চলমান সংবাদ

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা বিষয়ে পাশ্চাত্য ভূমিকা

-শেলী শাহাবুদ্দিন।

 

ভূমিকা। 

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচারে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ঘাতক আল-বদর সদস্য চৌধুরী মৈনুদ্দিনকে ব্রিটিশ সরকার রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন ১৯৭৩ সাল থেকে। লন্ডনে মুঈনুদ্দীন ভালো রুজি রোজগারের মধ্য দিয়ে বহু সংগঠনের নেতা হয়ে উঠেছে এবং ১৯৮৪ সাল থেকে সে একজন সম্মানিত ব্রিটিশ নাগরিক। অথচ পৃথিবী জানে যে ইংল্যান্ড একটি মহান গণতান্ত্রিক সভ্য দেশ। পৃথিবী মনে করে তারা যুদ্ধাপরাধ সমর্থন করে না।

একই ভাবে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আর এক যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামান খানকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছেন মহান যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

সম্প্রতি ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট চৌধুরী মৈনুদ্দিনের পক্ষে একটি ভয়াবহ রায় দিয়ে নিজেদের বিচার ব্যবস্থার পাশ্চাত্য রূপ প্রকাশ করেছেন (1)।

বিষয়টিকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই জটিল করা হয়েছে। বিলেতে জামাতে ইসলামের ব্যারিস্টারগণ দীর্ঘ সময় নিয়ে এমন চাতুর্য্যের সাথে বিষয়টিকে সাজিয়েছেন যে এই রায় পড়লে বাংলদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বদলে যায় বলেই মনে হবে। মনে হবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড যেই ঘটিয়ে থাকুক, মুঈনুদ্দীন এর ধারে কাছে ছিলোনা। সে একজন প্রভাবশালী সম্মানিত ব্রিটিশ নাগরিক ও মুসলিম নেতা।

সংক্ষেপে বিষয়বস্তু।   

শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নায়ক ছিল মঈনুদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামান খান। এরা দুজনেই ছিল গুপ্তহত্যা বাহিনী ‘আল- বদর’ দলের নেতা। এবং এই বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর আদলে।

২০১৯ সালের অক্টোবরে বিলেতের হোম অফিসের Commission for Countering Extremism একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে । ‘Challenging Hateful Extremism’ নামক সেই রিপোর্টে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে মুঈনুদ্দীনের নাম ছিল (১)।

মুঈনুদ্দীন এই রিপোর্ট চ্যালেঞ্জ করে বিলেতের বিভিন্ন আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পর্যায়ক্রমে মানহানির মামলা করে। নিম্ন আদালত থেকে আপিল আদালত অবধি বিলেতের সব আদালত মুঈনুদ্দীনের মামলা খারিজ করে দেয়।

কিন্তু এখন বিলেতের সুপ্রিম কোর্ট তার মামলা গ্রহণ করে একটি ঘোরতর বিতর্কিত রায় দিয়েছে (১)।

অর্থাৎ এর পর মুঈনুদ্দীনের ক্ষতিপূরণের আর্জি এবং হোম অফিসের রিপোর্ট বাতিলের আবেদনের শুনানি

বা বিচার হবে।

এই শুনানি বা বিচার বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার আদালতের জন্য, এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানের ও জামাতে ইসলামের যৌথ উদ্যোগে ঘটিত গণহত্যার বিচারের ও স্বীকৃতির যে আন্তর্জাতিক সম্ভাবনা, তার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।

ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কিছু উদাহরণ।

ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের এই রায় বিতর্কিত হওয়ার প্রধান কারণ দুইটি। প্রথম কারণ আসল বিচারের আগেই মুঈনুদ্দিনকে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে এমনভাবে বিলেতের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসাবে উপস্থিত করা হয়েছে যা পড়লে সাধারণ মানুষের মনে হবে এমন মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিশ্চয় একটি মিথ্যা।

রায়ের Factual Background অংশে প্রথম পর্য্যবেক্ষনটি নিচে উদ্ধৃত হলো।

  1. The claimant in these proceedings, Chowdhury Mueen-Uddin, was born in East Bengal, which then formed part of the state of Pakistan. Since the conclusion of the war of independence in December 1971, it has been the state of Bangladesh. He has lived in the United Kingdom since 1973, and has been a British citizen since 1984. He has held a number of prominent public and charitable positions in British society. He served as Secretary General of the Council of Mosques in the United Kingdom and Eire from 1984 to 1988 and helped to set up the Muslim Council of Great Britain. He was Deputy Director of the Islamic Foundation from 1995 to 2005. He was Director of Muslim Spiritual Care Provision in the National Health Service from 2005 to 2012. He has served as vice-chairman of the East London Mosque and the London Muslim Centre, as chairman of Tottenham Mosque and Islamic Community Centre, and as chairman of Muslim Aid (1).

এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরবর্তী কিছু অংশ পড়লে মনে হবে যে আল-বদর দূরে থাকুক, বাংলাদেশের জামাতে ইসলাম এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথে চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের কোনকালে কোন সম্পর্ক ছিলোনা। অর্থাৎ আসল বিচারের আগেই ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের চোখে মুঈনুদ্দীন নির্দোষ।

ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের এই রায় বিতর্কিত হওয়ার দ্বিতীয় অন্যতম কারণ, বিলেতের আদালতগুলি ঐতিহাসিক ভাবে অন্য দেশের আদালতের রায়ে হস্তক্ষেপ না করার প্রথা অনুসরণ করে। কিন্তু এবারের রায়ে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচার আদালতের রায়কে উপেক্ষা, অসম্মান, ও অবজ্ঞা করা হয়েছে। এই ধরণের হস্তক্ষেপ অন্য দেশের সার্বভৌমত্বের ওপরে হস্তক্ষেপের সমতুল্য।

ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা ইতিমধ্যেই মুঈনুদ্দীনের পক্ষ অবলম্বনের মতো পক্ষপাতিত্বপূর্ন (biased) বা সহানুভিতিশীল মন্তব্য করেছেন। তাই এই আদালতের কাছে ন্যায় বিচার আশা করা যায় কিনা তা সন্দেহজনক।

এই সন্দেহ সৃষ্টি করেছে রায়ের কিছু তথ্য। রায়ের ভূমিকার পরেই বিচারকগণ ‘প্রকৃত তথ্য’ নাম দিয়ে ‘2, Factual Background’ অংশে তাঁদের পর্য্যবেক্ষণগুলি দিয়েছেন। এইসব পর্য্যুবেক্ষন থেকে এখানে কিছু উদাহরণ দেয়া হলো।

উদাহরণ ১.

বিলেতের সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ের ভূমিকায় ৯ নম্বর পর্যবেক্ষণে লিখেছেন ‘১৬ ই ডিসেম্বরে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কাছে।‘

এখানে বিজ্ঞ বিচারকেরা যৌথ বাহিনীকে, অর্থাৎ বাংলাদেশের সরকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবজ্ঞা করেছেন, অথবা এই যুদ্ধের ইতিহাস তাঁরা জানেন না। অথচ তাঁরা এ বিষয়ে বিচার করবেন এবং রায় দেবেন।

উদাহরণ ২.

ইসলামী ছাত্র শিবির যে জামাতে ইসলামীর অংশ, সেকথা মুঈনুদ্দীন অস্বীকার করেছেন, এবং তিনি দাবি করেছেন যে তিনি বাংলাদেশে কোন সহিংসতায় জড়িত ছিলেন না। এই কথা মুঈনুদ্দিনের বক্তব্য উল্লেখ করে বিচারকেরা তাঁদের পরবর্তী ১০ নম্বর পর্যবেক্ষনে এমন কৌশলে লিখেছেন যাতে সাধারণ পাঠক তাকে আদালতের মত বলেই মনে করতে পারেন। রায়ের এই অংশ পড়ে আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচারে মুঈনুদ্দীনের রাজনৈতিক ও যুদ্ধাপরাধী পরিচয় যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বিলেতের সুপ্রিম কোর্ট হয় তাকে অবজ্ঞা করেছেন, অথবা বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচার বিষয়ে এই বিচারকগণ কিছুই জানেন না। অথচ তাঁরা এবিষয়ে এখন বিচার করবেন ও রায় দেবেন।

মুঈনুদ্দীন যে কবি ও সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন সেকথা সেলিনা পারভীনের একমাত্র সন্তান সুমন জাহিদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে এই চৌধুরী মুঈনুদ্দীন অন্যান্য বুদ্ধিজীবী হত্যা সহ কবি ও সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন। সেলিনা এবং মুঈনুদ্দীন দুজনেরই জন্মস্থান ফেনী শহর। মুঈনুদ্দীন সেলিনা পারভীনকে প্রথম থেকেই চিনতেন এবং সেলিনা পারভীনের অপহরণকারীদের মধ্যে মুঈনুদ্দীন ছিল একজন। এসব কথা সেলিনা পারভীনের একমাত্র সন্তান সুমন জাহিদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন।

