আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসের চেতনা: বাংলাদেশে শ্রম আইনের প্রয়োগ (শেষ পর্ব)-ড. মুহাম্মদ শাহীন চৌধুরী
বিদ্যমান শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতাঃ–
বিদ্যমান শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শ্রম আইনের সীমিত প্রয়োগ, শ্রমিক ও মজুরীর সংজ্ঞা, প্রসূতিকালীন ছুটি ও সুবিধাদির ক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধী বিধান [২(৩৪) ও ৪৮ ধারা], শোভন কাজের মানদন্ড, চা বাগানে নিয়োজিত শ্রমিকসহ কতিপয় ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক বিধান, অপর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, একই বিষয়ে আইনের বিভিন্ন ধারা ও অধ্যায়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রভৃতি।
১. শ্রমিকের সংজ্ঞাঃ শ্রম আইনে শ্রমিকের যে সংজ্ঞা তা খুবই ব্যাপক ও বিস্তৃত, আবার একই সঙ্গে শর্তারোপ করে তাকে সীমিত করা হয়েছে; যেমন, বলা হয়েছে- কোনও ব্যক্তি প্রধানত প্রশাসনিক, তদারকিমূলক কিংবা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে নিয়োজিত থাকলে শ্রমিকের সংজ্ঞার আওতায় পড়বেন না। তবে এইক্ষেত্রে কোন মানদণ্ড না দেওয়ায় উক্ত সংজ্ঞাকে নিয়োগকারীর পক্ষে অপব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে যিনি শ্রমিকের সংজ্ঞার আওতায় পড়বেন না তার নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলী কোন্ আইনবলে নির্ধারিত হবে সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও বিধান শ্রম আইন বা বিধিমালায় উল্লেখ নেই। কোন প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও কাজ করেন; তাদের চাকরীর শর্তাবলী ও অধিকারের ক্ষেত্রে কোনও বিধান বা নির্দেশনা বিদ্যমান শ্রম আইন দেয়নি। যেমন, শ্রম আইনে এটা বলা যৌক্তিক ছিল যে প্রতিষ্ঠান বা কারখানায় কর্মরত যারা শ্রম আইনের আওতায় পড়বেন না তাদের বিষয় দেখভাল হবে সংশ্লিষ্ট সার্ভিস রুলস দ্বারা, যা শ্রমমানের আলোকে প্রণয়ন বাধ্যতামূলক।
এখানে মালয়েশিয়ার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। তাদের আইনের বিধান হলো- মজুরীর বিনিময়ে কর্মে নিয়োজিত সকলেই কর্মচারী (এমপ্লয়ী) এবং তারা সার্ভিস বেনিফিটসহ চাকরিজনিত সকল সুবিধা পাবেন। তবে যে সকল কর্মচারীর মাসিক মজুরী ১,৫০০ (পনের শ’) রিঙ্গিত বা তার বেশি তারা কর্মচারী বটে, তবে শ্রমিক বলে গণ্য হবেন না। এই threshold এর বাইরে কর্মরতদের চাকরীর শর্তাবলী ও সুবিধাসমূহ শ্রম আইনের আলোকে সার্ভিস রুলস দ্বারা নির্ধারণ করা যেতে পারে।
২. মজুরীর সংজ্ঞা ও নূন্যতম মজুরীঃ আমাদের শ্রম আইনের ২(৪৫) ও ১২০ ধারায় মজুরীর যে সংজ্ঞা রয়েছে তাকে বাস্তবতার নিরিখে পরিমার্জনের সুযোগ রয়েছে। নূন্যতম মজুরী নির্ধারণের বর্তমান ব্যবস্থা শ্রমিকের নায্য সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। চুড়ান্ত মজুরী কাঠামো নির্ধারণে সরকারের অবাধ এখতিয়ারকে সীমিত করে মজুরী বোর্ডের সুপারিশকে বেশী গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে সরকারী গেজেটে মজুরী কাঠামো ঘোষিত হলেও অনেক সেক্টরে শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরী প্রদান করা হচ্ছেনা।
