১৫ই আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের আশপাশে আওয়ামী লীগ সমর্থক সন্দেহে অনেকের ওপর হামলা হয়েছে।
১৫ই আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের আশপাশে আওয়ামী লীগ সমর্থক সন্দেহে অনেকের ওপর হামলা হয়েছে।

“শেখ হাসিনার বাপরে ফুল দিতে যান নাকি? তাহলে কিন্তু মাইর একটাও নিচে পড়বে না…লকডাউন, কারফিউ– সব সময়েই চলাচল করেছি, কিন্তু আজ যেমনটা ফেস করেছি, এটা এই ঢাকাতে কখনও ফেস করি নাই। করবো, সেটাও ভাবি নাই। পুলিশও কখনও এভাবে ব্যবহারের সাহস পায় নাই।”

১৫ই অগাস্ট বৃহস্পতিবার একথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট করেন আকিব জাভেদ। সেদিন সকালে তিনি ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে নাস্তা করতে গিয়েছিলেন। তখনই কয়েকজন লাঠি-সোঁটা নিয়ে এসে তাকে ওই কথা বলেন এবং যেতে বাধা দেন।

তার মতো আরও অনেকেই দিনভর ফেসবুকে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেগুলোর মাঝে একটিতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তিকে একদল লোক কান ধরে ওঠ-বস করাচ্ছেন।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজনকে প্রায় বিবস্ত্র করে উল্লাস করা হচ্ছে। সহিংসতা থেকে রেহাই পাননি নারীরাও।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে ১৫ই অগাস্ট ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারাদেশে যেসব সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, অনেকেই সেগুলোকে নিন্দনীয় বলছেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থক সন্দেহে একজনকে ঘিরে ধরলে পুলিশ তাকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে।
আওয়ামী লীগ সমর্থক সন্দেহে একজনকে ঘিরে ধরলে পুলিশ তাকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে।

‘গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের সাথে যায় না’

১৫ই অগাস্টকে ঘিরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যা হয়েছে, সেটি তাদের ‘উদ্দেশ্য’ ছিলনা বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।

শুক্রবার কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম গণমাধ্যমে বলেন, “কোনও নির্দিষ্ট স্থানকে কেন্দ্র করে কোনও কর্মসূচি ছিল, বিষয়টা এমন না।”

“আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম, ১৫ই অগাস্টকে কেন্দ্র করে ঢাকায় একটি প্রতিবিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমাদের অবস্থান ছিল।”

কিন্তু তারপরও ৩২ নম্বরে যা হয়েছে সেটির সাথে কারা জড়িত ছিল?

এমন প্রশ্নে মি. আলম বলেন, “ওই শিক্ষার্থীরা কোন মতাদর্শ ধারণ করে, আমরা জানি না। আমরা তাদেরকে সজ্ঞায়িত করতে পারবো না।”

কোন সমন্বয়ক বা সহ-সমন্বয়ক ওইসব ঘটনার সাথে জড়িত থাকলে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে, একথা উল্লেখ করে মি. আলম বলেন দেশে অনেক ‘ভুয়া সমন্বয়ক’ তৈরি হয়েছে।

“ধানমন্ডি ৩২সহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে, যা গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের সাথে যায় না। একজনকে কান ধরে ওঠ-বস করানো হচ্ছে, একজনকে বিবস্ত্র করা হয়েছে। অসংখ্য মানুষের ফোন চেক করা হচ্ছে। আমার মায়ের বয়সী একজনের গায়ে হাত তোলা হয়েছে।”

এইসব ঘটনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যা যা করার প্রয়োজন, একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মি.আলম।

তিনি আরও বলেছেন যে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে কেউ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে তারা সেখানে ‘বাধা দিতে’ পারে না।

