বিজ্ঞান ভাবনা (৫৬): প্রসঙ্গ রবীন্দ্র সঙ্গীত – বিজন সাহা
পরিচয় কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন
মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক,
আমি তোমাদেরই লোক
রবীন্দ্রনাথ আজীবন মানুষের কথা লিখেছেন, মানুষের সাথেই থেকেছেন। তাঁর সাহিত্যের এক বিরাট অংশ জুড়ে আছে সাধারণ মানুষের কথা – তা সে কাবুলিওয়ালাই হোক আর পোস্টমাস্টার গল্পের রতনই হোক। এরকম অসংখ্য প্রান্তিক মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাঁর লেখায় নিজেদের মহিমায়। তিনি শুধু এদের নিয়ে লিখেনই নাই এদের থেকে নিয়েছেন প্রচুর। কত গান আর সুর যে এসেছে গ্রাম বাংলার মানুষের কাছ থেকে। তাছাড়া তাঁর প্রেম, প্রকৃতি – এসব তো সেই গ্রাম বাংলারই স্তব যেখানে বাস করে সাধারণ মানুষ। তারপরেও তিনি কীভাবে যেন আটকে গেছেন সমাজের উঁচু মহলে, ধনীদের বিশাল মন্দিরে যেমন ঈশ্বর বন্দী হয়ে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় ঠিক সেভাবে।
রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। এর আগেও বহু নামীদামী শিল্পী অনুমোদন পাননি তাঁর গান গাওয়ার। ইতিহাস বলে এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ নিজে বেশ নমনীয় ছিলেন। সুর অবিকৃত রেখে শিল্পী নিজের মত করে গাইতেই পারেন, কারণ গানে কথা, সুর ছাড়াও গায়কী বলে একটা ব্যাপার আছে। কিন্তু রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে অনেকেই মাছিমারা কেরানীর মত স্বরলিপিকেই শুধু গুরুত্ব দিয়েছেন। এটা ভালো না মন্দ সেটা বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন, তবে এর ফলে শিক্ষিত মানুষের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ প্রচণ্ড জনপ্রিয় হলেও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি অধরাই থেকে গেছেন।
সোভিয়েত আমলে প্রায়ই ক্যাসিকাল মিউজিকের লং প্লে কিনতাম। মোজার্ট, বেঠোভেন, চাইকোভস্কি আরও অনেকের। অধিকাংশই ছিল সোভিয়েত বা জার্মান শিল্পীদের। অনেক সময়ই হাতে পড়ত বিশ্ববিখ্যাত পিয়ানোবাদকদের ইম্প্রভাইজেশন। মিউজিক্যাল ইম্প্রোভাইজেশন হল সঙ্গীতের একটি অংশের তাৎক্ষণিক সৃজনশীল ক্রিয়াকলাপ, যা আবেগ এবং যন্ত্রের কৌশল এবং সেইসাথে অন্যান্য সঙ্গীতজ্ঞদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ার সাথে পারফরম্যান্সকে একত্রিত করে। কখনও কখনও ইম্প্রোভাইজেশনে বাদ্যযন্ত্রের ধারণাগুলি স্বতঃস্ফূর্ত হয়, কিন্তু শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং অন্যান্য অনেক ধরনের সঙ্গীতের কর্ড পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে এটা করা যেতে পারে। এর মানে হচ্ছে সঙ্গীতে এসব পরিবর্তন নতুন কিছু নয়। গানের ক্ষেত্রে একে হয়তো গায়কী বলা যায়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে রবীন্দ্রনাথ নিজে শুধু বাংলা বা ভারতীয় নয়, ইউরোপিয়ান মিউজিক ব্যবহার করেও গানের সুর করেছেন। সে অর্থে তিনি কখনই এক্সপেরিমেন্ট করার বিরোধী ছিলেন না।