পরবর্তী কালে যুদ্ধাপরাধী অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারকার্যের সময় চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিচারের সময় তিন নম্বর সাক্ষী ছিল সুমন জাহিদ (২)।

২০১৮ সালের ১৫ই জুন বাংলাদেশের মৌলবাদীরা সুমন কে তার মায়ের মতোই নিষ্ঠূর ভাবে হত্যা করে (৩)।

আমার সন্দেহ, এই হত্যাকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ে বিলেত থেকে এই মুঈনুদ্দীন ও দেশে বিদেশে জামাতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ। যে চাতুর্য্যের সাথে সুমন কে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়, তা মুঈনুদ্দীন ও জামাতের অন্যান্য হত্যাকারীদের মতো ধুরন্ধর নিষ্ঠূর লোকের পক্ষেই সম্ভব (৪)।

উদাহরণ

এই রায়ের ১১ নম্বর পর্যবেক্ষন এমন কৌশলে লেখা হয়েছে যা পড়লে মনে হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে স্বার্থান্বেষী পক্ষ নির্দোষ নিরীহ মুঈনুদ্দিনকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়ায়।

এই পর্যবেক্ষন পড়ে আমার মনে হয়েছে যে এই ব্রিটিশ আদালত ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যে মুঈনুদ্দীন কোনকালে আল -বদরের সদস্য ছিল না। কারণ সুপ্রিম কোর্টের এই বিচারকেরা লিখেছেন, “Shortly after the killing of the intellectuals, the claimant (অর্থাৎ মুঈনুদ্দীন) became aware of allegations that he was a member of the militia which was said to be responsible for their death”.

শুধু তাই নয়, এই ১১ নম্বর পর্যবেক্ষণের ভাষায় ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট ভয়ঙ্কর চাতুর্য্যের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস নতুন করে লিখেছে। লক্ষ্য করুন। এই পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের আদালতে প্রতিষ্ঠিত যে সত্য, সেটাকেও তারা শুধু শোনা কথা বা বানানো কথা হিসাবে ঘোষণা করেছে। এবং তা তারা করেছে শুধু তিনটি বাক্যের সাহায্যে। যে বাক্য তিনটি হলো, “said to be।”

সারা পৃথিবী জানে যে ১৯৭১ সালে জামাতে ইসলামের আল-বদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। যদিও রাও ফরমান আলি ছিল তার পরিকল্পনাকারী। কিন্তু ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে লিখছে “which was said to be responsible for their death।” অথচ এখানে সঠিক বাক্য হবে “which was responsible for their death.”

উদাহরণ

ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ১৩ নম্বর পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে বাংলাদেশের যে কোর্টের নাম ‘The International Crimes (Tribunals) Act (ICT Act 1973, সেটি কোন আন্তর্জাতিক আদালত নয়। কথাটা আইনের ভাষায় ঠিক কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের এই আইন নুরেমবার্গ আদালতের আইন অনুসরণ করে লেখে হয়েছিল। সম্ভবত সে কারণেই এভাবে তার নামকরণ হয়েছিল।

আমার মন হয়েছে যে এখানে ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি বাংলাদেশ ও তার আইন ব্যবস্থায় একটা হস্তক্ষেপ করতে চাইছেন। মনে হয়েছে বিলেতের সুপ্রিম কোর্ট চাতুর্য্যের সাথে বাংলাদেশের কোন আদালতের কি নাম হবে তা ঠিক করে দিতে চাইছেন।

অবশ্য এই পর্যবেক্ষন কোন বড় সমস্যা নয়। সমস্যা হলো এই ১৩ নম্বর পর্যবেক্ষণে বিলেতের সুপ্রিম কোর্ট লিখেছে যে ৪৭এ (47A) নামক সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই আইনে অভিযুক্তদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