“যিনি অনুসরণযোগ্য না, তাকে বয়কট করতে পারি আমরা। কিন্তু ১৫ই অগাস্টে যারা ফুল নিয়ে গিয়েছিল, তাদের গায়ে হাত তোলার অধিকার কেউ দেয় নাই। আমরা কোনও অথরিটি না, আমরা একটি প্রেশার গ্রুপ। আমরা বলতে পারি, এইখানে দুর্নীতি হয়েছে, একে সরাতে হবে। কিন্তু আমরা সরিয়ে দিতে পারি না, সেই অথরিটি নাই আমাদের,” তিনি যোগ করেন।

তবে, ১৫ই অগাস্ট রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালন করা উচিত নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শুক্রবার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সারজিস আলম।
শুক্রবার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সারজিস আলম।

মানুষকে হেনস্থার দায় কাদের?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা মনে করছেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন’ করার জন্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ‘সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে’ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক ও তার আশপাশের এলাকায় গিয়েছিল।

অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ শুক্রবার (১৬ই আগস্ট) বিবিসি বাংলাকে বলেন, ১৫ই আগস্ট যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো ছিল ‘কালচারাল রিঅ্যাকশন’।

তিনি মনে করেন, গত ১৬ বছর যাবত মানুষের ওপর শোক চাপিয়ে দেবার প্রবণতা ছিল। সেজন্য মানুষ সেটিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি।

“এটা দ্বিতীয় পক্ষের কাজ, তৃতীয় পক্ষের কাজ; এরকম এখানে পিলো পাসিং-এর কোনও সুযোগ নাই এখানে। সবাই এটা স্বতস্ফূর্তভাবে করেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি.আবদুল্লাহ।

তিনি আরও মনে করেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বিদেশে বসে ‘আক্রমণাত্মক’ মন্তব্য করছিল।

তিনি দাবি করেন, মি. ওয়াজেদ-এর বক্তব্য মানুষ ‘স্বাভাবিকভাবে’ নিচ্ছিল না।

“উনি ইন্ডিয়ার হস্তক্ষেপ চাচ্ছেন, আবার এক ধরনের পাল্টা অভ্যুত্থানের কথা বলছেন,” বলেন মি,আবদুল্লাহ।

গত ১৪ই অগাস্ট রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় ভারতীয় সিনেমাের একটি গান ‘লুঙ্গি ডান্স’এর তালে একদল মানুষ নাচছে। এমন একটি ভিডিও গত দু’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে।

সে প্রসঙ্গেও কথা বলেন মি. আব্দুল্লাহ। তার মতে, “এটিকে আইনগতভাবে যদি কোনও বিচারের আওতায় নিয়ে আসা যায়, সেটা যদি রাষ্ট্র করতে চায়, করুক।”

১৫ই আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক ও তার আশপাশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফ থেকে কিছু করার সুযোগ ছিল কি?

বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে মি. আবদুল্লাহ বলেন, তারা বারবার ‘মানুষকে বারণ’ করেছেন।

“বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেহেতু আমাদের নিয়ন্ত্রণে, মানে সবাই আমাদের ছোট ভাই, কোনও না কোনোভাবে কানেক্টেড, তাই সেটাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করেছি। কিন্তু এই মুহূর্তে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কিছু হলে সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের কোনও উইং নাই।”

তিনিও সারজিস আলমের মতো বলেন, তারা যে কোন কিছুর ডাক দেয়ার পরে সেখানে দল-মত নির্বিশেষে সবাই চলে আসে।

“এর মাঝে দুইজন লুট করলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।”

সব বিশৃঙ্খলার দায়ভার ‘তাদের ওপর চাপানোর’ একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মি.আবদুল্লাহ।

“আমাদের দিকে আঙ্গুল তোলার আগে দেখেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে নাই। তারা তো পারতো, ধানমন্ডি ৩২-এ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বারবার করে বলা হয়েছে। আমরা আগেরদিন রাতে দেখেছি, রাস্তায় কোনও পুলিশ নাই। আমরা ওনাকে বারবার রিচ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু রিচ করতে পারিনি”, বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে শুক্রবার বিকেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেনকে বিবিসি বাংলার তরফ থেকে টেলিফোন করা হলেও তিনি সময় দিতে পারেননি।

পরে অবশ্য জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তাকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা করা হয়েছে।

ধানমন্ডি-৩২ এর সামনে রাস্তায় কয়েকজনকে মারধর করতে দেখা গেছে
ধানমন্ডি-৩২ এর সামনে রাস্তায় কয়েকজনকে মারধর করতে দেখা গেছে
আওয়ামী লীগ
সহিংসতার নিন্দা করেছেন অনেকে।

কেমন ছিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক?