৩. প্রসূতিকালীন সুবিধাঃ নারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে প্রসূতিকালীন মজুরীসহ ছুটি এবং সুবিধা কীভাবে নির্ণীত হবে তার জন্য আরও সুস্পষ্ট বিধান দরকার [২(৩৪) ও ৪৮ ধারা]। এইক্ষেত্রে একটি বৈষম্যের বিষয় হলো- ২০১৮ সনের সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে যে, কোন নারী শ্রমিক নির্ধারিত প্রসূতিকালীন ছুটিতে যাওয়ার নির্ধারিত তারিখের পূর্বে গর্ভপাত হলে তিনি প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাবেন না। সংশোধিত ধারায় বলা হয়েছে, ‘তবে তিনি স্বাস্থ্যগত কারণে ছুটির প্রয়োজন হইলে তিনি তাহা ভোগ করিতে পারিবেন।’ (৪৭ ধারা)। কিন্তু উক্ত বিধানে এটি বলা হয়নি যে এই ‘স্বাস্থ্যগত কারণে ছুটি’ কি মজুরীসহ হবে না-কি বিনা মজুরীতে হবে। বাস্তবতা হলো উক্ত ছুটিকে নৈমিত্তিক ছুটি (১১৫ ধারা), অসুস্থতা-ছুটি (১১৬ ধারা) এবং মজুরীসহ বাৎসরিক ছুটির (১১৭ ধারা) সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। যা আইনের ৪৭ ধারার উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এবং সংশ্লিষ্ট নারী শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রসূতিকালীন ছুটির ক্ষেত্রে হাসপাতালের ও চিকিৎসা ব্যয়সহ (জটিলতাভেদে) আরও কিছু সুবিধাদি যুক্ত করা দরকার।
৪. কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানিঃ কর্মক্ষেত্রে নারীর যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকারের সুস্পষ্ট বিধান দিয়ে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০০৯ সনে যে নির্দেশনা এক রীট পিটিশনের রায়ে দিয়েছেন তার দৃশ্যমান বাস্তবায়ন দীর্ঘ দেড় দশকেও হয়নি। বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত ‘কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানী সংক্রান্ত’ আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুস্বাক্ষর করেনি। অবশ্য ২০২২ সালের সংশোধনীর মাধ্যমে শ্রম বিধিমালায় (২০১৫) পৃথক ৩৬১ক বিধি যুক্ত করে মহিলা শ্রমিকদের যৌন হয়রানি রোধে বিস্তারিত আইনী কাঠামো প্রদান করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিকে একেক দেশ একেকভাবে মোকাবিলা করেছে; যেমন- শ্রীলংকা তাদের দণ্ডবিধিতে পৃথক ধারা যুক্ত করেছে; এতে সংজ্ঞা ও শাস্তির বিধান রয়েছে। আবার ভারত ২০১৩ সনে পৃথক আইন করেছে।
৫. শ্রম বিধিমালাঃ শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও তা কতিপয় ক্ষেত্রে উপকারের চেয়ে বেশি জটিলতা সৃষ্টি করেছে। আর শ্রম বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, এইক্ষেত্রে লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি বিশাল বিধিমালা নয়। বরং বিভিন্ন বিষয়ে ছোট ছোট বিধিমালা তৈরি এবং সময়ের প্রয়োজনে তার সংশোধন-পরিমার্জন। শ্রম আইনের বিধানমতে যা করা সম্ভব; বিধিমালা করার ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা দফতরের। মে দিবসের অন্যতম কারণ ছিলো শ্রমিকের নায্য কর্মঘন্টা। বিধিমালায় কর্মঘন্টার বিষয়ে বিস্তারিত ও পরিষ্কার নির্দেশনা থাকাটা বাঞ্চনীয় ছিলো।
৬. সব শ্রমিকের নিরাপদ ও শোভন কর্মক্ষেত্রে কাজ করার অধিকার আছে। শোভন কাজের (ডিসেন্ট ওয়ার্ক) মানদণ্ড হলো- যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার পরিবার-পরিজন নিয়ে চলার মতো উপযুক্ত মজুরী বা আয়, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও পেশাগত স্বাস্থ্য, নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলী নিয়ে কথা বলা ও দর-কষাকষির সুযোগ, এবং সামাজিক সুরক্ষা (চাকরির অবসানজনিত সুবিধাদিসহ)। বাংলাদেশের শ্রম আইনে শোভন কাজের মানদন্ডের অনেক কিছু না থাকলেও আংশিক প্রয়োগ আছে। আইনত: শ্রমকিরা প্রভিডেন্ড ফান্ড, গ্রুপ ইনস্যুরেন্স, চিকিৎসা সুবিধা, দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নূন্যতম মজুরী, ইত্যাদি সুবিধা ও সুরক্ষা পেলেও এগুলো শোভন কাজের উপযুক্ত মানদণ্ড হতে অনেক পিছিয়ে আছে। এজন্য শ্রম আইনের প্রকৃত সংষ্কার প্রয়োজন।