কনজারভেটিজম থাকা ভালো তবে সেটাকে হতে হবে হেলদি বা সুস্থ্য কনজারভেটিজম। আমরা প্রায়ই বলি যুগের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করার কথা। সেটাও মাথায় রাখতে হবে। সব কিছুর পরে আমরা যা করি সবই পণ্য। পণ্য যেমন উৎপাদন করা হয় বিক্রির জন্য, ঠিক একই ভাবে শিল্প সাহিত্য এসব তৈরি করা হয় বিক্রির জন্য – মানে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য। এমন কোন লেখক বা শিল্পী নেই যিনি চান না তাঁর কথা, তাঁর কাজ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। এই ধরুন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। সময়ের সাথে সাথে বাদ্যযন্ত্র উন্নত হয়েছে, বিভিন্ন দেশের সাথে বেড়েছে যোগাযোগ। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পন্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ জাকির হোসেনসহ অনেকেই ভারতীয় মিউজিক বিভিন্ন দেশে নিয়ে গেছেন। এতে শুধু সেসব দেশের নয়, ভারতীয় সঙ্গীতও লাভবান হয়েছে। এখন বিশ্বনন্দিত ক্যারিওগ্রাফ বরিস এইফম্যান রাখমানিনভের মিউজিক ব্যবহার করে রক অপেরা করছেন। এটাও একটা এক্সপেরিমেন্ট। আমি বলছি না যে এখানে সব ধরণের এক্সপেরিমেন্টকেই সহজে গ্রহণ করা হয়, অনেক ক্ষেত্রে প্রচুর সমালোচনা হয় যেমন চাইকোভস্কির উপরে কিরিল সেরেব্র্যান্নিকভের ফিল্ম। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা এগুলো কেউ আইন করে বন্ধ করে না। আমার ধারণা কোন জিনিস টিকবে কি টিকবে না সেটা নির্ভর করে মানুষ সেটাকে গ্রহণ করে কি করে না তার উপর। এখানেও মার্কেট ইকনমি। এতদিন পরেও তো তাই পুশকিন, শেক্সপীয়ার, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বিভিন্ন দেশে খুবই জনপ্রিয়। কত লোকই তো কত গান গায়, রবীন্দ্র সঙ্গীত তো কম শিল্পী গায় না, অনেকের নাম কেউ মনেই রাখে না আবার হেমন্ত, দেবব্রত, সুবিনয়, কনিকা, সুচিত্রা, বন্যা – এদের মানুষ বার বার শোনে। অনেক সময় অনেক কিছু এড়িয়ে যাওয়া অনেক বেশি ভালো ফলাফল নিয়ে আসে। তাই কে কিভাবে গাইল না গাইল সেটা নিয়ে হইচই না করে এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
আমি গান গাই। রাস্তায়, মাঠে ঘাটে। নিজের অজান্তেই গুণ গুণ করে গেয়ে উঠি যদিও জানি গানটা আমার ঠিক আসে না। ছাত্রজীবনে আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইতাম – আসলে তখন গাওয়ার মানুষ তেমন না থাকায় যাকে বলে আওয়াজ তুলতাম। এখন এমনকি ঘরোয়া আড্ডায় কেউ বললেও হয়তো সাহস করে গাইব না। কারণ জানি আর যাই হোক অন্যকে গান শোনানো আমার কম্ম নয়। এর পরেও যদি আমাকে কেউ গাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তা আমাকে প্রতিবাদী করবে।
আসলে আজকের লেখাটা কয়েকদিন আগে হিরো আলমের রবীন্দ্র সঙ্গীতকে কেন্দ্র করে। হিরো আলমের গানের একটা ক্লিপ কার সৌজন্যে যেন ফেসবুকে এলো। এটা ঠিক চাইলেই সেটা অভারলুক করে চলে যেতে পারতাম যেটা ফেসবুকের অধিকাংশ লেখার ক্ষেত্রেই করি, তারপরেও কি মনে করে যেন দুলাইন শুনলাম। না শুনলেই ভাল হত। মনে হয়েছে ও গানটা আপলোড না করলেই ভাল করত কেননা আমরা তো নিজেদের সবল দিকটাই অন্যদের দেখাতে চাই, দুর্বলতা নয়। তারপরেও মনে হয়নি ওর গান করার অধিকার কেঁড়ে নিতে হবে। তাহলে? জানি না বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা কতটুকু প্রযোজ্য তবে আমাদের কিন্তু পাবলিক প্লেসে পায়খানা পেচ্ছাব করার অধিকার নেই। এর মানে এই নয় আমাদের আইন করে পায়খানা পেচ্ছাব করা বন্ধ করে দিতে হবে। বলতে হবে ওটা তুমি টয়লেটে গিয়ে কর। এখানেও তাই। গান তো কথা, সুর অনেক কিছুর সমন্বয়। সেখানে কবি আর সুরকারের নামও থাকে, জড়িয়ে থাকে তাদের মান সম্মান। ফলে আমার গাওয়া যদি কবি ও সুরকারের অধিকার খর্ব করে, তাদের মান হানি করে আমাকে অবশ্যই সেটা ভাবতে হবে। সেদিক থেকে বিচার করলে হিরো আলমকে গান গাইবার অধিকার থেকে বঞ্চিত না করে সেটা পাবলিক প্লেসে সে করতে পারবে কি না বা সেই গান সে অনলাইনে বা অফলাইনে সম্প্রচার করতে পারবে কি না সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে অধিকার আর দায়িত্ব পাশাপাশি চলে।
