সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হলো গত ৫ আগস্ট, যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংশোধনের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন এক পর্যায়ে সমগ্র জাতির আন্দোলনে পরিণত হয় এবং এর ফলাফল স্বরূপ, টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার পদত্যাগ ঘটলো। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও কোটা সংস্কারের দাবিটি দীর্ঘদিন যাবত উপেক্ষিত ছিল। এই অগ্রাহ্যের কারণে ছাত্রসমাজের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে এবং অবশেষে তা একটি দুর্বার আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্রদের এই আন্দোলনে দেশের সকল পেশার মানুষ সমর্থন যোগায়, যা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে। এই আন্দোলন দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে এবং এক সময়ে পুরো দেশকে গ্রাস করে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের মাধ্যমে সাধারণ ছাত্র-জনতার বিজয় অর্জিত হলেও পরবর্তী সময়ের ঘটনাপ্রবাহ অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিভিন্ন থানায় হামলা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ—এই ধরনের সহিংস কার্যক্রম জাতির জন্য কোনোমতেই মঙ্গলজনক নয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে এবং দেশে এখন কোনো কার্যকরী সরকার নেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও দিক নির্দেশনার অভাবে কাজ করতে পারছে না। এই শূন্যতা কাজে লাগিয়ে অপশক্তি বিভিন্নভাবে ফায়দা লুটতে চাইছে। এই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের একমাত্র পথ হলো দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা, যা রাষ্ট্রের সকল স্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে। অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুততার সাথে গঠন করে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। একই সাথে সকল রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের একযোগে কাজ করতে হবে, যেন দেশ দ্রুত সংকটমুক্ত হয়। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, জাতির কল্যাণই সর্বোচ্চ। ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির মঙ্গলবিরোধী কাজ করা থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে। দেশের মানুষ একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশে জীবনযাপন করতে চায়। এই শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। পরিশেষে, ছাত্র আন্দোলনের সফলতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, গণতন্ত্র এবং জনমতের প্রতিফলনই একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের ভিত্তি। এই ভিত্তি ধরে রাখতে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আশা করি, বাংলাদেশ আবারও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থিতিশীলতা অর্জন করবে এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে অগ্রসর হবে।