এই কথাটি আমার কাছে ডাহা মিথ্যা কথা বলেই মনে হয়। আমি যতদূর জানি, ICT আইনে প্রথম থেকেই অভিযুক্ত আসামির আপিল করার অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে। কিন্তু অভিযোগকারী (অর্থাৎ সরকার পক্ষের) এই অধিকার ছিল না। পরে জনতার আন্দোলনের কারণে সরকার একটি সংশোধনীর মাধ্যমে উভয় পক্ষের অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। জামাতের ধুরন্ধর বারিস্টাররা সম্ভবত সেই বিষয়টিকে ঠিক উল্টো করে সাজিয়ে বিলেতের আদালতকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছে যে, ‘যেটিকে পৃথিবী দিন বলে জানে, সেটি আসলে রাত’ ইত্যাদি।

দিনকে রাত করার যে নীতি হিটলারের প্রচার প্রধান গোয়েরিং চালু করেছিল, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে নীতিটিকে আমেরিকার ‘New Normal’ বা নতুন সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছেন, মেধাবী জামাত এক্ষেত্রে সেই নীতির সফল প্রয়োগ করেছে বলেই আমার মনে হয়।

এই পুরো পর্য্যবেক্ষণটি এমন চাতুর্য্যের সাথে লেখা হয়েছে যে পড়লে মনে হয় বাংলাদেশের ICT আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ নেই I আপিলেরও কোন সুযোগ নেই, এবং মৃত্যু দণ্ডাদেশ নিশ্চিত।

উদাহরণ

১৪ নম্বর পর্যবেক্ষন এমনভাবে লেখা হয়েছে যে পড়লে মনে হবে ১৯৯৫ সালে বিবিসির চ্যানেল ৪ বুদ্ধিজীবী হত্যা বিষয়ে যে ডকুমেন্টারি ছবি তৈরী করে, তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে গিয়ে টাকার অভাবে মুঈনুদ্দীন জিততে পারে নি।

অথচ তার আগে থেকেই মুঈনুদ্দীন বিলেতে যে সংগঠনগুলি গড়ে তুলেছে এবং সেগুলির নেতার আসনে বসে আছে, প্রচুর টাকার মালিক না হলে যে তা অসম্ভব তা যে কোন নিরপেক্ষ মানুষ বুঝতে পারবে।

কিন্তু এরপর এই ১৪ নম্বর পর্যবেক্ষনে ক্ষুরধার চাতুর্য্যের সাথে এমন একটি বাক্য জুড়ে দেয়া হয়েছে যাতে সকলের মনে হবে জিততে না পারলেও নির্দোষ হওয়ার কারণে মুঈনুদ্দীন হারেও নাই। এই মামলাটা যেন ড্র হয়েছিল। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘The proceedings ended without either party paying the other’s costs’.

এই পর্যবেক্ষন পড়ে আমার মনে হয়েছে যে ইতিমধ্যেই মুঈনুদ্দীন ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের একজন স্নেহের পাত্রে পরিণত হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে How the East was won নামক বিবিসি চ্যানেল ফোরের এই ডকুমেন্টারিতে আমার বোন সেলিনা পারভীন বিষয়ে আমার এবং সুমনের সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সংক্ষেপে আরো উদাহরণ

এরপর ১৫ নম্বর পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে যে মুঈনুদ্দীনের কথা অনুযায়ী বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত কর্তৃপক্ষ তার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি। ষোল নম্বর পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে এরপরে যখন মুঈনুদ্দীনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়, তখন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাকে তা জানায়নি। এবং বাংলাদেশ সরকার মুঈনুদ্দীনের হস্তান্তর বা Extradition এর জন্য কোন অনুরোধ জানায়নি।

এই সকল কথা রায়ে মুঈনুদ্দীনের বক্তব্য হিসাবে এসেছে। কিন্তু এমন ভাবে লেখা হয়েছে যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা সুপ্রিম কোর্টের মত বলে মনে হয়।

বর্তমান প্রবন্ধের স্থান সীমাবদ্ধতার কারণে আমি আর কোন উদাহরণ দিচ্ছি না। কিন্তু এর পরবর্তী পর্য্যবেক্ষণগুলি আরো ভয়ঙ্কর। আমি এখানে ৪১ পৃষ্ঠার এই রায়ের শুধুমাত্র প্রথম ৫ পৃষ্ঠা আলোচনা করলাম।

ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাংলাদেশের সমস্যা।

মোট কথা ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণ গুলিতে বিচারকেরা এমন ভাবে মুঈনুদ্দিনকে উপস্থাপন করেছেন যে তা পড়লে সাধারণ পাঠকের মনে হবে ব্রিটিশ সরকার এই নৃশংস হত্যাকারী মাঈনুদ্দিনকে গভীর শ্রদ্ধা আর মর্য্যাদার চোখে দেখে ।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার আদালত (ICT) এ বিষয়ে মূল অপরাধী। কারণ এই আদালতের বিচারে অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগই রাখা হয়নি। এবং প্রকৃতপক্ষে একটি প্রহসন বিচারের মাধ্যমে নির্দোষ মানুষগুলিকে গুরুতর দন্ড দেয়া হয়েছে।

