিশে সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার—এই তিনটি মূল স্তম্ভকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় উন্নয়ন, নারী ও কন্যাশিশুর সুরক্ষা, প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, প্রযুক্তি ও শিক্ষায় দক্ষতা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন, নিরাপদ অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নারীর ভূমিকা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

কমিশন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৪৩টি বৈঠক ও ৩৯টি পরামর্শ সভা করেছে। এতে নারী অধিকারকর্মী, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাহীন সুলতান, ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, কল্পনা আক্তার, হালিদা হানুম আক্তার, সুমাইয়া ইসলাম, নিরুপা দেওয়ান, ফেরদৌসী সুলতানা ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিশিতা জামান নিহা।

কমিশন বিশ্বাস করে, এই উদ্যোগ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং নারীর ক্ষমতায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।