চলমান সংবাদ

জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের তিন উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ

-নিহতের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত সুচিকিৎসা, চিকিতসাকালীন বেতন-ভাতা এবং ক্ষতিপূরন দাবি

গত ৭ সেপ্টেম্বর এস এন কর্পোরেশন গ্রিন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে সংগঠিত ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনায় ৬ জন শ্রমিক নিহত এবং আরো ৬ গুরুতর আহত হওয়ার প্রতিবাদে আজ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি তিনটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ সাদি উর রহিম জাদিদ এর হাতে তুলে দেন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন। এই সময় জাহাজভাঙা শ্রমিক সেফটি কমিটির আহ্বায়ক এডভোকেট জহির উদ্দিন মাহমুদ, শ ম জামাল উদ্দিন, জাহাজভাঙা শ্রমিক সেফটি কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী, যুগ্ম সদস্য সচিব মোঃ ইদ্রিছ এবং ইপসার সহকারি পরিচালক মোঃ আলী শাহিন, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খান এবং বিলস-ডিটিডিএ প্রকল্পের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কেন্দ্রের সমন্বয়ক ফজলুল কবির মিন্টু  উপস্থিত ছিলেন। স্মারকলিপিতে ফোরামের পক্ষ থেকে জাহাজভাঙা সেক্টরে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, জীবনমান উন্নয়ন এবং শোভনকাজ বাস্তবায়নে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শ্রমিকদের সকল দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং তিনি জাহাজভাঙা শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে এবং জীবনমান উন্নয়নে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। তিনি স্মারকলিপি ৩টি গ্রহণ করেন এবং আজকের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবেন বলে জানান। তিনি দুর্ঘটনার ব্যাপারে গঠিত তদন্ত কমিটি যাতে শ্রমিকদের মতামত গ্রহণ করে সেই ব্যাপারে উদ্যোগ নিবেন বলেও জানান।

স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে আজ সকাল ১০টায় জেলা পরিষদ মার্কেট চট্টরে এক প্রতিবাদী মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্তের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ফজলুল কবির মিন্টুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ ম জামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ মেটাল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের সদস্য মাহাবুবুল আলম, ইপসার সহকারী পরিচালক মোঃ আলী শাহিন, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ইদ্রিস প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে গত ৭ সেপ্টেম্বর এস এন কর্পোরেশন গ্রিন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে সংগঠিত ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয় ঐদিন দুর্ঘটনার জন্য মালিক পক্ষের অবহেলার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা বলেন, উক্ত ইয়ার্ডে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার একই জাহাজে ছোট আকারে আগুন লেগেছিল। তখনই যদি মালিক পক্ষ সতর্ক হতো তাহলে ৭ সেপ্টেম্বরের দুর্ঘটনা নাও ঘটতে পারতো। তারা বলেন, দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত এবং ৬ জন আহত শ্রমিকের সাথে ১২টি পরিবার যুক্ত তাদের সবার ভরনপোষন এবং পুণর্বাসনের দায় মালিক পক্ষকে বহন করতে হবে।

সমাবেশে নিহত সকল শ্রমিকদের জন্য এককালীন ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ, বন্ধকালীন সময়ে সকল শ্রমিকদের শ্রম আইনের ১২(৭) ধারা অনুসারে ইয়ার্ড না খোলা পর্যন্ত নিয়মিত বেতন প্রদানের দাবি জানানো হয়। বক্তারা বলেন, গত ৩ জুলাই ফোর স্টার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ইঞ্জিন রুমে একই ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেছিল। উক্ত দুর্ঘটনায় ৪ জন শ্রমিক আহত হয়েছিল। সেদিনের পরে যদি এই ধরণের দুর্ঘটনার ব্যাপারে সতর্ক হতো তাহলে এস এন কর্পোরেশনের দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

সমাবেশে শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেন, একদিকে জাহাজভাঙা শ্রমিকেরা জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে অন্যদিকে তারা শ্রম আইনে বর্ণিত ন্যুনতম সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এই সেক্টরে শ্রমিকদের বঞ্চনা শুরু হয় চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই। এখানে শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া হয় ঠিকাদারের মাধ্যমে। ঐ সকল ঠিকাদাররা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত কিনা সেটাও কেউ জানে না। জাহাজভাঙা এবং শ্রমিক পরিচালনায় তাদের আদৌ কোন যোগ্যতা কিংবা দক্ষতা আছে কিনা সেটাও কারও জানা নেই। আরো উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এই সকল ঠিকাদারদের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকেরা নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক কিছুই পায় না।শ্রমিকদের সবেতন কোন ছুটি, উৎসব বোনাসও দেয়া হয় না। প্রায়শঃ দৈনিক ১২/১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। প্রতি ঘন্টা অন্তর ১৫ মিনিট করে বিরতি দেয়ার কথা বিধিমালাতে উল্লেখ থাকলেও এই বিষয়ে মালিক-শ্রমিক কেউ অবগত নেই বলেই প্রতীয়মান হয়। অর্থাৎ একটি ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্র পরিচালনায় যে বিষয়গুলোর উপর বিশেষ নজর দেয়া উচিৎ তার সবকিছুই এখানে অনুপস্থিত। শ্রমিকনেতারা শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, জীবনমান উন্নয়ন ও শোভন কাজ বাস্তবায়নে কঠোরভাবে শ্রম আইন বাস্তবায়নে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ভূমিকা আরো জোরালো করার আহ্বাণ জানান।