পড়ে মনে হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে শাহবাগ প্রজন্ম তাহলে সে সময় একেবারে বিনা কারণে একটা আন্দোলন করেছিল।

ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে যেখানে প্রথমেই ব্রিটিশ নাগরিক হিসাবে মুঈনুদ্দীনের গুণাবলীর ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে, সেখানে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে মুঈনুদ্দীনের আসল পরিচয় যা দুনিয়াজোড়া সবাই জানে, পাশ্চাত্য সংবাদমাধ্যমেও যা একসময় প্রচারিত হয়েছিল, বিলেতের এই আদালত এবিষয়ে কিছুই বলে নাই (৫)।

সকলেই জানেন যে ইহুদি হত্যাকান্ডকে অস্বীকার করা (Holocaust denial) কে সারা পৃথিবীতে একটি ঘৃণিত প্রবৃত্তি হিসাবে সভ্য পাশ্চাত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের গণহত্যাকে অস্বীকার করাকে এই একই পাশ্চাত্য একটি বুদ্ধিবৃত্তিক মানবিকতার চর্চা হিসাবে গণ্য করে। যে কারণে এই সব দেশ আজও বাংলাদেশের গণহত্যাকে উপহাস এবং অস্বীকার করে। উদাহরণ, শর্মিলা বসুর মতো গণহত্যা অস্বীকারকারী গবেষককে তারা মাথায় নিয়ে নাচে (৬)।

এখন প্রশ্ন হলো, যে ব্রিটিশ আদালতগুলি ঐতিহাসিকভাবেই অন্যদেশের আদালতের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি এতকাল অনুসরণ করে এসেছে, এবং ব্রিটেনের নিম্ন আদালত থেকে আপিল আদালতগুলি যেখানে মুঈনুদ্দীনের মানহানি মামলা খারিজ করে দিয়েছে, সেখানে এমন কি ঘটলো যে ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট হঠাৎ তাদের ঐতিহাসিক নীতি লঙ্ঘন করে, এবং তাদের নিজেদের সকল নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে মুঈনুদ্দীনের পক্ষে এই রায় দিলো?

এই প্রশ্নের উত্তরে আমি দুটি সম্ভাবনা দেখি।

ক। অদৃশ্য শক্তির ইচ্ছা। একটি বিদেশী শক্তি বাংলদেশে সামরিক ঘাঁটি করার জন্য বেশ ক বছর যাবৎ যে সব কৌশল অবলম্বন করেছে, এবং যে ভাবে বাংলাদেশ সরকারের ওপর একের পর এক হুমকি ও চাপ দিয়ে চলেছে, এই রায় তারই এক নতুন অস্ত্র। এ ধরণের আরো অস্ত্র এর পর আসতে পারে। আমার ধারণা পৃথিবীতে যদি শীঘ্র শক্তির ভারসাম্য ফিরে না আসে, তাহলে বাংলাদেশ আর অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বিদেশী শক্তির এই দাবি মানতে বাধ্য হবে। ভারতের সাহায্য নিয়ে হয়ত তা আটকানো যায়, কিন্তু তার জন্যেও হয়ত বৃহৎ মূল্য দিতে হবে। আমার এই ধারণাকে সমর্থন করে পৃথিবীর অতীত ইতিহাস, এবং জর্জ ফ্রিডম্যানের তত্ব (৭)।

খ। পাশ্চাত্য শক্তিগুলি তাদের সুবিধামতো জঙ্গিবাদ লালন করার নীতি গ্রহণ করেছে। এই সম্ভাবনাকে সমর্থন করে বিলেতে খুনি মুঈনুদ্দীনের আদর-যত্ন এবং এই বিচারকদের রায়ে রায়ের প্রথমেই মুঈনুদ্দীনকে এমন ভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া, যেন পড়লেই তার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা সৃষ্টি হয়।