ইদানিং অনেকেই বিভিন্ন ভাবে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে। যদি স্বরলিপি ঠিক রেখে ভিন্ন আরেঞ্জমেন্টে, যেমন আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে কেউ গান করে সেটা রবীন্দ্র সঙ্গীত বলা যেতে পারে, কিন্তু কেউ যদি সুর বদলায় তবে সেটা আর রবীন্দ্র সঙ্গীত থাকে না, এখানে রবীন্দ্রনাথ শুধু গীতিকার হিসেবে রয়ে যান। এসব এক্সপেরিমেন্ট অনেক সময় শুনতে খারাপ লাগে না। তার চেয়েও বড় কথা এভাবে যদি রবীন্দ্রনাথের কথাগুলো তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে ক্ষতি কি? এসব এক্সপেরিমেন্ট অধিকাংশ ক্ষেত্রেই করা হয় রবীন্দ্রনাথের গানের কথাগুলোর জন্য, কারণ তা এখনও প্রচণ্ড রকম আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক। এসব কবির প্রতি ভালবাসা থেকেই করা হয়। তবে কখনও কখনও যতটা না কবির প্রতি তারচেয়ে বেশি যারা রবীন্দ্রনাথকে সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে চায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপও এসব কাজ করা হয়। আমার ধারণা এগুলো কবিকে প্রাসঙ্গিক করে তোলে, তার প্রতি সাধারণের আগ্রহ বাড়ায়। তবে আমাদের দেশে রবীন্দ্র বিরোধী শক্তিশালী ধারা কিন্তু অন্য দিক থেকে আসে। এরা হিরো আলম নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে গায়কও নয়, এরা বুদ্ধিজীবী। এসব বুদ্ধিজীবী ইচ্ছাকৃত ভাবে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ্যে প্রচার করে। এসব অপপ্রচারের অন্যতম নজরুলের লেখা চুরি করে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার লাভ যদিও সে সময় নজরুলের বয়স ছিল মাত্রই ১৪ বছর বা রবীন্দ্রনাথের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ইত্যাদি। এসব অপপ্রচার করা হয় ইচ্ছাকৃত ভাবে, কোন রকম তথ্য প্রমাণ ছাড়াই। যদি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিকৃত তথ্য প্রকাশের অপরাধে কাউকে যদি শো কস করা হয় তবে তা প্রথমে এসব অপপ্রচার যারা করে তাদের বিরুদ্ধে করা উচিৎ।
আমার মনে পড়ে কয়েক বছর আগের কথা। আমরা মস্কোয় একটা সংগঠন করি আর সেখানে পয়লা বৈশাখ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। একবার এক শিল্পী বলল “দাদা, এখানে যারা আসে তারা তো রবীন্দ্র সঙ্গীত পছন্দ করে না। তাহলে কি সেটা গাওয়ার দরকার আছে?” আমি বল্লাম,”দেখ, তুমি যদি একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত গাও এরা জানবে যে এ ধরণের গান আছে। এদের মধ্যে হয়তো কেউ কেউ পরে নিজের থেকেই শুনবে। আমাদের উদ্দেশ্য লোকজনকে বিভিন্ন বিষয়ে জানানো। সেটা গ্রহণ করবে কি করবে না, ওরা নিজেরাই ঠিক করবে।” হিরো আলমও তাই। তার মধ্য দিয়ে হয়তো তার চারপাশের মানুষ এই গানের কথা জানতে পারবে। রবীন্দ্রনাথের গান শুধু সুর নয়, তার সহজ, সরল অপূর্ব কথা। সে কথা আমাদেরই কথা। আমি যখন গুনগুন করে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাই, আসলে সুরের জন্য নয়, ওই কথাগুলোর জন্যই গাই, ওই কথা দিয়ে নিজের সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা প্রকাশ করি। আমার বিশ্বাস ওই কথাগুলো হিরো আলমের না বুঝবার কারণ নেই। সে হয়তো ওই কথাগুলোর জন্যই গানটি গেয়েছে। ধরুন কোন কৃষক যদি মাঠে কাজ করতে করতে কোন রবীন্দ্র সঙ্গীত গায় তাহলে কি তাকেও মুচলেকা দিতে