বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক পাঞ্জাবি পরে চট্টগ্রাম ক্লাবে ঢুকা নিষেধ!! – স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বৃটিশদের তৈরি অপমানজনক নিয়মে চলে চট্টগ্রাম ক্লাব
চট্টগ্রাম ক্লাবে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক পাঞ্জাবি পরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাঞ্জাবি পরে ক্লাবে যাওয়ায় চট্টগ্রামের অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন সময়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অপমানে তারা আর কখনো ক্লাবে যাননি। এর মধ্যে কেউ কেউ প্রয়াত হয়েছেন। ক্লাব কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে রীতিমতো বিব্রত অনুষ্ঠান আয়োজকরাও। ব্রিটিশদের তৈরি অপমানজনক এই নিয়ম এখনো কীভাবে বহাল সেই প্রশ্ন সচেতন মহলের।
ক্লাবের সদস্য ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই নিয়ম বাতিল করা জরুরি। কিন্তু ক্লাব কর্তৃপক্ষের অভিমত ড্রেসকোড মেনেই ক্লাবে আসতে হবে এবং বাই-লস মেনেই ক্লাব পরিচালনা করতে হবে। এর বাহিরে যাবার সুযোগ নাই। এদিকে ক্লাব সংশিলষ্ট এবং চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ মনে করে নির্বাচিত কমিটি বাই-লসে যে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা সংশোধন আনতে পারে। বিভিন্ন সময়ে উভয়ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ইতিহাস আছে। ক্লাব কমিটি চাইলে একটি সভায় বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন নিয়ম বাতিল করতে পারে।
জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে সামাজিক ক্লাব হিসেবে ১৮৭৮ সালে চট্টগ্রাম ক্লাবের প্রতিষ্ঠা। সামাজিক সংগঠন হিসেবে ইউরোপিয়ানরা এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই ক্লাবে ইউরোপিয়ানরাই কেবল সদস্য হতে পারতেন। ফলে তাদের সংস্কৃতি ও আচারঘনিষ্ঠ নিয়মই চলত। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা বিতাড়িত হলে পাকিস্তানিরা নিয়ন্ত্রণ নেয়; কিন্তু সেখানেও বাঙালিদের সদস্য হওয়ার সুযোগ ছিল না। নিয়ম-কানুনেও পরিবর্তন আনেনি। তারা কাবুলি পরার কারণে পাঞ্জাবিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের পোশাক মনে করত। ফলে তারাও বাঙালির ইচ্ছা-আকাংক্ষার মূল্য দেয়নি।
ব্রিটিশদের বিতাড়ন এবং মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও ব্রিটিশদের অসভ্য নিয়ম ও ভোগবাদী মনোভাব থেকে বের হতে পারেনি দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম অভিজাত ক্লাবটি। বাঙালি সমাজ-সংস্কৃতি ও জীবনাচারকে উপেক্ষা করে এখনো লাটদের বানানো নিয়ম মানতে হয় ক্লাবের সদস্য ও আগত অতিথিদের, যা বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
জানা গেছে, ক্লাবের সদস্য এবং অতিথিদের নির্ধারিত ড্রেসকোড পরে ক্লাবে আসতে হয়। টি-শার্ট ও শার্টের সঙ্গে পরতে হবে ফরমাল সু বা ক্লাব নির্দেশিত স্যান্ডেল। তবে পাঞ্জাবি পরে প্রবেশ করতে পারবে না। ড্রেসকোড না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঐহিত্যবাহী চট্টগ্রাম ক্লাবের নির্দিষ্ট ড্রেসকোড থাকতেই পারে। কিন্তু বাঙালির সমাজ-সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নিয়ম থাকা উচিত নয়। ব্রিটিশদের নিয়ম কেন মানতে হবে স্বাধীন বাংলাদেশে? অনেক ক্লাবেই তাদের এধরনের নিয়ম বাতিল করে দেশীয় সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়েছে। এ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানকে যখন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয় তখন ক্লাব ড্রেসকোড মানতে বাধ্য করতে পারে না। টি-শার্ট পরে আসতে পারলে পাঞ্জাবি কেন পারবে না। ব্রিটিশ-পাকিস্তানের শাসন-শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ ৫০ বছর পেরিয়েছে; এখনো কেন তাদের সেই অসভ্য নিয়ম মানতে হবে; এ নিয়ম পরিবর্তন জরুরি। তারা আরও বলছেন, ব্রিটিশ আমলের অনেক আগে থেকেই পাঞ্জাবি বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক। বর্তমানেও বাঙালির অঘোষিত জাতীয় পোশাক পাঞ্জাবি। পহেলা বৈশাখ, ঈদ-পূজা, সামাজিক অনুষ্ঠান ও জানাজায় পাঞ্জাবি পরা হয়। এদেশের প্রধান পোশাক পরে ক্লাবে কেন যেতে পারবে না।
এদিকে চট্টগ্রাম ক্লাব লিমিটেড মদের বার থেকে বিভিন্ন জায়গায় মদ সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে মদ খেয়ে ভ্যাট না দেওয়ার অভিযোগও আছে।
# ১৭/০৮/২০২২, চট্টগ্রাম #