সৌদি আরবের ওহাবী সরকার থেকে শুরু করে লাদেন অবধি জঙ্গি মৌলবাদের প্রতি পাশ্চাত্যের এই দুর্বোধ্য সমর্থনের কোন কারণ বুঝতে না পেরে এখন কেউ কেউ মনে করেন, বামপন্থীদের দমন করার জন্যই পাশ্চাত্য এভাবে দুধকলা দিয়ে কালসাপ পোষার নীতি গ্রহণ করেছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে জঙ্গিরা কোনঠাসা হয়েও থেমে নেই। হোলি আর্টিসনের হামলার আট বছর পূর্তি উপলক্ষে সমকালের শিরোনাম, “কারাবন্দী চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিদের দাওয়াত জঙ্গিদের।”

সমকাল লিখেছে যে, নব্য জেএমবির পাঁচ নেতা অন -লাইনে সক্রিয়। কারাবন্দী চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিদের দলে টানতে কৌশলে দাওয়াত দিচ্ছে তারা। তাদের সদস্যরা কারাগারের ভেতরেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আবারো হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে তারা সব জঙ্গিকে নিয়ে একই প্লাটফর্মে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে (৮)।

সর্বশেষে এ প্রসঙ্গে শহীদ কবি ও সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের একমাত্র সন্তান সুমন জাহিদের মৃত্যুর বিষয়টি আবার উল্লেখ করা প্রয়োজন।

সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী সুমন জাহিদের মৃতদেহ রেললাইনের পাশে গলা কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল মাথা। কিন্তু সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে শরীরে অন্য জখমের কোন উল্লেখ ছিলোনা। অথচ প্রচার হয় যে চলন্ত ট্রেনের নিচে মাথা দিয়ে সুমনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য যে সব কথা প্রচার হয় সেগুলি কোনটিই বাস্তবতার সাথে মেলে না।

আত্মহত্যার কারণ হিসাবে প্রচারিত হয় বিষন্নতা। অথচ সুমনের জীবনে তখন বিষন্নতার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ ছিলোনা। সুমনের আজীবন যুযুধান জীবনের সাথে আত্মহত্যা মেলানো অসম্ভব।

সুমনের মৃত্যুর ছয়মাস আগের যে ছবি পাওয়া যায়, তাতে বিষন্নতার কোন চিহ্ন নেই (ছবি সংযুক্ত)।

ICT বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে সুমন এই মুঈনুদ্দীন ও আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছিল।

তার আগে ১৯৭২ সালে আট বছর বয়েসী সুমনকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অপরাধী শনাক্ত করার জন্য গোয়েন্দা অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে সেসময় সুমন কয়েকজন অপরাধীকে শনাক্ত করেছিল। কারণ ১৯৭১ সালের ১৩ ই ডিসেম্বর দুপুরে সুমনের সামনেই আল-বদর বাহিনী তার মা সেলিনা পারভীন কে ধরে নিয়ে যায় (৯)।

তাই আমার বিশ্বাস মুঈনুদ্দীন এবং আখতারুজ্জামান সহ জামাতে ইসলামের বেতনভোগী প্রশিক্ষিত জঙ্গিরাই সুমনকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে সরকারের চোখে ধুলো দেয়ার জন্য। যে কারণে পুলিশ আত্মহত্যা মেনে নিয়ে এ বিষয়ে আর বেশি তদন্ত করেনি।

আমার বিশ্বাস সুমনকে হত্যা করা হয়েছে বিলাতের এই রায় ও বিচারের বিশাল প্রস্তুতির একটি ক্ষুদ্র অংশ হিসাবে। যেন বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের জীবিত সাক্ষী আর খুঁজে পাওয়া না যায়।

বাংলাদেশের জামাতে ইসলাম থেমে নেই। নিবন্ধন বাতিল হলেও তাদের পেট্রোডলার সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কোন কারণ নেই।

নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পরে তারা দেশে মৌলবাদ প্রচার ও প্রতিষ্ঠার যে বিশাল কর্মকান্ড শুরু করেছে তা দেশের সর্বত্র দৃশ্যমান। বিদেশেও রয়েছে তাদের বিশাল বহুমুখী কর্মকান্ড। আমার বিশ্বাস, ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের এই রায় তাদের সেই কর্মকান্ডের আর এক বিশাল সাফল্য।

উপসংহার I

দেখা যাচ্ছে মুঈনুদ্দিনের প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট একটি বিচারের ব্যবস্থা করেছে, যে বিচারের আগেই তারা বাংলাদেশের বিচার আদালতকে নানা রকম মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, এবং বাংলাদেশে ইতিহাস পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে।