৭. ট্রেড ইউনিয়নঃ ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম শ্রমিক আন্দোলনকে আইনী কাঠামোর মধ্যে রেখে শ্রমিকদের আইনগত অধিকার আদায়ের জন্য সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করে। শিল্প কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনসহ ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এখনও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে যা অবশ্যই আইএলও কনভেনশন ৮৭-তে উল্লেখিত অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন চর্চার অধিকারের লংঘন। অভিযোগ রয়েছে, শ্রমিকদের ইউনিয়ন নিবন্ধন না পেলেও মালিকপক্ষ নিজেদের লোকজন দিয়ে আবেদন করে ইউনিয়ন নিবন্ধন পেয়ে যায়। এছাড়া বিদেশি অর্থায়নে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন নিবন্ধনের অভিযোগ পাওয়া যায়। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর দেশে ইউনিয়ন নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়লেও কারখানায় প্রকৃত ইউনিয়ন বাড়ছেনা। সে কারণে নিবন্ধনের পর অধিকাংশ ইউনিয়ন নিষ্ক্রিয় থাকছে। কারখানায় প্রকৃত শ্রমিকদের সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালাতে না পারার কারণে শ্রমিক অধিকার ও যৌথ দর-কষাকষিতে কোনো উন্নতি হচ্ছে না।
৮. শ্রমিকদের জন্য পেনশনঃ শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য কর্মক্ষেত্রে পেনশন চালু করা সময়ের দাবি। দেখা যাচ্ছে কোনও শ্রমিক ২০/২২ বছর কিংবা আরও বেশি সময় চাকরি করছেন। কিন্তু অবসরসহ যে কোনও কারণে চাকরির অবসান হলে তিনি শ্রমিক নন, কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ‘সার্ভিস রুলস’ নাই- এমন নানান অজুহাতে চাকরিজনিত কোনও সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। এই জন্য বেসরকারী খাতের শ্রমিকদের সুবিধার্থে কর্মক্ষেত্রে পেনশন-পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন। অবশ্য সরকারীভাবে ২০২৩ সালে সার্বজনীন পেনশন স্কীম (UPS) চালু করা হয়েছে যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য যথাক্রমে ‘প্রগতি’ ও ‘সুরক্ষা’ নামে দু’টো স্কীম রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের মালিক-শ্রমিক ‘প্রগতি’ স্কীমে আইন নির্ধারিত হারে মাসিক হিসাবে (টাকা) জমা দেবেন। একজন শ্রমিক বা কর্মচারীর নির্দিষ্ট পেনশন নম্বর থাকবে; এবং মেয়াদ শেষে সুদসহ এককালীন কিংবা কিস্তিতে তা ফেরৎ পাবেন। এখানে লক্ষ্যনীয়, সার্বজনীন পেনশন স্কীমে শ্রমিক নিজেও একজন প্রদায়ক, মাসিক কিস্তিতে টাকা জমা করবে। এটা অনেকটা ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়ামের মতো। আইএলও কনভেনশন নং ১০২ ও ১২৮ অনুযায়ী কোন শ্রমিক পেনশন সুবিধা পাওয়ার মূল ভিত্তি হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করা বা অবদান রাখা। অতএব শ্রমিকদের মাসিক কিস্তি জমা দেয়ার শর্তটি আইএলও কনভেনশনের সাথে পুরোপুরি সংগতিপূর্ণ নয়।