হবে? বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে রবীন্দ্র বিরোধী প্রচার অনেক। হিরো আলমের ঘটনা মানুষকে আরও বিভ্রান্ত করবে। হয়তো বা রবীন্দ্রনাথ তথা জাতীয় সঙ্গীতকে বিতর্কিত করার জন্যই কোন মহল সুপরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। অনেক আগে কালিকা প্রসাদের একটা ইন্টারভিউ দেখেছিলাম। উনি বাউল শেখ আব্দুল করিমকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তাঁর গান যখন অন্যেরা ভুল সুরে বা তাঁর নাম উল্লেখ না করে গায় তখন তাঁর খারাপ লাগে কি না। বাউল উত্তর দিয়েছিলেন যেভাবেই হোক গানের কথাগুলি মানুষের কাছে পৌঁছুলেই তিনি খুশি। রবীন্দ্র সঙ্গীত শুধু সুর নয় রবীন্দ্র সঙ্গীত কথা, জীবন দর্শন। সেটা ভুললেও আমাদের চলবে না।
তারপরেও কথা থেকে যায়। কপি রাইট বলে একটা ব্যাপার আছে। এটা এক ধরণের মালিকানা। আপনার জমির ফসল যেমন যে খুশি সেই এসে কেটে নিয়ে যেতে পারে না, আপনার লেখা, এটা ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি, তেমনি যে খুশি সে ইচ্ছে মত ব্যবহার করতে পারে না। আজকাল সারা বিশ্ব এ ব্যাপারে সজাগ। এমনকি আমি যখন কোন রিসার্চ পেপার লিখি, সেখানে যদি আমার নিজের আগের কোন পেপারের ব্যাপক ব্যবহার থাকে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে, নকল করার প্রশ্ন তুলে নতুন পেপার রিজেক্ট করতে পারে। তাই যদি কেউ মনে করেন নিজের সুরে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইবেন, সেক্ষেত্রে গানের কথা ব্যবহারের জন্য লেখক বা তাঁর ট্রাস্টির অনুমতি লাগবে। সেটা না করলে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নিতেই পারেন। অনেকে বলেন কপি রাইটের সময় তো পার হয়ে গেছে। না, সেটা হয় না। তাহলে আপনি চাইলেই তো দু চারটে শব্দ পরিবর্তন করে শেক্সপীয়ারের কোন লেখা নিজের নামে চালাতে পারতেন। আমাদের সমস্যা হল অনেক ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে আমরা কপি রাইট আইন ভঙ্গ করি। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় মহাশ্মশানের পরিবর্তে গোরস্থান লেখা তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ। তাই বলব আপনার অধিকার অন্যের অধিকার দ্বারা সীমিত। অন্যের অধিকারকে সম্মান করুন, শুধু তখনই নিজের অধিকার রক্ষা করতে পারবেন। তাই আমি যেমন হিরো আলমের রবীন্দ্র সঙ্গীত বা নজরুল গীতি না গাওয়ার মুচলেকা নেয়ার বিরুদ্ধে তেমনি বেসুরে এসব গান গেয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশেরও বিরুদ্ধে। ব্যালেন্স রক্ষা করাটা এক্ষেত্রে খুবই জরুরি।
অনেক সময় মনে হয় আমরা যারা (অতি) রবীন্দ্রপ্রেমী তারাই বার বার কবিকে সাধারণ মানুষের লোক হতে দেইনি, দিচ্ছি না। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা, তাঁর আদর্শ যদি নির্বাচিত কিছু লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এ দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া যেত তাহলে সমাজ হয়তো আজ এতটা উগ্র হত না। রবীন্দ্রনাথ অনেক বড় মাপের মানুষ। তাঁকে চর্চা করুন তাহলেই হবে। তাঁকে রক্ষা করার দরকার নেই। তিনি নিজেকে নিজেই রক্ষা করতে পারবেন যদি আমরা সবাইকে নিজের নিজের মত করে রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করতে দিই। আসুন আমরা রবীন্দ্রনাথাকে ধরে না রেখে ধারণ করি।
গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, দুবনা
শিক্ষক, গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, মস্কো, রাশিয়া