বিবিসি’র সংবাদদাতারা ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে গিয়ে দেখেছেন, প্রায় সবার হাতে লাঠি ও পাইপ।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক ও তার আশেপাশে যারা জোরদার ও সতর্ক অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের অনেকের মাথায়ই জাতীয় পতাকা বাধা ছিল।

কাউকে সন্দেহ হলেই তারা জেরা করছিলো, মোবাইল ফোন ও সামাজিক মাধ্যমের অ্যাপে তল্লাশি চালিয়েছিল।

আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্টতা বা ১৫ই আগস্ট নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কোনো কর্মকাণ্ড পাওয়া গেছে, এমন কিছু মানুষকে রাস্তার বিপরীত পাশে অবস্থিত নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।

তাদের পরে ‘পুলিশের কাছে হস্তান্তর’ করা হবে বলে জানায় ওই অবস্থানকারীরা।

কয়েকজনকে মারধরও করতেও দেখা গেছে। সকাল থেকে ঘুরে-ফিরে এই দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছিল মিরপুর রোডসহ লাগোয়া অন্যান্য সড়ক ও গলিতে।

এসময় পথচারী বা সাধারণ মানুষদের কেউ ছবি তোলার চেষ্টা করলে তাদের দিকে তেড়ে আসছিলেন বিক্ষুব্ধরা। ছবি বা ভিডিও ধারণ না করার বিষয়টি মাইকিং করেও জানানো হয়।

পেশাগত কারণে সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে বা ভিডিও করলে তাদেরকেও বাধা দেওয়া হয়েছে।

ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের যে বাসভবনটিকে (যেটিকে পরবর্তীতে ‘বঙ্গবন্ধু জাদুঘর’ বানানো হয়েছিলো) ঘিরে এত কাণ্ডকারখানা, তার ঠিক সামনের সড়কটির দুই প্রান্ত থেকে ব্যারিকেড ও কাঁটাতার দিয়ে একরকম অবরুদ্ধ অবস্থায় রাখা রয়েছে। ভেতরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছিলেন।

এছাড়া, ওই স্থানে গতকাল পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি ছিল স্বল্প সংখ্যক।

এই সামগ্রিক অবস্থার জন্য অনেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দুষছেন। কারণ ১৫ই অগাস্টকে ঘিরে আওয়ামী লীগের তৎপরতা প্রতিহত করতে ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ পালন করছেন তারা।

তবে ধানমন্ডি ৩২-কে ঘিরে এমন অবস্থা তৈরি হতে পারে জেনেও কেন ওখানে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হল না, সেই প্রশ্নও করেন অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

৩২ নম্বরে যেতে দেয়া হয়নি কাউকে
৩২ নম্বরে যেতে দেয়া হয়নি কাউকে
গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করতে দেখা গেছে অবস্থানকারীদের
গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করতে দেখা গেছে অবস্থানকারীদের

নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া

শুরু থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ শীর্ষক প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘোষিত সব কর্মসূচিকে সাদরে গ্রহণ করছিল অজস্র মানুষ।

এই প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়কদের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে। মাসব্যাপী আন্দোলনে সারা দেশে অনেক সহিংস ঘটনার জন্ম হয় এবং লাশের সারিও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে।

সবমিলিয়ে এক পর্যায়ে এটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং গত পাঁচই অগাস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