৯. শ্রম আইনের সংষ্কারঃ ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন সহজীকরণ করার পাশাপাশি শ্রম অধিকার উন্নয়নে বিদেশি চাপ বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, বিষয়টি আইনকানুনের মধ্যে নিয়ে আসতে শুরু করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। শ্রম আইন ২০০৬ এর সর্বশেষ সংশোধনীর বিলটি বিগত ০২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে সংসদে পাশ হওয়ার পর মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে তিনি তা অধিকতর সংশোধনের (পড়ুন ধারা ২৯৪(১)) জন্য সংসদে ফেরত পাঠান। উক্ত সংশোধনীর পূর্বে আইএলও ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আহবানে সাড়া দিয়ে সরকার ২০২১ সালে আইএলও’ তে শ্রম আইন সংষ্কারের রোডম্যাপ ২০২১-২০২৬ জমা দিয়েছিলো। রোডম্যাপের ১ম বিষয় ছিলো শ্রম আইন সংশোধনী যার জন্য একটি রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। শ্রমিক সংগঠন সমুহ ও মালিকপক্ষ সহ বিভিন্ন অংশীজন তাদের সংশোধনী প্রস্তাব দিলেও সংসদে পাশকৃত চুড়ান্ত সংশোধনী আইনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বাদ পড়ে যায়। বর্তমান সংসদে বাদ পড়া প্রস্তাবগুলো পূণরায় বিবেচনার সুযোগ আছে। শ্রম আইনের সংশোধনের ক্ষেত্রে শ্রমখাতের বাস্তবতা ও প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে শিল্পস্বার্থ ও শ্রমিকের মৌলিক অধিকার যথাযথ সমন্বয় করে পুনর্গঠন করতে হবে। শ্রম বিষয়ক একজন গবেষক হিসেবে আমার মত হলো আইনের দৃশ্যমান অস্পষ্টতা, বিভিন্ন অধ্যায়ের স্ব-বিরোধিতা, আইনে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক বিধান প্রভৃতি সংশোধনপূর্বক এর পূর্ণ বাস্তবায়নে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ, সময় ও সম্পদ নিয়োজিত করা দরকার। আইনের সংশোধনকে কোনভাবেই শ্রম শোষণ ও শ্রমমানের অবনমনের উপলক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা সমীচিন হবেনা।
উপসংহারঃ–
আজকের আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি হলো শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের নিরলস পরিশ্রম। হাজার বছর ধরে শ্রমজীবী মানুষের রক্ত-ঘামে যে মানব সভ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, তা থেকে সেই শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীই থেকেছে উপেক্ষিত। আজকের উন্নত-সমৃদ্ধ পৃথিবীর কারিগর এসব অবহেলিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত, অধিকার বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে নিরন্তর সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন হলে এবং দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন চর্চার পরিবেশ তৈরী হলে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়বে। দেশে শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন বিদ্যমান শ্রম আইন সমূহের সুষ্ঠ বাস্তবায়ন। যারা শ্রম আইন লংঘন করছে এবং শোভন কাজের পরিবেশ নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং তাদেরকে জবাবদিহীতার আওতায় আনা সময়ের অন্যতম দাবী। আন্তর্জাতিক শ্রমমান অনুযায়ী শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নগুলো যে মানের অধিকার ভোগ করে, সে অনুযায়ী বাংলাদেশের শ্রম আইনের সংশোধন করা জরুরী। বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোর (ইপিজেড) শ্রমিকেরা যাতে পুরোদমে ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়নের চর্চা থাকলে মজুরীবৃদ্ধির আন্দোলন সহ বিভিন্ন শ্রম আন্দোলনকে ঘিরে অতীতের মতো অনাকাংখিত ঘটনা সমূহ ভবিষ্যতে এড়ানো সম্ভব। কর্মক্ষেত্রে শ্রমমান উন্নত করতে হলে মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের দায়িত্ববান হতে হবে।
(লেখকঃ অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)