আমার আশঙ্কা, এই বিচারের মাধ্যমে বাংলাদশকে একটি অপরাধী দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হবে। কেন এই চেষ্টা, সে বিষয়ে আমি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতে চেষ্টা করেছি। আমার অনুমান ভুল হলে আমি সুখী হবো। কিন্তু এ বিষয়ে কারো কোন সন্দেহ ট্যাকা উচিত নয় যে ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান রায় বাংলদেশের জন্য একটি ‘অশনি সংকেত।’

বাংলাদেশ সরকারের উচিত ব্রিটিশ আদালতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপযুক্ত একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে প্রমান করা যে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ছিল ইসলামী ছাত্র শিবির, জামাতে ইসলাম ও আলবদরের সদস্য, এবং সে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল।

এসকল তথ্য নিশ্চয় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের নথিপত্রের মধ্যেই আছে। প্রয়োজন হলে সরকারকে আরো তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিবাদ করতে হবে। প্রতিনিধি দলটিকে যথাযথ হোমওয়ার্ক করে যেতে হবে।

প্রতিনিধি দলে অন্যান্যদের মধ্যে আইন বিভাগের সচিবকে রাখতে হবে। কারণ আমলাতন্ত্রকে সাথে না রাখলে তারা সব কিছু ভণ্ডুল করে দেবে। বিচারের সময় যে সকল এডভোকেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের রাখতেই হবে। মূল তদন্তকারী দুএকজন থাকা প্রয়োজন। আইন মন্ত্রী এই দলের প্রধান হলে ভালো হয়। সেটি সম্ভব না হলে একজন মেধাবী রাজনীতিবিদ সঙ্গে থাকা প্রয়োজন।

আমার অনুমান বিলেতের আদালত এই প্রতিনিধি দলের সাথে দুর্ব্যবহার করতে পারে। সেখানে তা হজম করতে হবে। পরে এর উত্তর দেয়া যাবে। সেই উত্তর আমার জানা আছে।

কিন্তু এখন ৫ই আগষ্টের পটপরিবর্তনের পর সরকার কি করে সেটি দেখার বিষয়। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের আইনজীবীদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনে কথাবার্তা শুরু হয়েছে।

সবচাইতে ভয়ের কথা, জঙ্গি অপরাধীদের জামিনে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজীব হত্যাকারী জঙ্গি ছাড়া পেয়ে গেছে।

 

তথ্যসূত্র। 

(1). Judgment –  Mueen-Uddin(Appellant) v Secretary of State for the Home Department (Respondent) before Lord Reed, President Lord Sales, Lord Hamben, Lord Burrows, Lord Richard – Judgment Given on 20 June 2024. Heard on 1 and 2 November 2023. https://www.supremecourt.uk/cases/docs/uksc-2022-0135-judgment.pdf

Downloaded on June 30, 2024.

  1. Sumon Zahid was murdered for his testimony in a war crimes case: Wife. Golam Mujtaba Dhruba. bdnews24.com, 19 June, 2018.
  2. Death of a War Crimes Trial witness. Editorial. The Daily Star. June 19, 2018.https://www.thedailystar.net/editorial/death-war-crimes-trial-witness-1591867
  3. Relatives of Sumon Jahid believe the martyred intellectual’s son did not kill himself. bdnews24.com, December 06, 2021.
  4. “NY Times finds journalist link to intellectuals’ massacre”. The Daily Ittefaq. 13 December 2012. Archived from the original on 23 September 2015. Retrieved 5 November 2013.
  5. Dead Reckoning: Memories of the 1971 War. Wikipedia.https://en.wikipedia.org/wiki/Dead_Reckoning:_Memories_of_the_1971_Bangladesh_War

Downloaded on June 30, 2024.

  1. The next 100 years: A forecast for the 21st century. George Friedman. Black Inc Books. January 1, 2009.
  2. কারাবন্দী চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিদের ‘দাওয়াত জঙ্গিদের’। BBC News বাংলা।

https://www.bbc.com/bengali/articles/cn07m21jrldo

Downloaded on July 1, 2024

  1. শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীন স্মারক গ্রন্থ। সম্পাদনায় – সুফিয়া কামাল। প্রকাশনা – শাহেদা পারভীন। ৯০ কলাবাগান ২য় যেন, কলাবাগান, ঢাকা। ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ (৯ ই ফাল্গুন, ১৮০২)।