ওইদিন থেকে কোনও থানায় কোনও পুলিশ না থাকায় দেশের আইনশৃঙ্খলা কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও স্বাভাবিকভাবে সবকিছু সামাল দেওয়া যাচ্ছিলো না।

ওইসময় শিক্ষার্থীসহ হাজারো তরুণ স্বপ্রণোদিত হয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, রাত জেগে পাড়া-মহল্লাতে পাহারা দেওয়াসহ অনেক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

এগুলোকে সবাই সেসময় ইতিবাচকভাবে দেখেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে পুলিশ স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরে আসার পরও অনেক স্থানে ছাত্র-জনতা দায়িত্ব হস্তান্তর করেনি। তারা গাড়ি তল্লাশি করার পাশাপাশি গাড়ির লাইসেন্স চেক করার দায়িত্বও নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলো।

তবে আজ আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “এখন আর ট্রাফিকের কাজ শিক্ষার্থীদের করার প্রয়োজন নাই। শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্পষ্ট বার্তা– আপনারা আর সড়কে থাকবেন না। এখন সময় এসেছে পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়ার।”

কিন্তু গত কয়েকদিনের এই সমস্ত ঘটনায় সাধারণ মানুষ বিরক্ত হয়ে পড়ছিলেন। সেই বিরক্তি আরও বেশি দানা বেঁধেছে গতকাল ১৫ই অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসকে ঘিরে ঘটা নানা ঘটনার পর।

১৫ই অগাস্ট- থমথমে ধানমন্ডি
১৫ই অগাস্ট- থমথমে ধানমন্ডি

গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলো দেখে হাসান মাহবুব নামক একজন লিখেছেন, “এর দায় সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে।”

আজম খান নামক একজন আবার, “তারা তাদের লোকজনকে ধানমন্ডি ৩২ এ যাইতে বললো। শুধু তা না ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটা জায়গাতেই তাদের সন্ত্রাসীরা অবস্থান নিয়েছিল। উদ্দেশ্য মানুষকে মারা, নির্যাতন করা, হয়রানি করা। ধরে ধরে ফোন চেক করলো। তারা নিজেরা লোক নামাইলো, কে কোন জায়গায় থাকবে সেটা ঠিক করে জনবল নিয়োগ করলো, ভিডিও-ছবি যাতে কেউ কোন সাংবাদিক না তুলতে পারে সেজন্য নির্দেশনা দিয়ে দিলো। সেই তারাই এখন এসবের নিন্দা করতেছে।”

এদিকে গতকাল সকাল থেকে এইসব ঘটনা ঘটলেও সারাদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনও বার্তা আসেনি।

বিকালের দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ও এই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি ফোন চেক করা ও নিরপরাধদের ওপর চড়াও হওয়ার নিন্দা জানিয়ে বলেন যে তাদের অভ্যুত্থান “ন্যায় ও নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত”।

মি. ইসলামের ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর একে একে অন্য সমন্বয়করাও এ নিয়ে কথা বলেন।

সমন্বয়কদের এমন আচরণেও অনেকে বিরক্ত হয়েছেন। আজম খানের ওই পোস্টেই খালেদ সাইফ নামক একজন মন্তব্য করেন, “সকাল থেকেই খবর হচ্ছিল মোবাইল চেক হচ্ছে। তখন ঘোষণাটা আসলে কিছুটা প্রাসঙ্গিক হতো। এখন সব শেষ হওয়ার পর ফালতু বিবৃতি দিচ্ছে।”

তিনি মনে করেন, “গত এক সপ্তাহে যা হল, বিশেষ করে আজকে (১৫ই অগাস্ট), অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অহিংস, প্রতিহিংসাবিহীন রাজনীতির পথটা বন্ধ হয়ে গেল। হয়ত চিরতরেই।”

তবে মানুষের এই সমস্ত নেতিবাচক মতামতকে “শ্রদ্ধা” জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়করা এবং নেতিবাচক মতামতের বিপরীতে পাল্টা যুক্তি দিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

# মরিয়ম সুলতানা, বিবিসি নিউজ বাংলা